গাজা উপত্যকার রাফায় একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের বাইরে ইসরায়েলি ট্যাংকের গুলিতে অন্তত ৪০ জন নিহত এবং ১৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আহতের সংখ্যা অন্তত ১৭৫ জনে পৌঁছেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন নামক একটি ইসরায়েল-সমর্থিত সংস্থার সাহায্য সংগ্রহ করতে জড়ো হয়েছিলেন গাজাবাসীরা। বিতরণস্থলের আশপাশে ইসরায়েলি সেনারা উপস্থিত থাকাকালীন গুলি চালানো হয়।
রোববারের (১ জুন) এই হামলার আগেও একই ধরনের সহিংসতায় অন্তত ছয়জন নিহত ও ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
ফাউন্ডেশনের দাবি, তাদের নিরাপত্তা রক্ষীরা কোনো গুলি চালায়নি। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা সতর্কতামূলক গুলি ছুঁড়েছিল। এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেনি।
ইসরায়েলি বাহিনী এর আগে এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, রোববার (১ জুন) সকালে তারা ১৬টি ত্রাণবাহী ট্রাক নির্বিঘ্নে বিতরণ করেছে এবং মৃত্যুর খবরকে মিথ্যা প্রচার বলে অভিহিত করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিতরণ কেন্দ্রের কাছে একটি রাউন্ডঅ্যাবাউটে এই গুলির ঘটনা ঘটে, যা ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় অবস্থিত।
ত্রাণ সংগ্রহ করতে আসা ৪০ বছর বয়সী ইব্রাহিম আবু সাউদ নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আমরা সামরিক বাহিনী থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে ছিলাম। হঠাৎ গুলি শুরু হয়। অনেকে শহিদ হয়েছে, নারীরাও ছিলেন তাদের মধ্যে।’
এই বিতরণ কেন্দ্রটি একটি নতুন ও বিতর্কিত সাহায্য ব্যবস্থার অংশ। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, হামাস যেন ত্রাণ আত্মসাৎ করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তবে এখন পর্যন্ত ইসরায়েল এই আত্মসাতের প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি এবং জাতিসংঘ জানিয়েছে, এমন কিছু ঘটেনি।
জাতিসংঘ ও অন্যান্য প্রধান ত্রাণ সংস্থাগুলো এই নতুন ব্যবস্থায় কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, এটি মানবিক নীতিমালার পরিপন্থী, কারণ এতে ইসরায়েল নির্ধারণ করছে কে ত্রাণ পাবে এবং মানুষকে ত্রাণ সংগ্রহের জন্য স্থানান্তরে বাধ্য করছে ফলে ব্যাপক বাস্তুচ্যুতির ঝুঁকি বাড়ছে।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। অভিযানটি গাজার বিস্তীর্ণ এলাকা ধ্বংস করে দিয়েছে, ৯০ শতাংশ জনগণকে বাস্তুচ্যুত করেছে এবং তাদের প্রায় পুরোপুরি আন্তর্জাতিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল করে তুলেছে।