Sunday 13 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কম্পিউটার নেই, ইন্টারনেট নেই, তবুও প্রোগ্রামার, তবুও সেরা


৩ নভেম্বর ২০১৮ ১২:২৮
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

।।মাকসুদা আজীজ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর।।

বাংলায় সেই ‘ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার’ প্রবাদটা মোটেই খাটবে না তাদের জন্য। সেখানে নিধিরাম এক মিথ্যুক ধাপ্পাবাজ। কিন্তু সত্যিই ঢাল তলোয়ারহীন থেকেও সেরা হওয়ার একটি গল্প রয়েছে তাদের। এ গল্প তিন প্রোগ্রামারের একটি দলের। তাদের সত্যিই নেই নিজেদের কোনও কম্পিউটার, নেই নিজস্ব ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা। আছে স্রেফ অধ্যাবসায়। আর প্রবল ইচ্ছাশক্তি। তা দিয়েই তারা জয় করে নিয়েছে সেরাদের পর্যায়ে উঠে আসার গৌরব। এরা ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর পৌরসভার তিন কিশোর- আরিফ রায়হান মাহি, শাইখ আদনান অয়ন ও রাতুল হাসান রাব্বি।

বিজ্ঞাপন

মহেশপুর সরকারি পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস টেনের এই তিন ছাত্র স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক-প্রথম আলো জাতীয় আন্তঃস্কুল ও কলেজ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে উঠে এসেছে। অথচ তাদের নিজেদের কোনও কম্পিউটার নেই। নেই ইন্টারনেটের সুবিধা।

শুক্রবার (২ নভেম্বর) ঢাকায় এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় যখন বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান এই তিন কিশোরকে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন, গোল গোল চোখ করে সবাই তাকিয়ে ছিল ওদের দিকে। সত্যিই কীভাবে সম্ভব!

সত্যি বলতে কী- একদম অসম্ভবকেই সম্ভব করেছে ওরা। মাত্র একটি সিপিইউ’র সঙ্গে ২০টি মনিটর যোগ করে তৈরি করে ফেলেছে একটা ল্যাব! আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে তো পারে সকলেই, কিছু না থাকার মধ্যেও যারা এগিয়ে যেতে পারে তারাই তো আসল বিজয়ী।

কথা হয় এই তিন কিশোর প্রোগ্রামারের সঙ্গে। আরিফ রায়হান মাহি দলটির দলনেতা। শুধু তাই না একটি সিপিইউ আর ২০টি মনিটরের ল্যান কানেকশনের ল্যাবের প্রশিক্ষকও বটে সে। এলাকার অনেক মানুষকে সে নাকি এভাবেই প্রোগ্রামিং শিখিয়ে ফেলছে।

মাহি বললো, ‘আমাদের একজন শিক্ষক ছিলেন যার কাছে আমরা প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করেছিলাম। উনিই আমাদের সবার প্রথমে বিষয়টা শেখান, কিন্তু উনি পরে চাকরি নিয়ে অন্যখানে চলে যান। আমাদের এরপর একা একাই এগুলো শুরু করতে হয়।’

এভাবে একা পথ চলতে চলতেই নানা সময় খবরের কাগজ থেকে তারা জানতে পারে বিভিন্ন প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার কথা। খবরের কাগজই জানার উৎস কারণ ওদের ল্যাবে ইন্টারনেটও খুব সহজলভ্য নয়।

এর মধ্যে জানা যায় শুরু হতে যাচ্ছে জাতীয় শিশু কিশোর প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় নাম পাঠায় ওরা। কিন্তু এখন ইন্টারনেট কোথায় পাওয়া যাবে? অগ্যতা, নিজেদের জমানো টাকা থেকেই কেন হয় মেগাবাইট। কিন্তু তাতেও ভাগ্যের শিকে ছিঁড়ে না। সেই প্রতিযোগিতায় আর এগুনো হয় না ওদের।

এরপর আসে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক-প্রথমআলো জাতীয় আন্তঃস্কুল ও কলেজ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা। আবার শুরু হয় চেষ্টা। এবারও বাধ সাধে ইন্টারনেট কানেকশন। কানেকশন পেলেও অনেক স্লো ইন্টারনেন্ট আর বাফারিংয়ের ধকল। সেসব পেরিয়েও এইবার ঠিকই তারা উঠে আসে প্রতিযোগিতার মূল পর্বে। এরপর তো আর পিছনে ফেরার কিছু নাই, শুধুই সামনে এগিয়ে যাওয়া।

তাদের এই অধ্যাবসায়ে মুগ্ধ সবাই। এমনকি প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ঘোষাণ দিলেন ওদের ল্যাবকে দেয়া হবে দুইটি পূর্ণাঙ্গ কম্পিউটার। কিন্তু তাতেও ছেলেদের আফসোস কাটে না, ইন্টারনেটটা যদি তখন এত স্লো না হতো তাহলে বিভাগ পর্যায় রেজাল্টটা আরও ভালো হতো!

এই প্রতিযোগিতা খুব বেশি সময়ের ফলাফল না, মাত্র এক মাসে সারা দেশ থেকে খুঁজে আনা হয়েছে এইসব পুঁচকে প্রোগামারদের যাদের অনেকেই মাত্রই শুরু করেছে প্রোগ্রামিং। প্রতিযোগিতা তো শেষ হলো এবার কীভাবে এগুবে তারা? এই প্রশ্নের জবাব দেন, দ্বিমিক কম্পিউটারের প্রোগ্রামার তামহিদ রাফি। এই প্রতিযোগিতায় তিনি কাজ করেছে প্রশ্ন বানানোর। রাফি বললেন, আমরা যতটুকু প্রত্যাশা করেছিলাম প্রতিযোগিরা তার চেয়েও ভালো করেছে। ১০টার মধ্যে নয়টা পর্যন্ত প্রশ্নের জবাব এসেছে ওদের কাছ থেকে হয়তো সময় বেঁধে না দিলেও শেষটিরও জবাব এসে পড়ত।

প্রোগ্রামিং শেখা বা করা একটা আর্থিক বিনিয়োগেরও বিষয়, ফলে একদম প্রান্তিক অঞ্চল ও নিম্ন অর্থনৈতিক অবস্থার শিশুরা এই জ্ঞান লাভের সুযোগ নাও পেতে পারে এই সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করেই রাফি বলেন, আমরা ভাবছি কীভাবে কমদামে কম্পিউটারের ব্যবস্থা করা যায়। মাহিদের দলটাই আমাদের দেখিয়ে দিলো পথটা। শুধু তাই নয়, স্মার্ট ফোনেও প্রোগ্রামিং করে ফেলছে ওরা। বলুনতো ওদের কি কেউ রুখতে পারবে?

সারাবাংলা/এমএ/এমএম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর