বাংলাদেশে ঝুঁকির মুখে প্রায় ২ কোটি শিশু
৫ এপ্রিল ২০১৯ ১৭:১৪
ঢাকা: বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের এক কোটি ৯৪ লাখ শিশু। শুক্রবার (৫ এপ্রিল) জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ১ কোটি ৯৪ লাখ শিশুর মধ্যে ১ কোটি ২০ লাখ শিশু নদী ভাঙনের এলাকা কিংবা এর কাছাকাছি থাকে। ৪৫ লাখ শিশুর বসবাস উপকূলীয় এলাকায়, সেখানে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের হুমকিতে থাকতে হয় তাদেরকে। তাছাড়া খরার ঝুঁকিতে রয়েছে আরও ৩০ লাখ শিশু। এসব ঝুঁকির কারণে গ্রাম এলাকার মানুষেরা শহরের দিকে ধাবিত হতে বাধ্য হচ্ছে। আর সেখানে যাওয়ার পর নতুন ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হচ্ছে শিশুদেরকে।
ইউনিসেফের গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন সিমন ইনগ্রাম। তার ভাষ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের শহরগুলোতে প্রায় ৬০ লাখ জলবায়ু উদ্বাস্তু রয়েছে এবং এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘বন্যাজনিত বিপর্যয়গুলো চরম পর্যায়ের হয়ে থাকে এবং প্রায় প্রতি বছরই এ ধরনের ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশে সর্বশেষ বড় ধরনের বন্যা হয়েছিল ২০১৭ সালে। ওই বছর একের পর এক বন্যায় ৮০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
ইনগ্রাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের কারণে যে শুধু মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে তাই নয়, তারা এলাকা ছাড়া হচ্ছে। এছাড়া উপকূলীয় এলাকার স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ছে।
ব্রহ্মপুত্র নদী তীরবর্তী বন্যার বিষয়ে ইনগ্রাম বলেন, এই বন্যায় ৪৮০টি কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ৫০ হাজার নলকূপ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ওই জনগোষ্ঠীর জন্য তাদের নিরাপদ পানির চাহিদা মেটানো জরুরি।
এই প্রতিবেদনে ৫ লাখ রোহিঙ্গা শিশুদের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। যারা বাঁশ ও প্লাস্টিক ছাউনির ঘরে বসবাস করছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়ে প্রায় ৬০ লাখ লোক শহরে বসবাস শুরু করেছেন। যাদের সংখ্যা ক্রমাবগ বাড়ছে।
এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিতে অনেক শিশুকে বিপজ্জনক-ঝুকিপূর্ণ কাজ করতে হচ্ছে। অনেক কিশোরী বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছে। কেননা তাদের পরিবারের পক্ষ ওই শিশুদের ভরণ-পোষণ করাও কষ্টসাধ্য।
ইউনিসেফ সতর্ক করে বলেছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ত পানি প্রবেশের কারণে গর্ভবতী নারীরাও বড় ধরনের হুমকিতে রয়েছেন। সেখানকার বিশুদ্ধ পানির সঙ্গে লবণাক্ত পানি মিশে যাচ্ছে। এতে তারা নানা জটিলতায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবের হুমকিতে থাকা শিশুদের সুনির্দিষ্ট চাহিদার ওপর আরও গুরুত্ব দিতে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ। সূত্র: ইউএন নিউজ
সারাবাংলা/একে