ঢাকা: ১৩ জুলাই (শনিবার) ২০২৪। কোটা সংস্কারের দাবিতে সেদিনও উত্তাল ছিল দেশের শিক্ষাঙ্গন। এদিন ‘গণপদযাত্রা’ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের নামে করা মামলা তুলে নিতে পুলিশকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন তারা। পাশাপাশি তারা ৩৮ সদস্যের সমন্বয়ক কমিটি ঘোষণা করেন।
এদিন সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলনে করে ‘গণপদযাত্রা’ ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। একই দাবিতে ১৪ জুলাই রোববার ‘গণপদযাত্রা’র মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি প্রদানেরও ঘোষণা দেন তারা। পাশাপাশি জেলা শহরগুলোতে পদযাত্রাসহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘রোববারের (১৪ জুলাই) কর্মসূচি হিসেবে ক্লাস ধর্মঘটের পাশাপাশি জাতীয় সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে সরকারি সব চাকরিতে সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি পাঠানো হবে। এ ছাড়া, গণপদযাত্রা করা হবে। বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার আশপাশের সব বিশ্ববিদ্যালয় এ গণপদযাত্রায় অংশ নেবে। ৫ শতাংশ কোটা পদ্ধতি চাই। আমরা মুক্তিযোদ্ধা কোটাবিরোধী নই। নাতি-নাতনিরা পাবে, আমরা এটা চাই না। সন্তান পর্যন্ত ঠিক আছে। আমরা চাই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য কোটা।’
মামলা তুলে নেওয়ার আল্টিমেটাম
পুলিশকে মামলা তুলে নিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করে সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন করছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। শাহবাগ থানায় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সেখানে পুলিশ বলছে যে, শিক্ষার্থীরা তাদের ক্ষতি সাধন করেছে। ক্ষতি যদি হয় তাহলে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার প্রয়োজন নেই, আমাদের নামেই মামলা দিতে পারেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন ও কর্মসূচি অব্যাহত রাখব। ততদিন আমরা ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নেব না। আশা করি, আমাদের যৌক্তিক দাবিতে শিক্ষকরাও পাশে থাকবেন।’
৩৮ সদস্যের সমন্বয়ক কমিটি ঘোষণা
এছাড়াও, এদিন রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে চলমান আন্দোলন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সমন্বয়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ৩৮ সদস্যের এ কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্যাচের ২৪ জন শিক্ষার্থীকে সমন্বয়ক এবং ১৪ জনকে সহসমন্বয়ক হিসেবে রাখা হয়।
আন্দোলনকারীদের দাবি নিয়ে ওবায়দুল কাদের
এদিন রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে শিক্ষক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন করেন সাবেক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি ছাত্রদের আন্দোলনের বিরোধিতা করে বলেন, ‘কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের দাবি ও বক্তব্য সংবিধান ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির বিরোধী। একটা কুচক্রী মহল কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে।’
পালটা জবাব দেন বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং তাদের দাবি ন্যায্য হলেও সরকার ভিন্ন খাতে নিতে অপকৌশল করছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। এদিন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘এই কোটা সংস্কার আন্দোলন যারা করছে, তাদের দাবি-দাওয়া ন্যায্য। বিএনপি এর সঙ্গে আছে— এই কথা বলে আসল বিষয়টাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। এটা তাদের একটা অপপ্রয়াস-অপকৌশল এই আন্দোলনকে অন্য দিকে ধাবিত করার জন্য।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান
পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে ক্ষমতা আমরা সেটাই করব। কারণ, আন্দোলনরতরা যদি জানমালের ক্ষতি করে, সড়ক অবরোধ করে এবং মানুষের স্বাভাবিক চলাচল বিঘ্ন সৃষ্টি করে তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে যৌক্তিক কাজ সেটাই করা হবে।’
সারাদেশেও চলে আন্দোলন
১৩ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকার পাশাপাশি দেশজুড়েও আন্দোলন চলে। এদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) দিনব্যাপী গণসংযোগ করেন আন্দোলনকারীরা। শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল এবং ফেসবুকে এ গণসংযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজবাড়ী রেলস্টেশনের সামনে এদিন রেললাইনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। এ সময় ঢাকাগামী মধুমতী এক্সপ্রেস আটকে দেন তারা।