Friday 06 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রযুক্তি আর রোবটিক্সে নতুনত্ব আনতে চায় শিশুরাও


১৬ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৩১ | আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৪৭
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা: দেশের শিশুরাও রোবটিক্সে যুক্ত হচ্ছে। উদ্ভাবনের চেষ্টা করছে নানা প্রযুক্তি। বলছে, বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অর্জন দেখে তারা অনুপ্রাণিত হচ্ছে। চাষাবাদ পদ্ধতি কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে উদ্ধার তৎপরতা চালাতে তারা প্রযুক্তি উদ্ভাবনের চেষ্টা করছে। বিভিন্ন প্রযুক্তিতে নতুনত্ব ও বৈচিত্রতা আনতে চেষ্টা করছে তরুণেরা। স্বল্পমূল্যে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন রোবট তৈরি করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কেউ কেউ।

আবার কেউবা বিদ্যমান প্রযুক্তিকে উন্নত করার চেষ্টা করছে। সে লক্ষ্যে তৈরি করছে নানা ডিভাইস। আর এসব ডিভাইসই প্রদর্শন করা হচ্ছে ‘ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো-২০১৯’তে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) তিনদিনব্যাপী চলমান মেলার দ্বিতীয় দিনে বিভিন্ন হল ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। আর মেলাকে ঘিরে বিআইসিসি চত্ত্বর পরিণত হয়েছে প্রযুক্তি প্রেমীদের মিলনমেলায়।

বিজ্ঞাপন

রেসিডেনশিয়াল মডেল স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাগিব ইয়াসার। এই শিশু স্মার্ট ইরিগেশন নামে একটি প্রযুক্তির কথা তুলে ধরছে। যার মাধ্যমে চাষ পদ্ধতির ক্ষেত্রে মাটির আদ্রতা, পানির পরিমাণ জানা যাবে। চাষাবাদের কোন পর্যায়ে কখন কি করতে হবে জানা যাবে তাও। রোবটিক্সে আসার কারণ জানতে চাইলে এই শিক্ষার্থী জানায়, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় রোবটিক্সে বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্জনের কথা জেনে সে অনুপ্রাণিত হয়েছে। ভবিষ্যতে সে রোবটিক্স নিয়ে কাজ করতে চায়। সাউথ পয়েন্টের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহদি আলম মাশফি সেইভিয়র জোন নামের একটি প্রযুক্তি তুলে ধরছে। এটি মূলত একটি ড্রোন। মাশফি জানায়, কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে তার এই ড্রোনের মাধ্যমে উদ্ধার তৎপরতা চালানো যাবে।

আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সালমান হাবীব রোবট বাংলা নামে একটি রোবট তৈরি করেছে। এর মাধ্যমে রেস্টুরেন্টে খাবার সরবরাহ করা যাবে। বর্তমানে রোবট রেস্টুরেন্টে যে রোবট রয়েছে, একই কনফিগারেশনের এই রোবট স্বল্প খরচে তৈরি করা হয়েছে। তার প্রত্যাশা এক লাখ টাকায় এই রোবট বাণিজ্যিকীকরণ করা যাবে।

ব্রাক বিশ্ববিদ্যলয়ের শিক্ষার্থী আবদুর রাফি ‘ব্রাকইউ ডুবুরি’ নামে একটি রোবটিক্স প্রযুক্তি মেলায় তুলে ধরছে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় এই প্রযুক্তি পুরস্কারও অর্জন করেছে। রাফি জানান, এটি পানির নিচে কাজ করে। দূষণ জনিত সমস্যা শনাক্ত করে বার্তা পাঠায়। ফলে করণীয় সম্পর্কে জানা যায়। বর্তমানে এটি ৩০ মিটার এলাকায় কাজ করতে পারে। ভবিষ্যতে তা ৫০ মিটার এলাকায় যাতে কাজ করে সে লক্ষ্যে কাজ চলেছে। মেলায় আল্পনা নামে একটি মেয়ে রোবটকেও দেখা গেছে। সে বিভিন্ন ভাষায় কথা বলতে পারে।

মেলায় প্রদর্শন করা হচ্ছে এডুকেশনাল কিট নামের একটি প্রযুক্তি। এর মাধ্যমে পোগ্রামিং শেখা যাবে। একই সঙ্গে রোবটিক্স ও ইলেকট্রনিকস এর বেসিক জ্ঞান অর্জন করা যাবে। এর ৮ টি উপাদানের মাধ্যমে শিশুরাও রোবটিক্স শিখতে পারবে।

ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইডিইবি) ‘আইডিইবি আইওটি এন্ড রোবটিক্স রিসার্স ল্যাব’র এর মাধ্যমে টিভেট নামে একটি রোবট তৈরি করা হয়েছে। রোবটটি এখন কথা বলতে পারে। ভবিষ্যতে হোম এসিস্ট্যান্ট, হাসপাতালে রোগীদের দেখাশোনা ও রেস্টুরেন্টে কাজ করতে পারবে বলে প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন এর টিম লিডার ফরিদ হোসেন। দেশের রোবটে তেমন কোন নতুনত্ব না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে এই রোবটিক্স বলেন, আমরা শুরু করেছি। দেশের রোবটিক্সকে একটি পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারবো। বর্তমানে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরাও রোবট নিয়ে কাজ করছে। এটিই আমাদের এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা।

ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির সিএসসির শিক্ষার্থী রাশেদা খাতুন ও সাব্বির আহমেদ ‘ভিহিকেল ফুয়েল এক্টিভিটিস মনিটরিং সিস্টেম’ তৈরি করেছে৷ এর মাধ্যমে একাধিক গাড়ির অবস্থান জানা ছাড়াও চালক কত টাকার তেল নিচ্ছে, কয় লিটার তেল নিচ্ছে, অন্য কাউকে গাড়িতে উঠাচ্ছে কিনা তাও জানা যাবে। রাশেদা খাতুন সারাবাংলাকে বলেন, বিদ্যমান থাকা বেশিরভাগ প্রযুক্তিতে একটি গাড়ি মনিটরিং করা যায়। আমাদের এই প্রযুক্তিতে আপনার থাকা ১০টি গাড়িও মনিটর করা যাবে। প্রযুক্তিটি এখনো উন্নত করার কাজ চলছে।

মেলায় সিটি ইউনিভার্সিটির আইওটি বেইজড ফায়ারফাইটার ডিভাইস প্রদর্শন করছে৷ এর সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থী কবিতা সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের এই প্রযুক্তি ফায়ার ডিটেক্ট করে নিজেই পানি ছিটাতে পারবে। বন্ধ করে দিতে পারবে বিদ্যুৎ সংযোগ, ভবনের ভেতরে কোন মানুষ থাকলে তাও জানিয়ে দেবে।

বিইএসটি প্রাইজ বাংলাদেশ নামের অ্যাপসের মাধ্যমে গাড়ির যন্ত্রাংশ কেনাকাটা করা যাবে, জানা যাবে দামও। ২ বছর ধরে অ্যাপসটি চলছে৷ এরই মধ্যে ভালো সাড়া পড়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটির দাবি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর মধ্যে দেড় হাজারের বেশি সরবরাহকারী অ্যাপসটির সঙ্গে সংযুক্ত। গত মাসেও ২০০ গ্রাহককে সেবা দেয়া হয়েছে৷ ডিজিটাল গার্মেন্টস নামের একটি অ্যাপসে গার্মেন্টস সামগ্রী পাইকারি দামে কেনাবেচা করা হচ্ছে। মেলায় তাদের কিছু গার্মেন্টস সামগ্রী বিক্রি করতে দেখা গেছে।

এছাড়া, ফিশ এক্সপার্ট নামের একটি প্রযুক্তির মাধ্যমে মাছ চাষের বিভিন্ন সেবা পাওয়া যাবে। ফিশারিতে মাছ চাষের ক্ষেত্রে পানিতে অক্সিজেনের সরবরাহের ভারসাম্য ঠিক রাখা যাবে। এর মাধ্যমে খাবারের তারতম্য বজায় রেখে তা সরবরাহ করা যাবে। যন্ত্রটির দাম পড়বে ৫০ হাজার টাকা।

এদিকে, মাত্র ৮ হাজার টাকায় ডেস্কটপ কম্পিউটার নিয়ে আসছে ‘এবিএল মিনি কম্পিউটার’। প্রতিষ্ঠানটি একে গরিবের কম্পিউটার বলছে। মেলায় তা প্রদর্শন করা হচ্ছে। কাঠের বক্সে ডেস্কটপটির সিপিইউ। এর র‌্যাম ২ জিবি ও হার্ডডিস্ক ৮০ জিবি। প্রতিষ্ঠানটিই এর মনিটর তৈরি করেছে। এরই মধ্যে ডেস্কটপটির উৎপাদন শুরু হয়েছে। আগামী মাস থেকে অনলাইনে অর্ডার করেই কেনা যাবে।

ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো ২০১৯ রোবটিক্স শিশু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর