যুক্তরাষ্ট্র ২০২০: ডেমোক্র্যাট প্রার্থিতার লড়াইয়ে ৬ নারী ৬ পুরুষ
৩ মার্চ ২০১৯ ১৩:৫৫
।।আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
এটা ২০১৯। এক বছর পরেই ২০২০ এর নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন। ২০১৬’য় সকল সম্ভাবনা নিয়েও শেষ মূহূর্তের ম্যাকানিজমে হেরে যান ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। পপুলার ভোটে বিপুল ব্যবধানে জিতেও ইলেক্টোরাল ভোটে পরাজয় ঘটে ডেমোক্রাটদের। কিন্তু এবার? এবারের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের জয়ের সম্ভাবনা দেশটিতে আর প্রগাঢ়ভাবেই রয়েছে। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অব্যাহত ব্যর্থতা ডেমোক্র্যাটদের সে সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলেছে। আর দ্বিতীয় দফার জন্য এবারও ট্রাম্পই হতে চলেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী। কিন্তু কে হবেন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী? ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী?
এ নিয়ে সম্ভাব্যদের তালিকা প্রকাশিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে। তাতে অন্তত ১২ জন প্রার্থীর কথা শোনা যাচ্ছে বেশ জোরেশোরে। প্রিয় পাঠক আসুন চিনে রাখা যাক ডেমোক্র্যাট দলের আর কারা থাকছেন যুক্তরাষ্ট্রে এবারের প্রেসিডেন্সিয়াল প্রার্থিতার লড়াইয়ে।
বার্নি স্যান্ডার্স
সর্বাগ্রে শোনা যাচ্ছে বার্নি স্যান্ডার্সের নাম। তিনি অনেকটা আটঘাট বেঁধেই নেমেছেন। এরই মধ্যে তার প্রাথমিক প্রচার অভিযান শুরু হয়ে গেছে। ২০১৬’য় নির্বাচনে তিনিও ছিলেন প্রার্থী। প্রথমে বিপুল সম্ভাবনা জাগিয়ে তুললেও বাক যুদ্ধে তিনি হেরে গিয়েছিলেন হিলারি ক্লিনটনের কাছে। ফলে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী তিনি হতে পারেন নি। তবে সেবারে দেশব্যাপী তৃণমূলে ডেমোক্র্যাটদের জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিলো অতুলনীয়। এবার বুঝি তার মূল্য পেতে যাচ্ছেন বার্নি। ফলে সম্মুখ সারিতে থেকেই লড়াইয়ে নামছেন ৭৭ বছর বয়সী এই অভিজ্ঞ ডেমেক্র্যাট।
কোরি বুকার
নিউজার্সির সেনেটর কোরি বুকারকে ভীষণ এনারজেটিক নেতৃত্ব হিসেবে দেখতে শুরু করেছে আমেরিকা। আর পাশাপাশি তার রয়েছে অসাধারণ ইশ্বর প্রদত্ত বাগ্মিতা। ২০২০ এ’র ডেমেক্র্যাট প্রার্থিতার লড়াইয়ে তার মতো বাগ্মি প্রার্থী তার বোধ হয় পাওয়া যাবে না। মঞ্চের পর মঞ্চে অনর্গল বক্তৃতা করে যাবেন, আর ভোটারের মন জয় করে নেবেন। তার মুখে উচ্চারিত প্রতিটি শব্দই থাকে অর্থপূর্ণ, আবেগ জাগানিয়া। এর বাইরেও তার কিছু বিশেষ সুবিধা রয়েছে। নিউ জার্সির এই সেনেটর নিউইয়র্কের খুব কাছাকাছি। ফলে তহবিল সংগ্রহে তার সুবিধা বেশি থাকবে। আধুনিক ডেমোক্র্যাটিক পার্টি গঠনে তার ভূমিকা রয়েছে। এক সময় নিউজার্সির নিউয়ার্ক শহরের মেয়র ছিলেন, সেখান থেকেই তার ভবিষ্যত যাত্রার পরিক্রমা নিয়ে ধারাণা করা হচ্ছিলো। ২০১২ সালে রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনির ভেঞ্চার ক্যাপিটাল নীতির প্রতি তার সমর্থন নিয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে বটে, কিন্তু সেসব কিছু মুখের কথায় উড়িয়ে দিতে পারবেন এই সেনেটর।
কামালা হ্যারিস
