‘করোনার শুরু থেকেই শক্ত অবস্থানে আছে স্থানীয় সরকার’
২৮ জুন ২০২০ ০১:৩৪
ঢাকা: করোনাকালীন সংকট নিয়ে বিশেষ ওয়েবিনার ‘বিয়ন্ড দ্য প্যানডেমিক’-এর সপ্তম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের পর্বে আলোচনার বিষয় ছিল ‘জনস্বাস্থ্য ও স্থানীয় সরকার’। আলোচনায় স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা করোনা সংকটে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরি, স্বাস্থ্যবিধি পালনে উদ্বুদ্ধকরণ, জলাবদ্ধতা নিরসন, জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেন। এতে বক্তারা বলেন, করোনাভাইরাস মহামারি প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই শক্ত অবস্থানে আছে স্থানীয় সরকার। শনিবার (২৭ জুন) আলোচনাটি অনুষ্ঠিত হয়।
বরাবরের মতোই এবারের পর্বটি সরাসরি সম্প্রচারিত হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজ, অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে। একই সঙ্গে সম্প্রচারিত হয়েছে বিজয় টিভির পর্দায়, সারাবাংলা ডট নেট, সমকাল, ইত্তেফাক ও বিডি নিউজের ফেসবুক পেইজে।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদের সঞ্চালনায় এতে আলোচক হিসেবে ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান (লিটন), নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু।
https://www.facebook.com/Sarabangla.net/videos/418726855775432/
তাজুল ইসলাম এমপি বলেন, সামাজিক পরিবর্তনের জন্য এবং মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য যে প্রতিষ্ঠানটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারে সেটি স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাপনা। যদি জনপ্রতিনিধিদের তাদের নিজ দায়িত্বটি পালনের জন্য আমরা সক্ষম করে গড়ে তুলতে পারি তবে সত্যিকার অর্থে উন্নতি করা অসম্ভব কিছু নয়।
তিনি আরও বলেন, যখন করোনা বাংলাদেশকে বিপর্যস্ত করে তুললো তখন এই জনপ্রতিনিধিরাই গ্রামে গঞ্জে ঘুরে ঘুরে মানুষের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়িয়েছেন। অসহায় মানুষের মাঝে দিন রাত খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, আমি মেয়রের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে ডেঙ্গু মোকাবিলায় জনসচেতনতা শুরু করলাম, মানুষের বাসা-বাড়িতে-অফিসে গিয়ে অভিযান চালিয়েছি। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর শহরের নানা জায়গায় জীবাণুনাশক ছিটাতে শুরু করি। বাস ও বাস টার্মিনালগুলোকে জীবাণুমুক্ত করতে ব্যবস্থা নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, সিটি করপোরেশন পরিচ্ছন্নতা কর্মী যারা আছেন তাদের সুরক্ষার জন্য ৫ হাজার পিপিই দিয়েছি এবং প্রায় ৩ হাজার কর্মীর জন্য হেলথ ও লাইফ ইনস্যুরেন্স চালু করার ব্যবস্থা নিয়েছি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আমরা প্রথমেই করোনা মোকাবেলায় ত্রাণ বিতরণ করেছি। জনসচেতনতার জন্য রেকর্ডিং মাইকিং চালু করেছি। আমাদের মহানগর হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা শুরু হয়েছে, কিছুদিন আগেই সেখানে ভেন্টিলেটরসহ ৫ বেডের আইসিইউ বেড স্থাপন করেছি।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে এবং মশকের প্রজনন ক্ষেত্রগুলোকে নিধন করার জন্য সকল জলাশয়গুলোকে পরিষ্কার করছি সেই সঙ্গে তেলাপিয়া মাছ এবং হাঁস চাষ শুরু করেছি যাতে ডেঙ্গুর লাভা বংশবিস্তার করতে না পারে।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন মেয়র এ.এইচ.এম. খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, করোনার শুরুতে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়। ক্রমান্বয়ে স্বেচ্ছাসেবীসহ কর্মকর্তারা প্রতি ওয়ার্ডে সচেতনতামূলক কাজ করনে। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার পরে শহরে ইতিমধ্যে বেসরকারিভাবে একটি হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে, যা সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে এক যোগে কাজ করবে।
তিনি যোগ করেন, সামনে কোরবানি ঈদে সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা আছে কিনা বা কিভাবে ঠেকানো সম্ভব তা নিয়ে আমরা ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগ ও রাজশাহী মেডিকেল এর পরিচালকসহ সভা করেছি। কোরবানির হাটে আমরা দুইটি করে গেইট রাখবো। ঢুকতে এবং বের হতে আলাদা গেইট ব্যবহার করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন মেয়র সেলিনা হায়াত আইভি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫ সদস্যের টিম কাজ করছে। নারায়ণগঞ্জে পিসিআর ল্যাবে নিয়মিত করোনা টেস্ট হচ্ছে। মার্চের পর থেকে ২৭ টি ওয়ার্ডের ৩৬ জন কাউন্সিলরের উদ্যোগে করোনা সংক্রমণ রোধে কাজ করা হয়। নমুনা সংগ্রহ থেকে শুরু করে মৃত ব্যক্তির লাশ দাফনে কাজ করে যাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় আমরা মার্চের শুরু থেকে মানুষকে নিরাপদ রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। শহরের বিভিন্ন স্থানে আমরা হাত ধোয়া, হ্যান্ড সেনিটাইজারের ব্যবস্থা করি। কর্মহীন মানুষদেরকে প্রতি ওয়ার্ডে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি চালু করি। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে কোভিড ইউনিট চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এর আগে, বিয়ন্ড দ্যা প্যান্ডেমিকের ছয়টি পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ পর্বটি প্রচারিত হয়েছে গত ১৬ই জুন। এই পর্বে আলোচকরা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক জাতীয় বাজেট এবং মানুষের জীবনে এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন।
ফেসবুক কমেন্টের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সরাসরি তাদের প্রশ্নগুলো আলোচকদের কাছে তুলে ধরেন। করোনা পরিস্থিতিতে সরকার ও আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে তাদের ভাবনা ও প্রত্যাশা সরাসরি জানানোর সুযোগ সৃষ্টির জন্যই ‘বিয়োন্ড দ্যা প্যানডেমিক’ নামে আলোচনা অনুষ্ঠান নিয়মিত আয়োজন করা হচ্ছে।