Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নিও’র জ্ঞানবাহন বাউরিয়া থেকে বাজিতপুরে


১ এপ্রিল ২০১৮ ১৭:৩৭

বিশেষ সংবাদদাতা

ঢাকা: নিও ( পুরো নাম- নিও ই-নোভেশন ফাউন্ডেশন) টিমটি যখন বাজিতপুর পৌঁছায় তখন দুপুর গড়িয়েছে। কিশোরগঞ্জ জেলার এই উপজেলা সদর দফতরের সামনে গাছ-গাছালি, ফুলের বাগান সব কিছু ছাপিয়ে একটি বাহন চোখে পড়লো সবার। পোস্টার আর ব্যানারে সাজানো বলেই ব্যাটারিচালিত সাধারণ বাহনটিই সকলের দৃষ্টিতে। এর নাম জ্ঞানবাহন। মূলত এই বাহনটি দেখতেই দলটি সকালে বাজিতপুরের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ে। ঢাকা বললে ভুল হবে, কারণ- দলের সদস্যদের মধ্যে দুজন এসেছেন পৃথিবীর অপর পীঠ খোদ আমেরিকা থেকে। বাকিদের মধ্যে ৬ জন প্রতিবেশি কলকাতা থেকে। ১৬ সদস্যের টিমে বাকিরা বাংলাদেশের। ফলে এই বহুদেশীয় দলটি যে বাহনটি দেখার জন্য বাজিতপুরে পৌঁছালো তার যে একটা আন্তর্জাতিকতা আছে সে কথা বলাই বাহুল্য।

বিজ্ঞাপন

তাহলে তা বাজিতপুরে কেন? সে প্রশ্নের উত্তর নিয়েই শুধু না এমন একটি জ্ঞানবাহনের স্বপ্নও সুদুর আমেরিকা থেকে বয়ে নিয়ে এসেছেন ড. বদরুল হুদা খান। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বাংলাদেশি শিক্ষক গোটা বিশ্বে একটি পরিচিত নাম তার দুর শিক্ষণ নিয়ে দীর্ঘ কাজ, অভিজ্ঞতা ও লেখালেখির জন্য।

তার আবিষ্কৃত আধুনিক ই-শিক্ষা কার্যক্রম বিশ্বের নানা দেশেই জ্ঞানকে বিস্তৃত করে চলেছে। জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার ব্রত নিয়ে ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে তা সহজলভ্য করে তোলাতেই আত্ননিয়োজিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারি এই বাংলাদেশি অধ্যাপক। তারই ধারাবাহিকতায় বাজিতপুরে এই ই-ভ্যান কিংবা জ্ঞানবাহন।

স্লোগানটি এমন- বাউরিয়া থেকে বাজিতপুর, জীবনব্যাপী গণশিক্ষা।

কলকাতার বাউরিয়ায় এরই মধ্যে এই জ্ঞানবাহন বেশ জনপ্রিয়। সেখান থেকে এবার বাংলাদেশের বাজিতপুরে শুরু হলো এর যাত্রা। আর বদরুল খানের ভাষায়- কে জানে বাজিতপুর থেকে বুলগেরিয়ার কোনও এক শহর একদিন এই জ্ঞানবাহন চালু হবে। আর বাজিতপুর থেকে ধীরে ধীরে এমন জ্ঞানবাহন ছড়িয়ে পড়বে সারা বাংলাদেশে এমনটাই স্বপ্ন তার।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা থেকে দলটি পৌঁছানোর আগেই উপজেলা পরিষদের হলরুমে দুই শতাধিক নারী পুরুষ ছিলেন অপেক্ষায়। তাদের চোখে মুখে এমন একটি ই-ভ্যান কিংবা জ্ঞানবাহন নিয়ে আগ্রহ ছিলো। সে আগ্রহ কানায় কানায় মিটিয়ে দিলেন বদরুল হুদা খান তার খাঁটি বাংলায় দারুণ বাচনভঙ্গিতে বলা কথামালায়। সবাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনলেন একটি স্বপ্ন বাস্তব রূপ কীভাবে নেবে সে কথা। ইলেক্ট্রনিক শিক্ষা নিয়ে এতটা সহজ ও সাবলীল কথা এই শিক্ষার উদ্ভাবকের মুখেই মানায়।

জ্ঞানবাহন নামটি আকর্ষণীয়। আর জীবনব্যাপী গণশিক্ষা কথাটিতেও রয়েছে এর সুস্পষ্ট প্রকাশ।

ততক্ষণে দুপুর গড়িয়ে বিকেল। বাহনটি ঘিরে স্কুল ফেরত ছেলে-মেয়েদের ভীড়। ওদের কাছে এটি নতুন। তাদের সঙ্গেই গল্প জুড়ে দিলেন বদরুল হুদা খান। তিনি ওদের জানালেন এই বাহন তাদের কতটা কাজে লাগবে। কিভাবে এখান থেকে তারা শিক্ষা নিতে পারবে। তবে গণশিক্ষার মূল যে দিকটা তাতে এই জ্ঞানবাহন মূলত হবে বয়ষ্কদের শিক্ষার বাহন। তারা সাধারণ যানবাহনে যেভাবে যে ভাড়ায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যান সেভাবেই ব্যবহার করতে পারবেন এই জ্ঞানবাহন। তবে এতে তাদের জন্য বাড়তি পাওয়া হিসেবে থাকবে জ্ঞানলাভের সুযোগ। চাষীর জন্য চাষবাষের কথা, রোগির জন্য চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধার কথা, বেকারের জন্য কর্মসংস্থানের খবর থাকবে এই ই-ভ্যান কিংবা জ্ঞানবাহনে। ই-শিক্ষা, ই-স্বাস্থ্য, ই-কৃষি, ই-গভর্নেন্স, ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং, ই-ব্যাংকিং, ই-সুরক্ষা, ই-কমার্স এসব সেবা দেওয়া হবে এই ভ্যান থেকে। ভ্যানটিকে ঘিরে ঘুরে ঘুরে এর গায়ে লাগানো পোস্টারগুলো থেকে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন বদরুল হুদা খান।

শিশু-কিশোরদের উদ্দেশে বলছিলেন, সত্যিকারের সোনার বাংলাদেশ সৃষ্টির জন্য নিবেদিত হতে হবে বাংলাদেশের প্রতিটি নতুন মুখকে। যারা নিজেরা জ্ঞান অর্জন করবে এবং বাংলাদেশকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করতে তৈরি থাকবে সবসময়।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে সেই মানুষ হবে অবশ্যই; যেই মানুষের হাত ধরে শিক্ষার আলো যেভাবে ছড়াবে; ঠিক একইভাবে ছড়াবে উন্নয়নের আলো। আমাদের দেশ উন্নত হবে, শিক্ষিত হবে, হবে বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ।

সবার জন্যই শিক্ষা প্রয়োজন, তা যে হতে হবে বই থেকে পাওয়া শিক্ষা তেমনটা নয়, আমরা আমাদের জীবন থেকে শিক্ষা নিতে পারি। আমাদের এই ই-ভ্যান শুধু যে জ্ঞান দেবে তা নয়, এর আরোহীর কাছ থেকে জ্ঞান সংগ্রহও করবে। কোনও আরোহী যদি এমন কিছু জানেন যা অন্যের জানার সুযোগ রয়েছে, কিংবা যার মাধ্যমে অন্যরা উপকৃত হতে পারেন তাহলে তা সংগ্রহ করে রাখবে এই ই-বাহন। এভাবেই নিজেদের মাঝে লুকিয়ে থাকা জ্ঞান অনেকের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করবে ই-ভ্যান।

এভাবে সপ্তাহে পাঁচ দিন ই-ভ্যান কেবল ব্যক্তি আরোহীদের সঙ্গে জ্ঞান ভাগাভাগি করবে। আর সপ্তাহের ষষ্ঠ ও সপ্তম দিন ই-ভ্যান বসে যাবে কোনও হাটে, স্কুল মাঠে কিংবা গঞ্জে। সেখানে প্রোজেক্টরের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে গণমুখী, জীবনমুখী নানা শিক্ষার দিক। কোনও দিন হয়তো ডেকে পাঠানো হবে কোনও বিশেষজ্ঞকে, যারা তুলে ধরবে তাদের জানা কথাগুলো। যা কেবল মানুষগুলো শিক্ষিতই করবে না, সচেতন করবে, আর উদ্বুদ্ধ করবে নতুন করে বাঁচতে শেখাবে।

ই-ভ্যান এমন একটি বাহন যা স্থানীয় উদ্যোগেই করা সম্ভব। এতে প্রাথমিক পুঁজি সামান্যই। বদরুল খান মনে করেন ধীরে ধীরে সারা বাংলাদেশে এই ই-ভ্যান ছড়িয়ে পড়বে।

পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার হাওড়া এলাকার বাউরিয়ায় নিও ই-নোভেশনের সদর দফতর। সেখান থেকে এসেছিলেন ড. সঞ্জু সাহা। ড. বদরুল খানের সঙ্গে ই-লার্নিং নিয়ে দীর্ঘ কাজের অভিজ্ঞতা তার। আরও ছিলেন Neo এর পরিচালক এসকে সৈকত ও মনির মল্লিক। তারা শোনাচ্ছিলেন কীভাবে বাউরিয়ায় এমন ই-ভ্যান আজ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তার গল্প। সেখানে অনেকেরই এখন পছন্দের বাহন এই জ্ঞানবাহনগুলো।

নেতাজী সুভাষ বসু বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্সের শিক্ষক বর্ণালী রায়চৌধুরী ঢাকায় এসেছিলেন অন্য কাজে। তবে ড. বদরুল হুদার সঙ্গে ই-লানিংয়ে অতীত কাজের অভিজ্ঞতা তার। তিনিও যুক্ত হয়েছিলেন এই টিমে। বর্ণালী রায় চৌধুরী বলেন, ড. খানের যে উদ্যোগ বাউরিয়া হয়ে বাজিতপুরে এলো তা একদিন বিশ্বের দেশে দেশে দেখা যাবে তেমনটাই প্রত্যাশা তার।

নিও ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, ড. বদরুল হুদা খানের সহধর্মিনী ড. সীমা খানও এসেছিলেন এই উদ্যোগের অংশ হতে। এছাড়াও ছিলেন নিও ফাউন্ডেশনের ঢাকা অফিসের প্রধান ড. আফতাব উদ্দিনসহ তার দলের সদস্যরা।

সারাবাংলা/এমএম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর