সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে ইচ্ছুক নয় মিয়ানমার
২৭ জুন ২০১৮ ২০:০৫
।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।
ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে সম্প্রতি মিয়ানমারের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সাথে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান ও পশ্চিমা কূটনীতিবিদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ মাসের শুরুর (৮ জুন) এই আলোচনায়, রাখাইন রাজ্যের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়া সম্ভব নয় বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা। তবে, তারা পশ্চিমা কূটনৈতিকদের বিষয়টি চেপে যাবার অনুরোধ করেছেন।
রাখাইন রাজ্যের বৌদ্ধ ও মুসলিমদের জাতিগত বিরোধ মেটানো ও দীর্ঘ মেয়াদী শান্তি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে দেশটির নেত্রী অং সাং সুচি ২০১৬ সালে কফি আনানকে প্রধান করে ‘আনান কমিশন’ গঠন করেন। কমিশন ঐ অঞ্চলের সংকট সমাধানে ৮৮টি সুপারিশ প্রস্তাব করে।
রয়টার্সের বরাতে জানা যায়, বৈঠকে দেশটির সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী উইন মিয়াত আই বলেন, ঘোষিত ‘আনান কমিশন’ এর ৮৮টি সুপারিশের মধ্যে ৮টি নিয়ে তাদের সংশয় আছে। কারণ বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এর মধ্যে ১৯৮২ সালে করা ‘মিয়ানমারের জাতীয়তা’ বিষয়ক আইনটিও সংশোধনের প্রস্তাব ছিলো।
উক্ত আইন অনুসারে মিয়ানমারের তিন ধরনের জাতীয়তা প্রচলিত আছে এবং ১৩৫ টি স্বীকৃত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মধ্যেও রোহিঙ্গাদের কোন স্থান নেই। তাদেরকে মিয়ানমারে অনাহূত বাঙ্গালি বলেই বিবেচনা করা হয়। ২০১৪ সালের আদম শুমারিতে রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। ২০১৫ সালের জাতীয় নির্বাচন থেকেও তাদের দূরে রাখা হয়।
এ বছর জানুয়ারিতে, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন ব্যাপারে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে চুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের দ্বিমত রয়ে গেছে। এখন উইন মিয়াতের এই বক্তব্যের ফলে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া প্রায় সাত লক্ষ রোহিঙ্গার মিয়ানমারে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সন্দেহের মধ্যে পড়ে গেল। কারণ বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা দাবি করছেন, নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা পাওয়া ছাড়া তারা মিয়ানমার ফিরে যাবেন না।
অং সান সুচি ক্ষমতায় আসার পূর্বে বলেছিলেন, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেবার বিষয়টি বিবেচনায় রাখার প্রয়োজন। কিন্তু তিনি কথা রাখেননি। নাগরিকত্বের বদলে রোহিঙ্গাদের এক ধরনের বিশেষ পরিচয়পত্র দেয়া হয়ে থাকে। এটি দেশের অভ্যন্তরে চলাফেরায় রোহিঙ্গাদের উল্টো বিভক্তি ও প্রতিবন্ধকতায় ফেলে।
মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ে গত মার্চে এক ভাষণে বলেছিলেন, মিয়ানমারের প্রাচীন জাতিসত্তা ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের সাথে রোহিঙ্গাদের কোন মিল নেই। এদের মধ্যে বাঙ্গালিদের অনুপ্রবেশ ও নাগরিকত্ব দাবি এই দ্বন্দ্ব চরমে তুলে দিয়েছে।
কোপেনহেগেন বৈঠকে অংশ নেয়া মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাং তুন রয়টার্সকে বলেন, তারা আনান কমিশনের সুপারিশ যতটা সম্ভব বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন।
তবে পশ্চিমা একজন কূটনৈতিকের ভাষ্য, যখন কোন কিছু বাস্তবায়ন কঠিন বলা হয়। তখন তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না বলেই আমরা ধরে নিই!
সারাবাংলা/এনএইচ
** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/
আরও পড়ুন-
রোহিঙ্গা নিধনে অভিযুক্ত জেনারেলকে বরখাস্ত করলো মিয়ানমার
‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া জটিল ও দীর্ঘমেয়াদী’