৫৪ বছর বয়সী এই অ্যাটর্নি বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়ার সেনেটর। শংকর জাতির কামালা এমন এক ডেমোক্র্যাট যিনি অতি সঙ্কটেও দৃঢ় থাকতে পারেন, এমনটাই বিশ্বাস তার অনুসারিদের। আর মনোনয়ন যুদ্ধে তার সে ভূমিকাগুলো কাজে দেবে। ক্যালিফোর্নিয়া ধনাঢ্যদের ভূমি, ফলে তার তহবিল গঠন বেশ সহজ ও সাবলীল হবে বলেই অনেকের বিশ্বাস। নারী ও জাতিগত সংখ্যালঘিষ্টের প্রতিনিধি হিসেবে ডেমোক্র্যাটিক দলের নানা জাতি, গোত্র, বর্ণের কর্মী- সমর্থকদের সুনজর তার ওপর থাকবে, এমনটাই প্রত্যাশিত। ডেমোক্র্যাটরা যখন বাম ঘরানায় ঝুঁকে পড়ছিলো ঠিক তখন উদারপন্থীদের ভোটের রেকর্ড তার ছিলো। তবে সরকারি কৌশুলি হিসেবে তার দৃঢ়তার কথাও সবার জানা। সমালোচকদের অনেকে অবশ্য ক্যালিফোর্নিয়ায় অপরাধ বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের তার কিছুটা ব্যর্থতার কথা সামনে নিয়ে আসেন, তবে সেটা হয়তো কাটিয়ে উঠতে পারবেন কামালা হ্যারিস।
এলিজাবেথ ওয়ারেন
আরেক নারী সেনেটর ম্যাসাচুসেটস থেকে মাথা তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হবেন বলে। ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষাপটে অর্থখাতকে কঠোর নিয়মতান্ত্রিকতায় নিয়ে আসার প্রচেষ্টা দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গণে তার যাত্রা শুরু। প্রগতিশীল বাম হিসেবে বেশ জনপ্রিয়ও হয়ে ওঠেন তিনি। আয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে তার তিক্ষ্ণ সমালোচনা আর মন্দার সময় ওয়াল স্ট্রিটের নির্বাহীদের কড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্যও তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন। তিনি মূলত একজন শিক্ষক। পরিণত বয়সের বেশিটা সময়ই তিনি কাটিয়ে দিয়েছেন একজন অধ্যাপক হিসেবে।
ক্রিসটেন গিলিব্র্যান্ড
নিউইয়র্কে সেনেটর ক্রিসটেন গিলিব্র্যান্ড হ্যাশট্যাগ মিটু’র অন্যতম সমর্থক হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছেন। তিনি দুই সন্তানের মা এই পরিচয়টিই তিনি সবার উপরে স্থান দিতে চান। সেই মা সেনেটর সম্প্রতি স্টেফেন কোলবার্ট শোতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থিতার আভাস দিয়েছেন। মিটু আন্দোলেনের পাশে দাঁড়ানো তার এই প্রার্থিতার লড়াইয়ে কিছুটা ফল দিলেও দিতে পারে। তবে সেনেটর অ্যাল ফ্র্যান্কেনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠার পরপরই তার পদত্যাগ চেয়ে গিলিব্র্যান্ড সেবার ডেমোক্র্যাটদের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। এমনকি বিল ক্লিনটনের মনিকা লিউনস্কি কেলেঙ্কারির সময়ও তিনি ডেমোক্র্যাটদের ক্ষেপিয়েছিলেন। বিষয়গুলো তার নারীবাদিতার প্রতি কঠোর অবস্থানের প্রকাশ হলেও দলের ভেতর প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতার ঠিক কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে তা এখনই বোঝা দায়। তবে একজন নিউ ইয়র্কার হিসেবে প্রচারাভিযানের তহবিল সংগ্রহে তার সক্ষমতা বেশিই থাকবে সেটা স্পষ্ট। এছাড়াও অপেক্ষাকৃত কম বয়সী, ক্যারিসম্যাটিক রাজনীতিক হিসেবে তার জনপ্রিয়তা বেশ তুঙ্গে। নারী ভোটারের ঢেউটা যদি কোনওভাবে ধরে ফেলতে পারেন তাহলে ক্রিসটেন গিলিব্র্যান্ডের হাত ধরেই ডেমোক্র্যাটরা হয়তো রাষ্ট্র ক্ষমতায় ফিরবে, এমনটা ধারণা অনেকেরই।
এমি ক্লোবাকার
মিনেসোটা সেনেটর ও আইনজীবী এমি ক্লোবাকার ডেমোক্র্যাট প্রার্থিতার স্বপ্ন দেখছেন। তার সে স্বপ্ন অনেকটা ত্বরান্বিত হয় ২০১৮ সালে মিনেসোটায় পুননির্বাচনের মধ্য দিয়ে।
জুলিয়ান ক্যাস্ট্রো
টেক্সাসের স্যান অ্যান্টোনিওর মেয়র জুলিয়ানের নামও ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্সিয়াল প্রার্থিতার লড়াইয়ে শোনা যাচ্ছে। ৪৪ বছরের এই মেয়র প্রেসিডেন্ট ওবামার গৃহায়ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও ছিলেন। জুলিয়ানকে ডেমোক্র্যাটদের প্রার্থী হিসেবে ভাবা শুরু খুব আগের নয়। তবে ২০১২ সালে তিনি ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে কিনোট পেপার উপস্থাপন করে নজর কাড়েন। আর সেবার ওবামা প্রশাসনের দ্বিতীয় দফায় মন্ত্রিসভায়ও স্থান করে নেন। সাবেক কংগ্রেসম্যান, ডেমোক্র্যাট হার্টথ্রব বলেই যার পরিচিত সেই বেটো ও’রার্কে লড়াইয়ে সামিল হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর টেক্সাস থেকে টেক্সাস থেকে জুলিয়ানের সম্ভাবনা কমে গেছে বটে, কিন্তু তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন কম। তৃতীয় প্রজন্মের মেক্সিকান আমেরিকান এই জুলিয়ান ক্যাস্ট্রো এমনই একটা সময়ে নেতৃত্বের সামনের সারিতে এসেছেন যখন ডেমোক্র্যাটরা যুক্তরাষ্ট্রে ল্যাটিনোদের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে আসার সিদ্ধান্তে রয়েছে।
তুলসি গ্যাবার্ড
আমেরিকান সামোয়ায় জন্ম নেওয়া এই নারীর বয়স ৩৭। কংগ্রেসে তিনি হাওয়াই দ্বীপের প্রতিনিধিত্ব করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে তিনিই প্রথম কোনও হিন্দু ধর্মাবলম্বি সদস্য। হাওয়াইয়ের এই কংগ্রেসওম্যান ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রগতিশীল মনোভাবাপন্ন। ২০১৬ সালে বার্নি স্যান্ডার্সের পক্ষে দাঁড়িয়ে যারা জোরেসোরে মাঠে নেমেছিলেন তিনি তাদের একজন। স্বাস্থ্যসেবা, ন্যুনতম মজুরি বাড়ানো ও ওপরের বিদেশ নীতিতে নাক না গলানোর পক্ষে তার জোর প্রচারাভিযান রয়েছে। এছাড়া সমকামিতা, সমলিঙ্গে বিয়ে ও গর্ভপাত বিরোধী কঠোর অবস্থান রয়েছে তার। ডেমোক্র্যাটরা যদি এবার তাদের নেতৃত্বে তরুণ, ক্যারিসম্যাটিক কাউকে দেখতে চায় মিস গ্যাবার্ড হলেও হতে পারেন তাদের পছন্দের প্রার্থী।
পিট বুটিগিগ
এছাড়াও শোনা যাচ্ছে পিট বুটিগিগের নাম। বিশোর্ধ বয়সেই তিনি সাউথ বেন্ড ইন্ডিয়ানার সিটি মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীকে কাজ করেছেন। আর চূড়ান্ত হলে বুটিগিগ হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ঘোষিত সমকামি প্রার্থী।
জন ডিলানি
ইলেক্ট্রিসিয়ানের ছেলে ডিলানি মেরিল্যান্ডের কংগ্রেসম্যান হিসেবে ছয় বছর পার করে দিয়েছেন। তবে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা তিনিই প্রথম দিয়েছেন। সেটি ছিলো ২০১৭’র জুলাই। প্রযুক্তিখাতে একজন বিনিয়োগকারী। আর তার প্রধানতম লক্ষই হয়েচ্ছ কর্মসংস্থান তৈরি করা, শিক্ষ ও অবকাঠামোর উন্নয়ন।
মেরিয়ান উইলিয়ামসন
একজন আধ্যাত্মিক গুরু ও লেখক মেরিয়ান উইলিয়ামসনের টুইটারে রয়েছে কোটি অনুসারি। যুক্তরাষ্ট্রে এই নারী লেখকের বই সবচেয়ে বেশি বিক্রিত। এছাড়া দাতব্য সেবা ও আধ্যাত্মিক দিক্ষাগুরু হিসেবে তার সুনাম রয়েছে। ওপরাহ উনফ্রে যার অন্যতম অনুসারী। এসব কারণেই ডেমোক্র্যাটদের হয়ে রাষ্ট্রপতি পদে লড়তে চান এই নারী।
অ্যান্ড্রু ইয়াং
তাইওয়ানিজ বংশোদ্ভুত আমেরিকান ব্যবসায়ী এই অ্যান্ড্রু ইয়াং। বয়স ৪৪। প্রযুক্তিখাতে বৃহৎ বিনিয়োগকারীদের একজন তিনি। তারও রয়েছে প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের প্রার্থী হওয়ার স্বপ্ন।
সারাবাংলা/এমএম
ডেমোক্র্যাট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রার্থী প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন বার্নি স্যান্ডার্স যুক্তরাষ্ট্র