Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনা চিকিৎসা সহায়তায় উদ্বোধন হলো প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টার


২৭ জুন ২০২০ ১৬:৫৫

ঢাকা: বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে প্লাজমা থেরাপি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, এতে আশানুরূপ ফল পাওয়া গেছে এবং জীবন রক্ষা পাচ্ছে। তাই জীবন রক্ষায় যারা প্লাজমা নিতে ও দিতে চান তাদের জন্য উদ্বোধন হয়েছে প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টার।

শনিবার (২৭ জুন) দুপুরে রাজধানীর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) গুলশান-২ নগর ভবনে প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টারের উদ্বোধন করা হয়। এই উদ্যোগের উদ্বোধন ঘোষণা করেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের (বিজেসি) উদ্যোগে উদ্বোধন হতে যাওয়া এই প্লাজমা সেন্টার স্থাপনের সঙ্গে থাকছে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী গাজী গ্রুপ। এছাড়াও এই প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টারের অংশীদার হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) , শেখ হাসিনা প্লাস্টিক সার্জারি ও বার্ন ইন্সটিটিউট, স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন বাঁধন, সবাই মিলে সবার ঢাকা, ওলয়েল ডট কম।

প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুরুতেই বক্তব্য রাখেন শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক। তিনি করোনা মোকাবিলায় ক্লিনিকাল ট্রায়ালের অংশ হিসেবে প্লাজমা থেরাপির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশে বেসরকারি উদ্যোগে নমুনা পরীক্ষার জন্য গাজী গ্রুপ যেভাবে এগিয়ে এসেছে তা প্রশংসনীয়। এই প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টারের সঙ্গেও যুক্ত আছে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ জন্য আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই গাজী গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাজী গোলাম মর্তুজা পাপ্পাকে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, প্লাজমা দিয়ে যদি করোনাভাইরাস আক্রান্ত একটি রোগীর প্রাণ বাঁচে এর থেকে মহৎ কাজ আর হতে পারে না। প্লাজমার বিষয়ে বাঁধন কাজ করবে। তবে ডাক্তারদের কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন আনতে হবে। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া আমরা কাউকে প্লাজমা দেব না।

মেয়র বলেন, আমরা কোনো ভ্রান্ত ধারণা রাখতে চাই না। প্লাজমা নিয়ে একটি অসাধু চক্র মাঠে নেমেছে। এ অসাধু চক্রকে ভাঙার জন্যই আজ এ প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টার।

যুবকদের প্লাজমা ডোনেট করার আহ্বান জানিয়ে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, আমি একসময় বেস্ট ব্লাড ডোনার হয়েছিলাম। আমি তরুণদের বলব, আপনারা প্লাজমা ডোনেট করতে এগিয়ে আসুন। একজন থেকে ৬০০ এমএল প্লাজমা নেওয়া যায়। এটা আমরা তিন জন রোগীকে দিতে পারব। যেসব যুবক করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন, তারা যেন ৬০০ মিলিগ্রাম প্লাজমা ডোনেট করেন করোনা আক্রান্ত রোগীদের।

অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্য সচিব মান্নান আবদুল মান্নান বলেন, আমি নিজে সশরীরে উপস্থিত হতে পারিনি। কারণ আপনারা জানেন আমার স্ত্রী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আমি নিজেও কোয়ারেনটাইনে আছি। আমার দুই সন্তান এখন হাসপাতালে আছে। আমি এই প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টারের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আশা করছি এর মাধ্যমে অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে।

অনুষ্ঠানে বিজেসি ট্রাস্টের সদস্য সচিব শাকিল আহমেদ বলেন, নভেল করোনাভাইরাসের এখনও কার্যকর কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা আবিষ্কার হয় নাই। তাই সরকার দেশে করোনা চিকিৎসায় ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হিসেবে ‘প্লাজমা থেরাপি’ প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। ইতিমধ্যে  দেশে প্লাজমা থেরাপি শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে এতে আশানুরূপ ফল পাওয়া গেছে এবং জীবন রক্ষা পাচ্ছে। আর তাই এখন জীবন রক্ষায় যারা প্লাজমা দিতে চান ও পেতে চান এই দুইয়ের মধ্যে যোগাযোগ সহজ করতে  উদ্বোধন হচ্ছে প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টার। একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও স্বেচ্ছাসেবীদের দ্বারা পরিচালিত কল সেন্টারের মাধ্যমে প্লাজমা চাহিদা পূরণের চেষ্টা করা হবে ।

এদিকে এই প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টারের  গাজী গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক গাজী গোলাম মর্তুজা সারাবাংলাকে বলেন, সারাবিশ্বে কোভিড-১৯ আজ বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে দেখা দিয়েছে। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সরকার যথাসাধ্য কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও সারাদিন দেশের সকল মানুষের কথা ভেবে কাজ করে যাচ্ছেন, আমাদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে নাগরিক হিসেবে আমাদেরও অনেক কর্তব্য আছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি সমাজের ও দেশের মানুষদের সাহায্য করার জন্য আমাদের সকলকে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য এখনও বিশ্বে কোনো নিশ্চিত ওষুধ নেই। সাম্প্রতিক সময়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হিসেবে প্লাজমা থেরাপির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে ভালো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই এই প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাদের প্লাজমা প্রয়োজন তারা এখানে যোগাযোগ করতে পারবেন। আবার যদি কেউ কোভিড-১৯ মুক্ত হওয়ার পর প্লাজমা দিতে চায় তবে সেটাও দেওয়া সম্ভব হবে। এভাবেই আসলে একে অপরকে সাহায্য করে আমাদের এই কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে এক সময় কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা করার জন্য পিসিআর ল্যাবের ঘাটতি ছিল। সরকার সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছে এখনও। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীকের উদ্যোগে গাজী গ্রুপের সহায়তায় দেশে প্রথমবারের মতো বেসরকারিভাবে পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয় । এভাবেই সরকারের পাশাপাশি সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টারের উদ্যোগের সঙ্গে আমরা আছি। কারণ জনগণের পাশে থেকেই আমরা গাজী গ্রুপ সবসময় কাজ করে যায়।

এবার করোনা সংকটের সময় সরকারের পাশে থেকে কাজ করে যাওয়া আমাদের দায়িত্ব। আমরা মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা মনে করি, সরকারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যেতে পারলে পরিস্থিতি উত্তরণে সহায়ক হবে- মন্তব্য করেন গাজী গোলাম মর্তুজা।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাঁধন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান রকিব আহমেদ, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের সদস্য সচিব শাকিল আহমেদ, ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মমিনুর রহমান মামুনসহ অন্যান্যরা।

উল্লেখ্য, জীবন রক্ষায় যারা প্লাজমা দিতে চান ও পেতে চান এই দুইয়ের মধ্যে যোগাযোগ সহজ করতে ডিএনসিসির নগর ভবনে প্লাজমা সাপোর্ট সেন্টারের উদ্বোধন করা হয়েছে। একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও স্বেচ্ছাসেবীদের দ্বারা পরিচালিত কল (হটলাইন নম্বর – ০১৮৪১১৮৮২৪-২৫) সেন্টারের মাধ্যমে প্লাজমা চাহিদা পূরণের চেষ্টা করা হবে।

করোনাভাইরাস গাজী গ্রুপ প্লাজমা থেরাপি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর