Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজীবের মৃত্যুর ঘটনায় ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ


২০ জুন ২০১৯ ১৩:২১

রাজীব হাসান (ফাইল ছবি)

ঢাকা: দুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারানোর পর তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হাসানের মৃত্যুর ঘটনায় ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের রায় দিয়েছেন আদালত। রাজীবের দুর্ঘটনার পেছনে দায়ী স্বজন পরিবহন ও বিআরটিসিকে এ ক্ষতিপূরণের টাকা সমানভাগে দিতে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এ সংক্রান্ত জারি করা রুলের শুনানি শেষে গত ১৯ মে রায়ের জন্য প্রথম দিন ঠিক করা হয়েছিল। পরে রায়ের দিন ২৩ মে পিছিয়ে ২০ জুন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

রায় ঘোষণার সময় রাজীবের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। বিআরটিসির পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান।

গত বছরের ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় দুইবাসের রেষারেষিতে হাত কাটা পড়ে কলেজছাত্র রাজীব হাসানের। কয়েকদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর রাজীবের মৃত্যু হয়।

এ ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ৪ এপ্রিল রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রুলসহ রাজীবের চিকিৎসার খরচ দুই বাস মালিক বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনকে বহনের নির্দেশ দেন।

এ রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গত বছরের ১৬ এপ্রিল দিনগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজীব।

এদিকে বাস মালিকদের আপিলের পর গত বছরের ২২ মে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ ওই ঘটনায় দুই বাস কর্তৃপক্ষের মধ্যে কারা দায়ী ও ক্ষতিপূরণ নিরূপণ করতে একটি ‘স্বাধীন কমিটি’ গঠনে হাইকোর্টকে নির্দেশ দেন। পরে ওই কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে হাইকোর্ট রাজীবের দুই ভাইকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দেন।

বিজ্ঞাপন

পাশাপাশি রাজীবের দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) ও স্বজন পরিবহনের মালিককে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। এরপর হাইকোর্ট বিভাগ এ কমিটি গঠন করেন।

গত ১৫ অক্টোবর দুই বাস কর্তৃপক্ষের মধ্যে কারা দায়ী ও ক্ষতিপূরণ নিরূপণ করতে বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটির প্রতিবেদনে গণপরিবহন নিয়ে কয়েকটি সুপারিশ দেন।

কমিটির অপর সদস্য হিসেবে ছিলেন বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একজন শিক্ষক ও নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন।

ওইদিন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু বলেছিলেন, ৪৯ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে প্রাথমিকভাবে কারা দায়ী সেটা বলা হয়েছে। রয়েছে অনেক সুপারিশ।

একইসঙ্গে প্রতিবেদনে ওই দুর্ঘটনার জন্য প্রাথমিকভাবে স্বজন পরিবহনের চালকের দায় থাকার কথা বলা হয়েছে। এমনকি চিকিৎসায় অবহেলার দায় এড়াতে পারেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। চালকের হালকাযানের লাইসেন্স নিয়ে ডাবল ডেকার গাড়ি চালাতে দেওয়া বিআরটিসিরও দায় রয়েছে।

কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, দৈনিক বা ট্রিপ ভিত্তিতে চালক নিয়োগ দ্রুত নিষিদ্ধ করতে হবে, মাসিক বেতনের ভিত্তিতে কোম্পানির অধীনে চালক নিয়োগ করতে হবে। অনুমোদিত চলাচলকারী গণপরিবহনগুলোকে একটি কোম্পানির অধীনে এনে ফ্রাঞ্চাইজি সিস্টেমে রুট পারমিট দেওয়া, প্রত্যেকটি রুটে একটি নির্দিষ্ট রং কোড (কালার কোড) থাকবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রাজধানীতে গণপরিবহনের বিশেষ করে ব্যক্তি মালিকানা বা সরকারি মালিকানাধীন বিআরটিসির বাসগুলোর অবস্থা খুবই শোচনীয়।

রায়ে খুশি রাজীবের ছোট ভাই: আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে নিহত রাজিব হাসানের ছোট ভাই মেহেদী হাসান বাপ্পী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এতিমখানায় বড় হয়েছি। ছোট থাকতেই আমাদের বাবা-মা মারা যান। ভাই ছিলেন আমাদের অভিভাবক। বড় ভাই চেষ্টা করতেন আমাদের খরচ যোগাতে। তিনি নিয়মিত আমাদের পড়িয়ে যেতেন। যে সব বিষয় কঠিন মতো আমরা সেগুলো ভাইয়ের কাছ থেকে বুঝে নিতাম।’

বাপ্পী আরও বলেন, ‘আমাদের ভাই আজকে দুনিয়াতে নেই। এখন আর কেউ এসে আমাদের বুঝিয়ে দিয়ে যায় না। ভাই হারানোর বেদনা আমাদের থাকবেই। তারপরও আদালত যে রায় দিয়েছে আমরা তাতে সন্তুষ্ট। আমার ভাইয়ের মতো আর কোনো ভাইকে এভাবে চলে যেতে না হয় আমরা সেটিই চাই।’

যা বললেন আইনজীবী: রায়ের পর রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল সাংবাদিকদের বলেন, রাজিবের মৃত্যুর ঘটনায় আদালত সমানভাবে বিআরটিসি বাস ও স্বজন পরিবহনকে দায়ী করেছেন। সেই সঙ্গে আদালত বেশ কিছু নির্দেশনাও দিয়েছেন। নিহত রাজিবের দুই ভাইয়ের পড়ালেখার খরচ এবং ক্ষতিপূরণবাবদ ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। যা বিআরটিসি পরিবহন ২৫ লাখ এবং স্বজন পরিবহন ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে। আগামী দুই মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে হবে।

এ রায়ের পাশাপাশি আদালত তিনটি নির্দেশনা দিয়েছেন। গণপরিবহন যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তুলতে পারবে না। চালকেরা মাদক সেবন করে কি না তা নিশ্চিত হতে ডোপ টেস্ট করতে হবে। ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া কোনো যানবহন স্কুল-কলেজ আবাসিক এলাকায় হর্ন বাজাতে পারবে না। অবিলম্বে আদেশ বাস্তবায়ন করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এ ছাড়া আদালত আরও চারটি নির্দেশনা দিয়েছেন যা আগামী ছয় মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে বলেছেন, চালকদের চোখের পরীক্ষা এবং ডোপ টেস্ট করাতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ বাস স্টপে গাড়িগুলো বেপরোয়াভাবে চলে কি না তা নির্ণয় করতে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। ঢাকা শহরে প্রত্যেকটা রুচের জন্য ফ্রান্সিঞ্জ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সমস্ত গাড়িকে একটি কোম্পানির অধীনে এনে একেকটি রুটের জন্য ভিন্ন ভিন্ন রংয়ের সার্ভিস চালু করতে হবে। পাশাপাশি নিরাপদ সড়ক আইন বাস্তবায়ন করতে হবে।

অন্যদিকে বিআরটিসির আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বিআরটিসি থেকে নির্দেশনা পেয়েছি। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।

সারাবাংলা/এজেডকে/একে

ক্ষতিপূরণ টপ নিউজ রাজীব হাইকোর্ট হাত কাটা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

বিপদসীমার ওপরে পানি, ৪৪ জলকপাট খোলা
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:০৬

তৃতীয় দিনের খেলাও পরিত্যক্ত
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:৫৪

সিটিকে সরিয়ে শীর্ষে লিভারপুল
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:২০

পদ্মায় কমেছে পানি, থামছে না ভাঙন
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:১৯

সম্পর্কিত খবর