ঢাকা: আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ উল্লেখ করে সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, শিশুশ্রম রোধে পারিবারিক, সামাজিক, মিডিয়া, শিল্পপতি ও রাষ্ট্রসহ সকলকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। গণতান্ত্রিক ও মানবিক সমাজ গড়তে পুঁজিবাদী চিন্তাধারা পরিহার করে শিশুদের নিরাপদ ভবিষ্যতের দিকে নজর দিতে হবে।
শনিবার (২১ জুন) বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস ২০২৫ উপলক্ষে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) “শিশুশ্রম প্রতিরোধে করণীয়” শীর্ষক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায়।
শারমীন মুরশিদ বলেন, দারিদ্র্য, শিক্ষার অভাব, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পিতৃহীনতা এবং পরিবারের অস্বচ্ছলতা শিশুশ্রম বৃদ্ধির মূল কারণ। শিশুদের হাতে বই-খাতা থাকার কথা থাকলেও, তারা জীবিকার তাগিদে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিযুক্ত হচ্ছে। শহরে প্রায় ১৮ লাখ এবং গ্রামে ৬৭ লাখ শিশু বিভিন্ন শ্রমে নিযুক্ত, যাদের মধ্যে প্রায় ৪৭ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে।
তিনি জানান, বাংলাদেশে ২০ লাখ গৃহকর্মীর মধ্যে ৯৩ শতাংশই শিশু। এদের মধ্যে অধিকাংশই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয় এবং পর্যাপ্ত পারিশ্রমিকও পায় না। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, গৃহকর্মী শিশুদের মধ্যে ৮৬ শতাংশ মেয়ে এবং ৩০ শতাংশের বয়স ৬ থেকে ১১ বছরের মধ্যে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ এনডিসি, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব জাহেদা পারভীন এবং বাংলাদেশস্থ আইএলও অফিসের প্রতিনিধি নীরান রামজুঠান।
উপদেষ্টা বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে পথশিশুদের ডাটাবেজ তৈরির কাজ শুরু করেছে। তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী পুনর্বাসন ও কর্মমুখী স্থানে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হবে।
শারমীন এস মুরশিদ বলেন, “শিশুশ্রম বন্ধ করতে হলে আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতাই হতে হবে প্রধান হাতিয়ার। আসুন, সবাই মিলে এই কোমলমতি শিশুদের মুখে হাসি ফোটাতে একসঙ্গে কাজ করি।”
অনুষ্ঠানে বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজ ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা “শিশুশ্রমের প্রধান দায় রাষ্ট্রের নয়, সমাজের” শীর্ষক ছায়া সংসদ বিতর্কে অংশ নেয়। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ৫০ হাজার ও রানারআপ দলকে ৩০ হাজার টাকার চেক, ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করেন প্রধান অতিথি।
