রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে আলোচিত খসড়া শান্তি প্রস্তাবের কাঠামো ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানের জন্য ভবিষ্যৎ চুক্তির ভিত্তি হয়ে উঠতে পারে। তবে আলোচনায় অগ্রগতি না হলে রাশিয়া লড়াই চালিয়ে যাবে বলেও তিনি সতর্ক করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) এক বক্তব্যে পুতিন বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বহুদিন ধরেই ইউরোপের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাত—ইউক্রেন যুদ্ধ। এ যুদ্ধ শেষ করতে চাই। যদিও আলাস্কায় পুতিন–ট্রাম্প শীর্ষ বৈঠকসহ যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টাগুলো এখনো শান্তির দিকে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আনতে পারেনি।’
পুতিন জানান, জেনেভায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন আলোচনার ২৮টি মূল দফাকে চারটি পৃথক অংশে ভাগ করেছে। এর একটি অনুলিপি রাশিয়াকে পাঠানো হয়েছে।
পুতিন বলেন, ‘সাধারণভাবে, আমরা একমত যে এগুলো ভবিষ্যতের চুক্তির ভিত্তি হতে পারে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমেরিকান পক্ষ আমাদের অবস্থান বিবেচনায় নিচ্ছে।’
তবে তার মতে, এখনো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘‘ইউরোপ যদি রাশিয়ার কাছ থেকে ‘আক্রমণ না করার’ নিশ্চয়তা চায়, তবে মস্কো আনুষ্ঠানিকভাবে এমন প্রতিশ্রুতি দিতে প্রস্তুত। তবে ইউরোপে রাশিয়া আক্রমণ চালাবে— এ দাবি ‘সম্পূর্ণ অর্থহীন’।’’
পুতিন একদিকে যেমন সম্ভাব্য শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে প্রস্তুতির কথা বলেছেন, অন্যদিকে সতর্ক করেছেন যে প্রয়োজন হলে রাশিয়া সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে ইউক্রেনের আরও বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করবে।
তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে ইউক্রেনের ১ লাখ ১৫ হাজার ৬০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রয়েছে। যা দেশের মোট ভূখণ্ডের প্রায় ১৯ শতাংশেরও বেশি। গত দুই বছরে রাশিয়ার দখলকৃত এলাকার পরিমাণ আরও বেড়েছে।
পুতিন বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে চাইলে কিয়েভকে প্রথমে তাদের দখলে থাকা অঞ্চল থেকে সেনা সরাতে হবে। ইউক্রেনের সেনারা যদি ওই এলাকা থেকে সরে যায়, তবে যুদ্ধ বন্ধ হবে। আর যদি না সরে, তাহলে আমরা সশস্ত্র উপায়ে তা নিশ্চিত করব।’
তিনি আরও দাবি করেন, বর্তমান ইউক্রেনীয় সরকার ‘অবৈধ’; তাই কিয়েভের সাথে সরাসরি কোনো চুক্তি আইনগতভাবে বৈধ হবে না। এজন্য যেকোনো চুক্তিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি পাওয়া প্রয়োজন এবং সেই স্বীকৃতিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার অর্জন সমর্থিত হওয়া উচিত।
পুতিন বলেন, ‘২০১৪ সালে ইউক্রেন থেকে দখল করা ক্রিমিয়া এবং পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস— উভয় অঞ্চলই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে থাকতে পারে।’
তিনি আরও জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ শিগগিরই মস্কো সফর করবেন। রাশিয়ান তেল কোম্পানিগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞাকে ‘অপ্রত্যাশিত’ বলেও মন্তব্য করেন পুতিন।
সম্প্রতি ট্রাম্প–পুতিন উপদেষ্টাদের ফোনালাপ ফাঁস হওয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হলে পুতিন বলেন, ‘উইটকফ মস্কো–সমর্থিত বা পক্ষপাতদুষ্ট— এই অভিযোগ অর্থহীন। তিনি যদি খুব অভদ্র আচরণ করতেন, আমাদের ওপর গালি দিতেন এবং তারপর সম্পর্ক গড়তে আসতেন, সেটাই বরং অবাক করার মতো হতো।
উইটকফকে তিনি ‘মার্কিন স্বার্থ রক্ষাকারী দেশপ্রেমিক’ হিসেবে উল্লেখ করেন।