ঢাকা: বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে ‘ব্যালট’ প্রকল্পে আর্থিক সহায়তায় এবার জাপান সরকার এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) একটি চুক্তি সই করেছে। চুক্তি অনুযায়ী, নির্বাচনী সহায়তা করতে সাড়ে ৫৬ কোটি টাকা দেবে জাপান সরকার।
বুধবার (২ জুলাই) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনইচি ও ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলারের উপস্থিতিতে এ চুক্তি সই অনুষ্ঠান হয়। এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন, চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ব্যুরোর মহাপরিচালক ইশিজুকি হিদে উপস্থিত ছিলেন।
চুক্তি সই শেষে, ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “ধারাবাহিকভাবে জাপানের সঙ্গে এ চুক্তি হয়েছে। ইউএনডিপি নিজস্ব অর্থায়ন বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা থেকে পায়। এ ধারাবাহিকতায় কয়েকদিন আগে অস্ট্রেলিয়া, আজ জাপান থেকে সহায়তা এ চুক্তি হয়। ইউএনডিপি এটা অর্গানাইজ করে এখানে চুক্তি সই হয়; কারণ এর প্রত্যক্ষ বেনিফিশিয়ারি নির্বাচন কমিশন। আজ জাপান ৪.৮ মিলিয়ন ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।”
নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ‘ব্যালট প্রকল্পের এ অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহার শুরু হয়েছে বলে জানান ইসি সচিব।
ইসি সচিবালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক, কারিগরি এবং কার্যক্রম পরিচালনার দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য জাপান ৬৯৫ মিলিয়ন জাপানি ইয়েন (প্রায় ৪.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) অনুদান দিয়ে সহায়তা করবে। প্রকল্পটির লক্ষ্য ভোটার ও নাগরিক শিক্ষা জোরদার করা, নারী, যুবসমাজ এবং সমাজে প্রতিনিধিত্ব কম এমন গোষ্ঠীর বৃহত্তর অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা, সেই সাথে পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়া জুড়ে স্বচ্ছতা ও সততা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া।
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন জাপানের এই সহযোগিতাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “এই চুক্তি আমাদের কার্যব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে এবং জনসাধারণের আস্থা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে নির্বাচন আয়োজনে সহায়তা করবে।”
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনইচি বলেন, “বাংলাদেশ এখন গণতান্ত্রিক পথে যাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে রয়েছে। জাপান বাংলাদেশের নিজস্ব অধিকারকে সম্মান জানায় এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে দেশটির শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক রুপান্তরের প্রচেষ্টাকে পূর্ণ সমর্থন করে। আমরা আশা করি ইউএনডিপির মাধ্যমে জাপানের এই সহায়তা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।”
ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার জাপানের উদারতা এবং দীর্ঘস্থায়ী অংশীদার হিসেবে সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “জাপানের সহায়তা বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন—যা জনগণের সত্যিকারের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটায়—এমন নির্বাচন আয়োজনে সাহায্য করার আমাদের যৌথ লক্ষ্যে নতুন শক্তি যোগ করেছে।”
ইসি সচিবালয় বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এই নির্বাচনী সহায়তা বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের বন্ধুত্ব এবং ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি, মানবিক নিরাপত্তা এবং গণতান্ত্রিক উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতির অংশ। এর মধ্য দিয়ে অবাধ, স্বচ্ছ এবং সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করতে জাপান একটি গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবে কাজ করবে।
উল্লেখ্য, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনকে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)।
এরই অংশ হিসেবে ইউএনডিপি সহায়তায় ‘বাংলাদেশ’স অ্যাডাভান্সমেন্ট ফর ক্রেডিবল, ইনক্লুসিভ অ্যান্ড ট্রান্সপারেন্ট ইলেকশন্স’ (ব্যালট) নামে প্রকল্প হাতে নেয় ইসি। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর।