প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি ও কর্তৃত্ববাদী আচরণের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভে নেমেছেন লাখো মানুষ। ‘নো কিংস’ নামের এই আন্দোলন শনিবার (১৮ অক্টোবর) সকাল থেকে শুরু হয়ে দ্রুতই জনস্রোতে রূপ নেয়।
রোববার (১৯ অক্টোবর) বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভটি নিউইয়র্ক থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগো, মায়ামি, বোস্টন, ডেনভার ও সিয়াটলসহ বড় শহরগুলোতে মানুষ রাস্তায় নামে। টাইমস স্কয়ারে হাজারো বিক্ষোভকারী ‘গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র নয়’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে শ্লোগান দেন।
নিউইয়র্ক পুলিশ জানায়, শুধুমাত্র শহরটিতেই অন্তত এক লাখ মানুষ অংশ নিয়েছেন। শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচিতে কোনো গ্রেফতারের খবর পাওয়া যায়নি।
বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, ট্রাম্প প্রশাসনের স্বৈরাচারী পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রকে গুরুতর হুমকির মুখে ফেলেছে। আন্দোলনের আয়োজকরা জানান, দিনশেষে দেশের ২ হাজার ৬০০টির বেশি পরিকল্পিত সমাবেশে লাখো মানুষ অংশ নেন।
বিক্ষোভগুলোর বেশিরভাগই ছিল উৎসবমুখর। অংশ নেন নানা বয়সের মানুষ— অবসরপ্রাপ্ত নাগরিক থেকে শুরু করে শিশুদের স্ট্রলারে নিয়ে আসা অভিভাবক পর্যন্ত। লস অ্যাঞ্জেলেস ও সান ডিয়েগোতে ২৫ হাজারের বেশি মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করেন।
ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভকারীরা মার্কিন ক্যাপিটলের দিকে মিছিল করে যান, হাতে জাতীয় পতাকা ও নানা রঙের বেলুন। সেখানে কার্নিভালের মতো পরিবেশের মধ্যে তারা ‘নো ওয়ানাবে ডিক্টেটরস’ স্লোগান দেন।
অংশগ্রহণকারী অ্যালিস্টন এলিয়ট বলেন, “আমরা গণতন্ত্রের প্রতি আমাদের সমর্থন জানাতে এসেছি। আমি ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে।”
টেক্সাসের হিউস্টনে ৩০ বছর বয়সী সাবেক মার্কিন মেরিন ড্যানিয়েল অ্যাবয়েট গেমেজ বলেন, “আমি ইরাক, আফগানিস্তান ও সিরিয়ায় যুদ্ধ করেছি। এখন আমার নিজের দেশেই বুঝতে পারছি না কী ঘটছে।”
অন্যদিকে, ট্রাম্প সমর্থকরা অভিযোগ করেছেন যে বামপন্থি সংগঠন ‘অ্যান্টিফা’ এই বিক্ষোভে জড়িত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে আন্দোলনটিকে ‘হেইট আমেরিকা র্যালি’ বলে মন্তব্য করেছেন।
বিবিসি জানায়, ক্ষমতায় ফেরার পর ট্রাম্প নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করে কংগ্রেস অনুমোদিত তহবিল আটকে দিয়েছেন, প্রশাসনের একাধিক দফতর ভেঙে দিয়েছেন এবং গভর্নরদের আপত্তি সত্ত্বেও কিছু অঙ্গরাজ্যে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছেন।
সমালোচকদের মতে, এসব পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য বড় হুমকি। তবে ট্রাম্প দাবি করেছেন, তার পদক্ষেপগুলো “দেশ পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজনীয়”, এবং তাকে একনায়ক বলা অযৌক্তিক।