Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সুইসাইড নোটে শিক্ষিকার মানসিক চিকিৎসা চেয়েছে মেয়েটি


২৫ জুলাই ২০১৮ ১৭:৩৯

||জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট||

ঢাকা: “আমার  ‍Suicideকরার কারণ একমাত্র রিমি মেডাম। সে শুধু আমাকে দেখে তার জিদ কমানোর জন্য। সে অযথা পরীক্ষায় আমার খাতা নিসে। আর পরীক্ষায় কম নাম্বার দিসে। তোমরা যদি পার তাহলে সে মেডামের মানসিক চিকিৎসা দাও। Mental Hospital এ পাঠাও। মেডাম আমারে অভিশাপ দিসে, তাই আমি ভালো result খারাপ হইছে। Maliha”

(এমনটাই লেখা ছিল একটি সুইসাইড নোটে)

রুলকরা খাতার পাতায় নিজের আত্মহত্যার কারণ লিখে গিয়েছে সুমাইয়া আক্তার মালিহা নামের ১৪ বছরের স্কুল শিক্ষার্থীটি। গত ২৪ জুলাই (মঙ্গলবার) রাত ১০টার দিকে রাজধানীর শাহজাহানপুর এলাকার গুলবাগের বাসা থেকে পুলিশ মালিহার মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল তার ময়না তদন্ত হয়।

মালিহার লেখার সূত্র ধরে দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে শিক্ষিকা রিমি আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন শাহজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম।

মালিহা বংশাল কায়েতটুলি এলাকার মোহাম্মদ আলীর মেয়ে। পরিবার নিয়ে শাহজাহানপুর গুলবাগ পাওয়ারহাউজ এলাকার ২৭৬/বি নম্বর বাসার ৬ তলায় ভাড়া থাকেন মোহাম্মদ আলী ।

শাজাহানপুর থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মো. মনিরুজ্জামান জানান, ‘গতকাল রাতে খবর পেয়ে ওই বাসায় গেলে মেয়েটিকে ওড়না দিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় পাই। ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নামিয়ে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে বুধবার সকালে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, এই ঘটনায় আত্মহত্যা প্ররোচনায় একটি মামলা হয়েছে।

মালিহার চাচাতো ভাই আলমগীর মিয়া সারাবাংলাকে জানান, মালিহা শহীদ ফারুক ইকবাল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। গত দশ বারো দিন আগে তার পরীক্ষা শেষ হয়।

পরিবারের অভিযোগ, মালিহার কাছ থেকেই তারা জানতে পেরেছেন, পরীক্ষার সময় স্কুলের ব্যবসা শিক্ষার শিক্ষিকা রেমি আক্তার মালিহার পরীক্ষার খাতা কেড়ে নেন।

পরিবার আরও জানায়, বিষয়টি নিয়ে মালিহা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং পরীক্ষায় তার ফল খারাপ হবে বলে ধারণা করতে থাকে। গত মঙ্গলবার রাতে মালিহার মা মুনমুন বেগম ছোট মেয়ে সামিহাকে নিয়ে পাশের ঘরে ছিলেন। মালিহা তার ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে ফ্যানের সাথে ওড়না পেচিয়ে গলায় ফাঁস দেয়। অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পর কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙ্গে দেখে ফ্যানের ঝুলন্ত মৃতদেহ।

পরে পুলিশ এসে ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে।

মালিহার চাচাতো ভাই অভিযোগ করে বলেন, স্কুলের শিক্ষিকা রিমি শুধু মালিহার সাথেই না, আরও অনেক ছাত্রীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন বলে তারা জানতে পেরেছেন। তার কাছে কোচিং না করলে তিনি আচরণ খারাপ করেন, এমন অভিযোগও তাদের জানা রয়েছে।

মালিহার মামাত ভাই তাজউদ্দিন আহমেদ রাসেল সারাবাংলা’কে বলেন, মালিহার বাবা মোহাম্মদ আলী একটি প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করেন। দুই বোনের মধ্যে মালিহা ছিল বড়।

অভিযুক্ত শিক্ষিকা রিমি আক্তারকে নিয়ে এর আগে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে মালিহা মৌখিকভাবে অভিযোগও করেছিল জানিয়ে রাসেল বলেন, ‘এরপর থেকেই তিনি (শিক্ষিকা রিমি আক্তার) আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে যান মালিহার ওপর। তারই প্রতিশোধ হিসেবে তিনি পরীক্ষার সময়ে মালিহার খাতা নিয়ে যান এবং কম নাম্বার দেন বলে ধারণা করছি আমরা।’

এদিকে, শাহজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম সারাবাংলা’কে বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষিকা রিমি আক্তারকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। শিক্ষিকা রিমি আক্তার আত্মপক্ষ সমর্থন করে কিছু বলেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তাই এ সর্ম্পকে কিছু বলা যাবে না।

অন্যদিকে, শিক্ষিকার রোষানলে পরে আত্মাহত্যার ঘটনাটিকে দুই দিক থেকে বিশ্লেষণ করতে হবে বলে জানালেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের শিশু কিশোর ও পারিবারিক সর্ম্পক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি সারাবাংলা’কে বলেন, এ ধরনের ঘটনা আমরা অনেক পেয়ে থাকি। প্রকৃত অর্থেই যদি স্কুলের এ ধরনের বুলিং থাকে এবং শিক্ষকরা যদি এমন রূঢ় আচরণ করে থাকেন, তাহলে শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবেই মানসিক চাপে পড়ে। সে চাপ থেকেই তারা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং আত্মহত্যার দিকেও যেতে পারে। তাই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে।

এ ধরনের সংবাদ খুবই ‘ক্রিটিক্যাল ইস্যু’ মন্তব্য করে ডা. হেলাল বলেন, গণমাধ্যমকেও এসব সংবাদ পরিবেশনের সময় মুনশিয়ানা দেখাতে হবে, যেন কোনো শিক্ষার্থী এ ধরনের প্রবণতায় উৎসাহিত না হয়।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ও সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক তৌহিদুল হক সারাবাংলা’কে বলেন, সরকার বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই এ ধরনের ঘটনাকে আমলে নেয় না। এ দেশে সামাজিক বিষয়গুলো সবসময়ই উপেক্ষিত।

‘মালিহার আত্মহত্যা আমাদের বার্তা দেয়, শিক্ষার্থীর সঙ্গে শিক্ষকদের সম্পর্কে অধিকাংশ শিক্ষকরাই অনেক দূরে, অনেকটা বাণিজ্যিক তৎপরতার আদলে তৈরি হয় সে সর্ম্পক’,— বলেন তিনি।

তৌহিদুল হক আরও বলেন, শিক্ষক নিয়োগে যখন বাণিজ্যিক বিষয়গুলো চলে আসে তখন সে শিক্ষকের কাছে আমরা শিক্ষকসুলভ আচরণ প্রত্যাশা করতে পারি না। এর আগে যেহেতু প্রধান শিক্ষকের কাছে ওই শিক্ষার্থী অভিযোগ জানিয়েছিল, তাই তিনিও এ ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না।

শিক্ষার্থীদের এই বয়সটাকে ‘আর্লি লার্নিং স্টেজ’ অভিহিত করে এই সহকারী অধ্যাপক বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষও সেখানে সমানভাবে দায়ী। তাদের উচিত ছিল এ শিক্ষকের ‘বিহেভিয়্যার কারেকশনের’ মধ্যে দিয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা। কারণ, স্কুল-কলেজে যদি কোনো শিক্ষার্থী এ ধরনের বুলিংয়ের শিকার হয়, তাহলে তার পুরো জীবনে সেটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

‘শিক্ষকদের জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে কাউন্সিলির নিয়োগের কথা সবসময় বলা হয়। শিক্ষকদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন অপরিহার্য’— বলেন অধ্যাপক তৌহিদুল হক।

সারাবাংলা/জেএ/এমএম


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ই-ক্যাবে প্রশাসক নিয়োগ
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:১৪

সম্পর্কিত খবর