Friday 28 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদে ভর্তুকি দরকার: ফরিদা আখতার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৮ নভেম্বর ২০২৫ ১৬:১২

বিএজেএফ আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফরিদা আখতার।

ঢাকা: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, মানুষ বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য খায়, কিন্তু খাদ্যই এখন রোগের উৎস হয়ে দাঁড়াচ্ছে—এটি অস্বাভাবিক ও অগ্রহণযোগ্য। পুষ্টি সংকট নিরসনে সঠিক তথ্য বিশ্লেষণের প্রয়োজন থাকলেও গড় হিসাবের ওপর নির্ভরতা ‘বিপজ্জনক প্রবণতা’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। তার মতে, কৃষিতে ভর্তুকির প্রচলন থাকলেও প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য খাতে ভর্তুকি নেই—এ খাতেও ভর্তুকি প্রয়োজন।

শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম (বিএজেএফ) আয়োজিত চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘কৃষি ও খাদ্যে রাজনৈতিক অঙ্গীকার’-এর দ্বিতীয় দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

দ্বিতীয় দিনের আলোচনার বিষয় ছিল ‘জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ: পুষ্টি নিরাপত্তায় প্রাণি ও মৎস্য খাত’। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিএজেএফ সভাপতি সাহানোয়ার সাইদ শাহীন এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক আবু খালিদ।

ফরিদা আখতার বলেন, ‘দেশীয় জাতের প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশীয় জাত অনেক ভালো, কিন্তু বড় সাইজ পাওয়ার জন্য সংকরায়ণ করতে গিয়ে দেশীয় জাত বিলুপ্তির ঝুঁকিতে পড়ছে— এটা ঠেকাতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুষ্টিমানের দিকে নজর দিতে হবে। শুধু পেট ভরলেই হবে না। এখন একুয়াকালচারের রুই–কাতলা হচ্ছে, আমি নিরুৎসাহিত করছি না, তবে দেশীয় মৎস্যরক্ষা জরুরি। গরুর মাংসকে রেড মিট হিসেবে নিরুৎসাহিত করা হয়। বরং পোল্ট্রি খাতকে শক্তিশালী করা উচিত।’

খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘ফার্টিফায়েড ধান বা চাল সবসময় পুষ্টি ধরে রাখে না। চকচকে সবজিই নিরাপদ— এ ধারণাটি ভুল। সার্টিফিকেশন সব সমস্যার সমাধান নয়; কীটনাশক ব্যবহার, উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই মূল বিষয়।’

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বিএজেএফ সভাপতি সাহানোয়ার সাইদ শাহীন বলেন, ‘মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে নীতিগত অঙ্গীকার জরুরি। নদীর মাছ ফিরিয়ে আনা, বালাইনাশকের ব্যবহার কমানো, চাষের মাছের গুণমান রক্ষা এবং খামারিদের স্বার্থ সুরক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ দেখতে চাই।’

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ও নীতিনির্ধারকরা বক্তব্য দেন— মৎস্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়া হায়দার চৌধুরী বলেন, মজুদ জরিপ, আধুনিক মনিটরিং ও টেকসই ব্যবস্থাপনার ফলে বাংলাদেশ সুনীল অর্থনীতিতে দ্রুত এগোচ্ছে। মেরিন স্পেশিয়াল প্ল্যানিং, টেকসই আহরণ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং সমুদ্রের স্বাস্থ্যের উন্নয়নে দেশের বড় বিনিয়োগ সম্ভাবনা রয়েছে।

মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আবদুর রউফ বলেন, নদীর মাছ কমার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনসহ মানবসৃষ্ট কারণ দায়ী। চাষাবাদে কীটনাশকের ব্যবহার যৌক্তিক পর্যায়ে আনতেই আমরা কাজ করছি। নিরাপদ মাছ উৎপাদনই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।

বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সাজেদুল করিম সরকার বলেন, ‘পুষ্টি নিরাপত্তায় বিএলআরআই এখন পর্যন্ত ৯৭টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। জেনেটিক উন্নয়ন, ফডার প্রযুক্তি ও আধুনিক গবেষণায় দুধ, ডিম ও মাংস উৎপাদন বহুগুণ বেড়েছে।’

আস্থা ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘দেশের উৎপাদিত ফিশ ফিড এখন আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানি হচ্ছে—যা নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে। টেকসই করতে ফিশ ফিডের জন্য বিশেষ এক্সপোর্ট প্রণোদনা দরকার।’

এসিআই এগ্রিবিজনেসেস-এর প্রেসিডেন্ট ড. ফা হ আনসারী বলেন, ‘শক্তিশালী ভ্যালু চেইন গড়ে না উঠলে কৃষকের ওপর মধ্যস্বত্বভোগীদের চাপ কমবে না। গবেষণা, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণে সমন্বয় প্রয়োজন।’

বিএলআরআই-এর সাবেক মহাপরিচালক ড. কাজী ইমদাদুল হক বলেন, কৃষিতে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা নীতি ও শক্তিশালী ভ্যালু চেইন অপরিহার্য। জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষিজমি হ্রাস ও মূল্যনীতির দুর্বলতা বড় চ্যালেঞ্জ।

চার দিনব্যাপী এই সম্মেলনে কো-স্পন্সর হিসেবে রয়েছে আস্থা ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড; সহযোগিতায় রয়েছে এসিআই এগ্রিবিজনেসেস, প্রাণ–আরএফএল গ্রুপ, লালতীর সিডস লিমিটেড, ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন (বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ), বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বন অধিদফতর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, মৎস্য অধিদফতর ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতর।