Saturday 01 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মুক্ত বাণিজ্যের নেতৃত্ব কার হাতে— চীন না যুক্তরাষ্ট্র?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১ নভেম্বর ২০২৫ ২০:২২ | আপডেট: ১ নভেম্বর ২০২৫ ২২:০৩

ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় ক্রমবর্ধমান ভাঙন ও ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত এবারের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা (এপেক) সম্মেলন নতুন প্রশ্ন তুলেছে— মুক্ত বাণিজ্যের নেতৃত্ব এখন কার হাতে, চীন না যুক্তরাষ্ট্র?

শনিবার (১ নভেম্বর) সম্মেলনের শেষে গৃহীত যৌথ ঘোষণায় সদস্য দেশগুলো বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা ও পারস্পরিক সুবিধা ভাগাভাগির আহ্বান জানিয়েছে। তবে ঘোষণায় গতবারের মতো বহুপাক্ষিকতা বা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) উল্লেখ না থাকায় বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ওয়াশিংটনের দৃষ্টিভঙ্গিই প্রতিফলিত করছে।

এপেক সম্মেলন। ছবি: রয়টার্স

সম্মেলনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীন ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তির ঘোষণা দেন। কিন্তু সম্মেলন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার আগেই তিনি দেশ ত্যাগ করেন। এতে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি কার্যত সীমিত হয়ে পড়ে।

বিজ্ঞাপন

এর বিপরীতে চীন এই সুযোগে নিজেদের ‘মুক্ত ও উন্মুক্ত বাণিজ্যের অবিচল সমর্থক’ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঘোষণা দেন, ২০২৬ সালে শেনজেনে এপেক আয়োজন করবে চীন। সমাপনী বক্তব্যে তিনি বৈশ্বিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সহযোগিতা সংস্থা গঠনের প্রস্তাবও দেন।

এপেক সম্মেলন। ছবি: রয়টার্স

বিশ্লেষকদের মতে, চূড়ান্ত ঘোষণাপত্রে ওয়াশিংটনের প্রভাব স্পষ্ট। গত বছরের মতো এতে বহুপাক্ষিকতা বা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-র কোনো উল্লেখ নেই।

সিউলের সোগাং বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগের অধ্যাপক হিও ইউন বলেন, ‘এটি মূলত স্বীকারোক্তি যে বহুপাক্ষিকতা ও ডব্লিউটিওভিত্তিক মুক্ত বাণিজ্যব্যবস্থা পুনরুদ্ধার এখন কঠিন। বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় এক মৌলিক পরিবর্তন আসছে— এটা অস্বীকার করা যায় না।’

ট্রাম্পের আগাম প্রস্থানের পর চীন মুক্ত ও উন্মুক্ত বাণিজ্যের সমর্থক হিসেবে নিজেদের অবস্থান জোরদার করার চেষ্টা করে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঘোষণা দেন, চীন ২০২৬ সালে শেনজেনে এপেক সম্মেলন আয়োজন করবে।

সমাপনী ভাষণে শি প্রস্তাব করেন একটি বৈশ্বিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সহযোগিতা সংস্থা গঠনের। তবে এআই নিয়ন্ত্রণবিধি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

গুয়াংডং ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিসের অধ্যাপক লি জিং বলেন, ‘ট্রাম্পের অনুপস্থিতিতে চীন এখন এপেক-এ আরও সক্রিয়ভাবে যুক্ত হচ্ছে— বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোকে আশ্বস্ত করতে, যারা মার্কিন সমর্থন নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছে। তারা দেখাতে চাইছে, চীন আধিপত্য নয়, বরং যৌথ সমৃদ্ধি চায়।’

তবে বিশ্লেষকদের মতে, সদস্য দেশগুলো সতর্ক থেকেছে যেন এমন বার্তা না যায় যে যুক্তরাষ্ট্র মুক্ত বাণিজ্যকে অবমূল্যায়ন করছে বা চীন নতুন ‘বহুপাক্ষিকতার অভিভাবক’ হয়ে উঠছে।

অধ্যাপক হিও ইউন মন্তব্য করেন, ‘কোনো দেশই বিশ্বাস করে না যে এমন কোনো নতুন বাণিজ্য কাঠামো টিকে থাকবে যেখানে যুক্তরাষ্ট্র থাকবে না।’

বিশ্ব অর্থনীতির এই টানাপোড়েনে প্রশ্ন এখন একটাই— মুক্ত বাণিজ্যের রাশ শেষ পর্যন্ত কার হাতে থাকবে: চীন, না যুক্তরাষ্ট্র?

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর