Tuesday 21 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১২ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১ লাখ ১৬ হাজার মানুষ: যাত্রী কল্যাণ সমিতি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২১ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:০২ | আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:২৪

রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস–২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: গত ১২ বছরে ৬৭ হাজার ৮৯০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৭২৬ জন নিহত এবং ১ লাখ ৬৫ হাজার ২১ জন আহত হয়েছেন বলে তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটি মনে করছে, দুর্নীতি ও সরকারের ভুল নীতি সড়কে গণহত্যার মূল দায়ী।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস–২০২৫ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ সব তথ্য জানান।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, লাইসেন্সবিহীন ও প্রশিক্ষণহীন চালকের হাতে যানবাহন তুলে দেওয়া, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের চলাচল, অপ্রাপ্তবয়স্ক চালক, সড়কে ত্রুটি, চালকের মাদক গ্রহণ, বেপরোয়া গতি এবং অযোগ্য চালকের হাতে লাইসেন্স প্রদানের কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে।

বিজ্ঞাপন

মোজাম্মেল হক চৌধুরী আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার আগে দেশে নিরাপদ ও স্বাভাবিক নৌপথ এবং রেলপথ মানুষের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিল। ৮০ শতাংশ মানুষ নৌ ও রেলে যাতায়াত করতেন, আর সড়কে মাত্র ২০ শতাংশ। তখন সড়কে দুর্ঘটনা তুলনামূলকভাবে সীমিত ছিল। স্বাধীনতার পর দাতা সংস্থার প্রেসক্রিপসনে একের পর এক সড়ক উন্নয়ন ও সংস্কারের নামে প্রচুর লুটপাট হয়েছে। একাধিক নতুন সড়ক নির্মাণ ও বহুমাত্রিক পরিবহন ব্যবস্থার অভাবজনিত কারণে সড়কে মানুষের যাতায়াত ৮০ শতাংশে বেড়ে গেছে, ফলে দুর্ঘটনাও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যাত্রী কল্যাণ সমিতি গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এই তথ্য পেয়েছে, তবে দেশের হাসপাতালগুলোর চিত্র বলছে, হতাহতের সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বেশি। একই সময়ে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬৭ হাজার এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে ৪৫ হাজার। তুলনায় বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা অনেক বেশি। বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের কার্যক্রমও এই ধারাবাহিক সড়কহত্যা প্রতিরোধে প্রশ্নবিদ্ধ।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী উল্লেখ করেন, দেশের ইতিহাসে সড়ক মন্ত্রণালয়ের এক দশকেরও বেশি সময়ের মন্ত্রী হিসেবে ওবায়দুল কাদের পরিবহণ খাতে বিশৃঙ্খলা থামাতে এবং কৌশলগত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর সরকার পরিবর্তিত হলেও, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ ও ট্রাফিক বিভাগের নীতি ও কৌশল অপরিবর্তিত থাকায় দুর্ঘটনার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

তিনি আরও বলেন, যদি সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট নিয়ন্ত্রণের প্রতিষ্ঠানগুলোর সচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না করা হয়, তবে এই খাতে দৃশ্যমান অগ্রগতি সম্ভব হবে না। বর্তমান অন্তবর্তী সরকার উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থা আনতে ব্যর্থ হয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা নিবন্ধনের মাধ্যমে রাস্তায় নামানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এতে অভিজ্ঞতার অভাব ও নানাবিধ গলদ থাকায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে যানজট আরও বৃদ্ধি পাবে। তিনি পরামর্শ দেন, সরকারি উদ্যোগে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ প্রতিটি বিভাগীয় শহরে ম্যাস ট্রানজিট ব্যবস্থা ও ডিজিটাল লেনদেনের ভিত্তিতে কমপক্ষে দুটি বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট লেন চালু করা হোক।

সংগঠনটি নিরাপদ সড়ক দিবসের প্রাক্কালে সড়ক দুর্ঘটনায় দেশের মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষার জন্য ১২ দফা সুপারিশও প্রকাশ করেছে।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর