৩৬ কোটি টাকার মেয়াদহীন ওষুধ ধ্বংস, অভিযানে সন্তুষ্ট হাইকোর্ট
১৮ জুলাই ২০১৯ ১৬:৫৪
ঢাকা: আদালতের নির্দেশে বাজার থেকে প্রায় সাড়ে ৩৬ কোটি টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংগ্রহ করে ধ্বংস করা ও জব্দ করায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রশংসা করেছেন হাইকোর্ট। এ কাজের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আদালত বলেছেন, ‘এ কাজ প্রশংসনীয়। এটি চলামান রাখতে হবে। এ বিষয়ে জনসাধারণ, ব্যবসায়ী ও উৎপাদনকারী সবাইকে সচেতন হতে হবে।
এছাড়া ওষুধের পাতায় (স্ট্রিপ) মেয়াদ, উৎপাদনের তারিখ ও মূল্য স্পষ্ট ও বড় হরফে বাংলা এবং ইংরেজিতে লেখার ব্যবস্থা করতে রাষ্ট্রপক্ষকে বলেছেন আদালত।’
এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দাখিলের পর বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
সারাদেশে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংরক্ষণ ও বিক্রি বন্ধ এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ প্রত্যাহার/ধংস করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গত ১৮ জুন আদেশ দিয়েছিলেন এ কোর্ট।
এ আদেশ অনুসারে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করলে আদালত এ মন্তব্য করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হাইকোর্টের নির্দেশে অধিদফতর বিভিন্ন কোম্পানিকে চিঠি দেয়। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বাজার থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংগ্রহ করে তা ধ্বংস করে কোম্পানিগুলো। ধ্বংসকৃত ওষুধের দাম ৩৬ কোটি ৪১ লাখ ৯৫ হাজার ৪৯৭ টাকা। চার হাজার ৫৮৭ টি ফার্মেসি পরিদর্শন করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১৫২টি মামলা করা হয়েছে। পাশাপাশি এক কোটি চার লাখ ৮৯ হাজার দুই’শ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। অভিযানে সিলগালা করা হয়েছে পাঁচটি ফার্মেসিকে।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। ভোক্তা অধিকারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামরুজ্জামান কচি।
আদালতে কামরুজ্জামান কচি বলেন, ‘আইন অনুসারে এটি চলমান প্রক্রিয়া। আইন অনুসারে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে।’
সারাদেশের পাশাপাশি মিটফোর্ডে অভিযানের বিষয়ে আদালতের প্রশ্নে কামরুজ্জামান কচি বলেন, ‘১৭টি ফার্মেসিতে অভিযান করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮টিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পাওয়া গেছে।’
একপর্যায়ে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘এখন প্রযুক্তির যুগ। সবখানে পত্রিকা না পৌঁছলেও টিভি আছে। দুর্গম কোনো চরেও টিভি আছে। তাই ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের বিষয়ে সচেতনতার জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া য়ায় কি না দেখেন। যদিও এখানে অর্থনৈতিক বিষয় আছে। তারপরও সচেতন করেন। ফিল্ডে (মাঠ পর্যায়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের বিষয়ে অভিযান) যে রকম অ্যাকশন নিচ্ছেন তেমনি প্রচার প্রচারণাতেও করতে হবে।
আদালত আরও বলেন, ‘ওষুধ উৎপাদন, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ও মূল্যে বড় করে থাকতে হবে। যেন ভিজিবল (দৃশ্যমান) হয়। অনেকে আবার ইংরেজি বোঝে না। আমাদের ওষুধ রফতানি হয়। তাই বাংলা ও ইংরেজিতে এগুলো থাকতে হবে।’
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ মোতাবেক অভিযান চালানো হয়েছে। পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।’
তখন আদালত বলেন, ‘ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হলে তো বিষ হয়ে যায়। তাই জনসচেতনতা দরকার।’
এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এটি চলমান প্রক্রিয়া। অভিযান চলবে। যথেষ্ট কাজ করার চেষ্টা করেছি। বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য আপনাদের নির্দেশে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
তখন আদালত বলেন, ‘যথাযথ স্টেপ (পদক্ষেপ) নেওয়ায় অ্যাপ্রিশিয়েট করছি। এ অভিযান প্রশংসনীয়। এখানে যারা ব্যবসা করছেন তাদেরও সচেতন হওয়া দরকার। যারা উৎপাদন করছেন তাদেরও। কারণ ওষুধ বিদেশে রফতানি হয়। আমাদের ওষুধ নিরাপদ হলে বিদেশেও সুনাম হবে।’
এ সময় রিট আবেদনকারীর আইনজীবী বলেন, ‘আইন অনুসারে ওষুধের মেয়াদ ভিজিবল (দৃশ্যমান) হতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেননি।’
এ সময় তিনি ওরস্যালাইন, ইনজেকশন, হাঁপানি রোগের ওষুধ আদালতে উপস্থাপন করেন। ওইসব ওষুধ দেখে আদালত বলেন, ‘মেয়াদ আছে। তবে সেটি বোঝার উপায় নেই। অনেক মানুষ এটি পড়তে পারে না। এগুলো ভিজিবল হওয়া দরকার।’
বিষয়টি দেখার জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কমিটিকে অবহিত করতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নির্দেশ দিয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আদালত ২২ আগস্ট দিন ঠিক করেন।
গত ১০ মে এক অনুষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপপরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার জানান, ঢাকা শহরের ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখা হয়।
এ বিষয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে গত ১৭ জুন রিট করেন জাস্টিস ওয়াচ ফাউন্ডেশনের পক্ষে নির্বাহী পরিচালক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন।
সারাবাংলা/এজেডকে/একে