ইরানের ওপর ইসরায়েলের প্রাথমিক হামলার দায় স্বীকার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মাধ্যমে তিনি পূর্ববর্তী মার্কিন অবস্থান থেকে সরে এসে স্বীকার করলেন যে, আক্রমণটি একতরফাভাবে নয়— বরং যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদনেই হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ‘ইসরায়েল প্রথমে আক্রমণ করেছিল, এবং সেটি ছিল খুবই শক্তিশালী এক হামলা। আমি এর জন্য পুরোপুরি দায়ী।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেদিন ইসরায়েল প্রথম ইরানকে আক্রমণ করে, সেটি ইসরায়েলের জন্য এক অসাধারণ দিন ছিল— কারণ সেই হামলায় অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি ক্ষতি হয়েছিল।’
এই মন্তব্যের সময় ট্রাম্প সিনেটে ফিলিবাস্টার নিয়ম বাতিলের আহ্বান জানান, যাতে রিপাবলিকানরা সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় আইন পাস করতে পারে। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘আমাদেরও ইসরায়েলের মতো সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হবে— যেমন তারা ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিল।’
যুদ্ধের সূচনা ও প্রতিক্রিয়া
গত ১৩ জুন ইসরায়েল সরাসরি উস্কানি ছাড়াই ইরানের ওপর ব্যাপক আক্রমণ চালায়। এতে ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষ জেনারেল, পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হন।
এর জবাবে ইরান ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় শত শত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। কিছুদিন পর যুক্তরাষ্ট্রও ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালিয়ে যুদ্ধে যোগ দেয়।
তবে যুদ্ধের প্রথম দিকে ওয়াশিংটন দাবি করেছিল, ইসরায়েল একতরফাভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে। তখনকার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছিলেন, ‘আজ রাতে ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে একতরফা পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা এই হামলায় জড়িত নই; আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার এই অঞ্চলে মার্কিন বাহিনীকে সুরক্ষা দেওয়া।’
পরে ইরান কাতারে অবস্থিত এক মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালে উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
সাম্প্রতিক বক্তব্যে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তিনি নিজেই ওই যুদ্ধ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যদিও তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় নতুন যুদ্ধ শুরুর বিরোধিতা করে নিজেকে “শান্তির প্রার্থী” হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন।
দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম দিকে ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা শুরু করেন এবং বারবার জানান যে, তিনি এমন এক চুক্তি চান, যার মাধ্যমে তেহরান ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন করবে।
তবে পারমাণবিক ইস্যুতে অগ্রগতি না হওয়ায় বিশ্লেষকরা বলছেন, ওয়াশিংটনের এখন ইরানের সঙ্গে আলোচনায় ফেরার তেমন তাড়াহুড়ো নেই।
ইরান সরকারও যুক্তরাষ্ট্রের সদিচ্ছা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। জুন মাসে উভয় দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনার এক দফা নির্ধারিত থাকলেও, ইসরায়েলি বিমান হামলার কয়েকদিন আগেই তা বাতিল হয়।
তেহরান এখন পর্যন্ত তাদের পারমাণবিক স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে কোনো আনুষ্ঠানিক মূল্যায়ন প্রকাশ করেনি, তবে কর্মকর্তারা দাবি করেছেন— দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচি আগের মতোই কার্যকর রয়েছে।