Saturday 12 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বেসিসে জমেছে ভোটযুদ্ধ, ৩ প্যানেলে ২৭, স্বতন্ত্রে ২ প্রার্থী


২০ মার্চ ২০১৮ ১৫:২৭ | আপডেট: ৫ নভেম্বর ২০১৮ ২০:১৪
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিশেষ সংবাদদাতা

ঢাকা: টিম দুর্জয়, টিম হরাইজন, উইন্ড অব চেঞ্জ এমনই তিনটি নাম। ক্রিকেট কিংবা ফুটবলের কোনও লড়াইয়ের আসরে দেওয়া দলের নাম নয়। এই আদিগন্ত বিস্তৃত যাদের কাজ, পাল্টে দেওয়ার হাওয়া বইয়ে দিতে চান যারা কিংবা যাদের জয় করা দুসাধ্য বলে মাঠে নেমেছেন, তারা আসলে নেমেছেন ভোটযুদ্ধে।

ভোট হচ্ছে বেসিসে। পুরো নাম- বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস।

ভোট আগামী ৩১ মার্চ। তবে কম্পিউটার, তথা তথ্য প্রযুক্তি পাড়ায় নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে আরও আগে থেকেই। এই ভোটে ২০১৮-২০ সেশনের জন্য সংগঠনটির নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।

মোট নয় জনের বেসিস পরিষদ নির্বাচন করা হবে। এরা প্রত্যেকে পরিচালক পদে নির্বাচিত হবেন। যার মধ্য থেকে পরে একজন সভাপতি নির্বাচন করবেন নির্বাচিত পরিচালকরাই। পরিচালকদের মধ্যে ৮ জন নির্বাচিত হবেন বেসিসের সাধারণ সদস্যদের ভোটে। আর একজন পরিচালক নির্বাচিত হবেন অ্যাসোসিয়েট সদস্যদের ভোটে। সবশেষ জানা তথ্যে বেসিসে সাধারণ সদস্যদের মধ্যে ভোটার রয়েছেন ৪৭৪ জন। আর অ্যাসোসিয়েট সদস্যদের মধ্যে ভোটার রয়েছেন ২১৪ জন।

বিজ্ঞাপন

অতীতের চেয়ে এবারের নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ উদ্দীপনা যেমন ব্যাপক, তেমনি সেই নেতৃত্ব নিতে প্রার্থীতাও বেড়েছে। বেসিসের ৯ সদস্যের পর্যদে প্রাথমিক ভাবে প্রার্থী হন ৪০ জন। যার মধ্যে সাধারণ সদস্য ক্যাটাগরিতে ৩৪ জন এবং অ্যাসোসিয়েটেড হিসেবে ৬ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। নির্বাচন বোর্ড ১২ মার্চ বৈধ প্রার্থী তালিকা ও ১৭ মার্চ চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে। তবে প্রার্থীর সংখ্যার চেয়েও এবারের নির্বাচনে বড় আলোচনা হচ্ছে প্যানেল নিয়ে। বেসিসের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক তিনটি প্যানেলে নির্বাচন হচ্ছে এ বছর। রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও। ফলে চারিদিকে আলোচনাও একটু বেশি।

নির্বাচন বোর্ড যখন প্রার্থীতা যাচাই-বাছাই করছে তার আগেই ঘোষিত হয় এই তিনটি নির্বাচনী প্যানেল। গত ১০ মার্চ (শনিবার) সৈয়দ আলমাস কবিরের (বেসিসের বর্তমান সভাপতি ও মেট্রোনেট বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও) নেতৃত্বে ঘোষণা করা হয় ‘টিম হরাইজন’ নামের একটি প্যানেল। পরের দিন ১১ মার্চ (রোববার) ‘নতুন উদ্যমে, নবরূপে’ স্লোগানে ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’ নামের প্যানেল ঘোষণা করেন লুনা শামসুদ্দোহা (দোহা টেক’র যিনি প্রতিষ্ঠাতা)। আর একই দিনে ‘উন্নয়নের ধারায় ঐক্যবদ্ধ’ স্লোগানে ‘টিম বিজয়’ নামে প্যানেল ঘোষণা করেন মোস্তফা রফিকুল ইসলাম ডিউক (ফ্লোরা টেলিকম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক)। পরে গত ১৫ মার্চ টিম বিজয় নামটি পাল্টিয়ে টিম দুর্জয় ঘোষণা করেন তারা।

টিম হরাইজন প্যানেলে সৈয়দ আলমাস কবীরের সাথে রয়েছেন ইউওয়াই সিস্টেমস লিমিটেডের চেয়ারপারসন ও সিইও ফারহানা এ রহমান, বিজনেস অটোমেশন লিমিটেডের ডিরেক্টর শোয়েব আহমেদ মাসুদ, সফট পার্কের প্রধান নির্বাহী দেলোয়ার হোসেন ফারুক, জানালা বাংলাদেশ লিমিটেডের এমডি তানজিদ সিদ্দিক স্পন্দন, স্পেক্ট্রাম সফটওয়্যার অ্যান্ড কনসালটিং লিমিটেডের ম্যানেজিং পার্টনার মুশফিকুর রহমান, ক্রসওয়েস আইটি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ফাহিম তানভীর আহমেদ, শুটিং স্টার লিমিটেডের এমডি দিদারুল আলম এবং ড্রিম ৭১ বাংলাদেশ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাশাদ কবির।

‘উইন্ড অব চেঞ্জ’ প্যানেলে লুনা শামসুদ্দোহার সাথে রয়েছেন ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, ডিভাইন আইটি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ ফকরুল হাসান, এনরুট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড সিইও আবুল দাউদ খান, স্টার কম্পিউটার সিস্টেম লিমিটেডের ডিরেক্টর ও সিওও রেজওয়ানা খান, ইনোভেশন ইনফর্মেশন সিস্টেম লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ সানোয়ারুল ইসলাম, রাইট ব্রেইন সল্যুশন লিমিটেডের সিইও নূর মাহমুদ খান এবং এআর কমিউনিকেশনস প্রধান নির্বাহী এম আসিফ রহমান।

টিম দুর্জয় প্যানেলে অারও রয়েছেন- অ্যাটম এপি লিমিটেড ম্যানেজিং ডিরেক্টর এমকেএম আহমেদুল ইসলাম বাবু, এলিয়েন টেকনোলজি লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ আমিনউল্লাহ, সল্যুশন নাইন লিমিটেডের এমডি শহিবুর রহমান খান, স্টার হোস্ট আইটি লিমিটেডের চেয়ারম্যান কাজী জাহিদুল আলম, স্পিনফ স্টুডিওর প্রতিষ্ঠাতা সিইও এএসএম আসাদুজ্জামান, চালডাল লিমিটেড প্রধান অপারেশন অফিসার (সিওও) জিয়া আশরাফ, রেইজ আইটি সল্যুশন লিমিটেডের এমডি কেএএ রাশেদুল মাজিদ এবং জামান আইটির সিইও জামান খান।

বেসিসের ভোট নিয়ে এবার আলোচন বেশি হওয়ার পেছনে ঘটে যাচ্ছে নানা ঘটনা। এরই মধ্যে শীর্ষ প্রার্থীদের নিয়ে নানা কথা উঠেছে। লুনা শামসুদ্দোহাকে নিয়ে সমালোচনা সামাজিক মাধ্যম হয়ে মূলধারায় সংবাদমাধ্যমেও গড়িয়েছে। একটি প্রধানসারির সংবাদমাধ্যমে লুনা শামসুদ্দোহা বেসিস নিয়ে ষড়যন্ত্র করতে বসেছেন এখন খবর আসার পর সে নিয়ে উকিল নোটিশ পাঠানোর মতো ঘটনাও ঘটেছে। তার উত্তরও ছাপিয়েছে পত্রিকাটি। সমালোচকরা বলছেন লুনা শামসুদ্দোহা একটি ব্যাংকের চুক্তিভিত্তিক চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব পালন করছেন। বেসিস-এর সদস্যরা ব্যাংক লোন নিতে গেলে তিনি কার স্বার্থ দেখবেন- ব্যাংকের নাকি বেসিস সদস্যের সে নিয়েই প্রশ্নটি তোলা হয়েছে। তবে এতে নির্বাচনী প্রচারে কোনও সমস্যা হয়নি। লুনা শামসুদ্দোহা তার প্রচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন উইন্ড অব চেঞ্জ শিরোনামে।

আরেক শীর্ষ প্রার্থী সৈয়দ আলমাস কবীরকে নিয়ে কথা উঠেছিলো তার পক্ষে নির্বাচনই করা সম্ভব হবে না। কারণ অভিযোগ এসেছিলো তার নিজের প্রতিষ্ঠান মেট্রোনেট থেকেই। অভিযোগ গুরুতর- এই নির্বাচনে প্রার্থী হতে তিনি নিজের প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের মতামত নেননি। প্রতিষ্ঠানের অন্য কর্তা ব্যক্তিরা রীতিমতো লিখিত অভিযোগ পাঠান বেসিস ইলেকশন বোর্ড চেয়ারম্যান এসএম কামালের কাছে। পরে অবশ্য নিজ প্রতিষ্ঠান মেট্রোনেটের ঝামেলা মিটিয়ে নির্বাচনে সরব ও সক্রিয় রয়েছেন আলমাস কবীর। টিম হরাইজন নিয়ে তার প্যানেল এবারের নির্বাচনে ভালো করবে এমনটাই প্রত্যাশ করছেন।

টিম হরাইজনের প্যানেলের অপর গুরুত্বপূর্ণ ও হেভিওয়েট সদস্য হিসাবে রয়েছেন ইউওয়াই সিস্টেমস লিমিটেডের চেয়ারপারসন ও সিইও ফারহানা এ রহমান। তিনিও বর্তমান বেসিসের একজন অন্যতম পরিচালক। যার জনপ্রিয়তা গোটা আইটি পরিবারে রয়েছে। এবং নির্বাচনে তারা পুরো প্যানেলে জয়ী হবে বলেই আশা করছেন।

প্রার্থীদের মধ্যে চার জন রয়েছেন যারা অ্যাসোসিয়েট সদস্যদের পক্ষ থেকে নির্বাচন করছেন। এদের একজন হচ্ছেন ফাহিম মাসরুর। তাকেও নিয়েও রয়েছে নানা আলোচনা। ফাহিম মাসরুর বেসিসে, তথা তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবসায়ী জগতে বেশ আলোচিত নাম। যার রয়েছে দুটি প্রতিষ্ঠান বিডিজবস ও আজকের ডিল। এর মধ্যে বিডিজবস বেসিসের সাধারণ সদস্য হলেও ফাহিম মাসরুর নির্বাচন করছেন আজকের ডিলের হয়ে যেটি বেসিসের অ্যাসোসিয়েট সদস্যভূক্ত। আর নির্বাচনে তাকে ভোট দেবেন সংগঠনটির অ্যাসোসিয়েট সদস্যরাই।

এই অ্যাসোসিয়েট সদস্যদের মধ্যে আরেজনজন প্রার্থী আলোচনায় রয়েছেন তিনি হচ্ছেন- সফট পার্কের প্রধান নির্বাহী দেলোয়ার হোসেন ফারুক। তাকেও নির্বাচিত হতে হবে কেবলই অ্যাসোসিয়েট সদস্যদের ভোটে। তবে তিনি ভোটযুদ্ধে নেমেছেন টিম হরাইজোনের প্যানেলভূক্ত হয়েই। আরেকজন প্রার্থী হচ্ছেন- জামান আইটির মো. কামরুজ্জামান খান। তিনিও রয়েছেন টিম দূর্জয় প্যানেলভূক্ত।

অন্তত দুই জন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন এবারের ভোটে। যারা কোনও প্যানেলের অন্তর্ভূক্ত নন। এরা হচ্ছেন- ফাহিম মাসরুর ও এইট পিয়ার সলিউশনের মোহাম্মদ শাহজালাল।

এবারের নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেই বেছে নেওয়া হয়েছে ক্যাম্পেইনের মূল গ্রাউন্ড হিসাবে। তাতে দেখা যাচ্ছে দলের নামে আলাদা আলাদা ফেসবুক গ্রুপ খুলে প্রার্থীদের প্রোফাইল যেমন প্রকাশ করা হয়েছে তেমনি নানা প্রতিশ্রুতির কথা শুনিয়ে ভোট চাওয়াও চলছে।

তবে আরেকটি দিক উঠে এসেছে এই নির্বাচনে। তা হচ্ছে ভোট ফর রাইট ক্যান্ডিডেট ক্যাম্পেইন। এই কাম্পেইনও দৃষ্টি কেড়েছে অনেকের। যে ক্যাম্পেইন কোনও প্রার্থীর নয়, বরং উঠে এসেছে বেসিসের সদস্যদের মধ্য থেকে। তারা অনেকেই ভোট ফর রাইট ক্যান্ডিডেট লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন। আর সে সুযোগটি নিয়েছে প্রার্থীরাও। তাদেরও অনেককে ফেসবুকে একই প্ল্যাকার্ড হাতে পোস্ট দিতে দেখা গেছে। তারা বলেছেন, এমন একটি ক্যাম্পেইনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেই তাদের এই পোস্ট।

এই ক্যাম্পেইনের উদ্যোক্তারা চাইছেন- বেসিস সাংগঠনিকভাবে আরও শক্ত অবস্থান দাঁড়াক। ডিজিটাল বাংলাদেশ এর পরিপূর্ণ বিনির্মাণে বেসিসের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে বেসিসের সৎ এবং যোগ্য নেতৃত্ব নিশ্চিত করতেই এই ক্যাম্পেইন বলে জানিয়েছেন তারা।

উদ্যোক্তারা বলছেন, যাদের মধ্যে নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতার সাথে বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশি সফটওয়্যার শিল্পের বাজার তৈরি এবং দেশীয় বাজারকে আরও বড় করার ক্ষমতা রয়েছে তাদেরই আশা উচিত বেসিসের নেতৃত্বে।

সারাবাংলা/এমএম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর