Tuesday 12 Aug 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ওরা আমাকে কেন গুলি করে মারল না: সাক্ষীর জবানবন্দিতে ছেলেহারা বাবা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১২ আগস্ট ২০২৫ ১৮:০৭ | আপডেট: ১২ আগস্ট ২০২৫ ১৮:৩৬

ঢাকা: ‘১৪ বছর বয়সী ছেলেকে হারিয়ে পাগলের মতো জীবনযাপন করছি আমি ও আমার স্ত্রী। আমার ছেলে ১০ পারা কোরআনের হাফেজ ছিল। কী দোষ ছিল ওর। ছেলে হারানোর বেদনায় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি। ওরা আমাকে কেন গুলি করে মারল না।’ এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাক্ষী হিসেবে ছেলে হত্যাকারীদের ফাঁসি চেয়েছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক শহিদের বাবা।

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রাজধানীর চানখারপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য দেন শেখ জামাল হাসান। তিনি সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী শেখ মেহেদী হাসান জুনায়েদের বাবা। এ মামলার তৃতীয় সাক্ষী হিসেবে তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন দুই বিচারপতির ট্রাইব্যুনাল।

বিজ্ঞাপন

ট্রাইব্যুনালে আজ প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, প্রসিকিউটর তারেক আবদুল্লাহ, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যরা।

এদিন দুপুর আড়াইটার পর সাক্ষীর ডায়াসে ওঠেন শেখ জামাল। এরপর নিজের পরিচয় দিয়ে গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে চানখারপুলে ঘটে যাওয়া পুরো বর্ণনা তুলে ধরেন।

জবানবন্দিতে শেখ জামাল বলের, ‘আমি এখন অবসর জীবনযাপন করছি। আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলের নাম শেখ মেহেদী হাসান জুনায়েদ। বয়স ১৪ বছর। মেয়েটা বড়। ছেলেটা সপ্তম শ্রেণিতে পড়তো। চব্বিশের জুলাইয়ের শুরু থেকেই পরিবারসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম আমি। আমার স্ত্রী-সন্তানরা অনেকটা সক্রিয় ছিলেন।’

৫ আগস্ট সকাল আনুমানিক পৌনে ১১টায় নিজের বন্ধু সিয়ামকে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় আমার ছেলে জুনায়েদ। আমরা তখন বাসায় ছিলাম। আমার স্ত্রী-মেয়েও বাসা থেকে বের হয়ে যান। তারা মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মিছিলে অংশ নেন। দুপুর পৌনে ২টার দিকে আমার ফোনে কল আসে। কল ধরতেই আমার শ্যালক আসিফ বলেন- ‘জুনায়েদ গুলিবিদ্ধ হয়েছে।’ আমি তাকে খুঁজতে বাসা থেকে বের হয়ে গেন্ডারিয়া ধুপখোলা মাঠে ও আজগর আলী হাসপাতালে গিয়ে খুঁজতে থাকি।

দুপুর ২টার দিকে মোবাইল ফোনে কল করে বাসায় যেতে বলেন আমার ভাতিজি। একইসঙ্গে বলা হয় ‘জুনায়েদের লাশ বাসায় এসেছে।’ বাসায় গিয়ে দেখি আমার ভাই আব্দুর রহমানের ফ্ল্যাটে তার নিথর দেহ পড়ে আছে। আর দেখলাম তার বাম চোখে গুলি লেগে মাথার পেছন দিকে বড় গর্ত হয়ে বেরিয়ে যায়। এছাড়া সেখানে ছেলের বন্ধু সিয়ামসহ আরও কয়েকজনকে দেখি। পরে তারা তার মৃত্যুর ঘটনা খুলে বলে।

আমাকে সিয়াম জানায়, শেখ বোরহানউদ্দিন কলেজের দিক থেকে ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি ছোড়ে পুলিশ। এতে জুনায়েদ গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়ে। পরে তারা কয়েকজন ছাত্র মিলে রিকশায় করে আমার ছেলেকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যায়। তখন ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওই সময় হাসপাতালের ডাক্তারদের পীড়াপীড়িতে তারা দ্রুত আমার ছেলের লাশ বাসায় নিয়ে আসে। ডাক্তাররা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ আছে লাশ হাসপাতালে রাখা যাবে না। তাড়াতাড়ি লাশ না নিয়ে গেলে তারা বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামকে দিয়ে দেবে বলে হুমকি দেয়।’ তাদের সঙ্গে ডাক্তাররা খারাপ ব্যবহার করে।

তিনি বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, যুগ্মকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা থানার এডিসি আক্তারুল ইসলাম, মো. ইমরুল, এরশাদের নির্দেশে ৪০-৫০ জন পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি বর্ষণ করে। এর মধ্যে টার্গেট করে আমার ছেলেসহ মিছিলে গুলি করেন কনস্টেবল সুজন ও নাসিরুল। পুলিশের গুলিতে শাহরিয়ার খান আনাস, ইয়াকুব, রাকিব, মানিকসহ আরও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।’

জবানবন্দিতে এই সাক্ষী আরও বলেন, ‘আমি শুনেছি সুজন আমার ছেলেকে গুলি করেছে। আমি যখন আমার ছেলেকে দেখতে পাই তখনও তার শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল। আমার ছেলেকে গুলি করার ভিডিও আমার কাছে আছে। আমি আসামিদের বিচার চাই। তাদের ফাঁসি চাই।’

সারাবাংলা/আরএম/এমপি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জুলাই আন্দোলন নিহত শহিদ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর