সরকারি ৭ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ, বেসরকারি ৩ কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ছে!
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৬:০৯
।। হাসান আজাদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: সরকার নিয়ন্ত্রণাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সঙ্কটে উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হলেও বেসরকারি খাতে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার। পেট্রোবাংলার নেওয়া সিদ্ধান্তের বিপরীতে দাঁড়িয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ গ্যাসভিত্তিক অন্তত তিনটি রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে এই সুবিধা দিতে যাচ্ছে।
এদিকে গত ১৯ ফেব্রুয়ারির রিপোর্টে দেখা গেছে, স্রেফ গ্যাস সঙ্কটের কারণে ওই দিন দেশের ৭টি বড় কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়েছে। এছাড়া আরও তিনটি কেন্দ্র তার উৎপাদন ক্ষমতার ৩৫ শতাংশেরও কম উৎপাদন করতে পেরেছে।
অব্যাহতভাবে গ্যাস সঙ্কট বেড়ে যাওয়ায় দেশের বড় বড় সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো এখন কাঙ্খিত উৎপাদনে ব্যর্থ। ঠিক তখন বেসরকারিখাতে স্বল্প উৎপাদনের তিনটি কেন্দ্রে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রশ্ন উঠেছে।
প্রতিটি কেন্দ্রের ১১ মেগাওয়াট করে মোট ৩৩ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার এই তিনটি কেন্দ্র চালু রাখতে গ্যাসের ওপর আরও চাপ বাড়বে বলেই মনে করছেন অনেকেই।
সূত্র জানিয়েছে, আগামী পাঁচ বছরের জন্য কেন্দ্র তিনটির মেয়াদ বাড়ানো ও বিদ্যুৎ কিনতে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ।
এ সপ্তাহেই ক্রয় সংক্রান্ত কমিটি বৈঠকে প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হতে পারে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের উর্ব্ধতন এক কর্মকর্তা।
কেন্দ্র তিনটি ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায়, নরসিংদীর মাধবদী ও কুমিল্লার চান্দিনায়। কেন্দ্রগুলো থেকে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) নিয়ন্ত্রণাধীন ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১, কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এবং নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ বিদ্যুৎ নিচ্ছে।
কেন্দ্র তিনটি স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ ও উৎপাদনের দায়িত্বে রয়েছে সামিট পাওয়ার লিমিটেড।
এদিকে, গ্যাস সঙ্কটের কারণে দেশের সরকার নিয়ন্ত্রিত বড় বড় কেন্দ্রগুলো (বেইজ লোড পাওয়ার প্লান্ট) সক্ষমতার চেয়েও দিনে অন্তত ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন করছে। একইসঙ্গে চাহিদার তুলনায় কম গ্যাস পাওয়ার কারণে শিল্প কারখানায়ও উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
এই অবস্থা মোকাবেলায় পেট্রোবাংলার সিদ্ধান্ত ছিলো গ্যাসভিত্তিক ছোট কোন বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করা হবে না। শুধুমাত্র বড় কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ করা হবে। কিন্তু প্রেট্রোবাংলার সে সিদ্ধান্তের বিপরীতে দাঁড়িয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে মন্ত্রণালয়।
গ্যাস সংকটের কারণে বড় কেন্দ্রগুলো চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পাচ্ছে না, এই অবস্থায় কেন গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে? বিদ্যুৎ বিভাগ ও পেট্রোবাংলার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে এমন প্রশ্ন করা হলে তারা কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিবরণীতে দেখা যায়, এদিন সক্ষমতার চেয়েও ১২৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হয়েছে। এদিন গ্যাস সংকটের কারণে ৭টি বড় কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ ছিল। কারখানাগুলো হচ্ছে- ঘোড়াশাল এসটি, টঙ্গি জিটি, সিদ্ধিরগজ্ঞ এসটি, শিকলবাহা, শিকলবাহা পিকিং, বাঘাবাড়ি জিটি এবং সিরাজগজ্ঞ ইউনিট-৪।
এছাড়া তিনটি কেন্দ্রে পুর্নাঙ্গ ক্ষমতার চাইতে অনেক কম উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সিরাজগঞ্জ জিটি-১ ও ২ কেন্দ্রে উৎপাদন হয়েছে ১৩০ মেগাওয়াট, ২১০ মেগাওয়াট ক্ষমতার চট্টগ্রাম এসটি কেন্দ্রটি উৎপাদন করেছে মাত্র ৪০ মেগাওয়াট এবং ২১০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরপিসিএল সিসিপিপি কেন্দ্রে উৎপাদন হয়েছে ৪২ মেগাওয়াট। যা গড়ে মোট উৎপাদন ক্ষমতার ৩৫ শতাংশেরও কম।
তবে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড- আরইবি’র চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিনের দাবি গ্যাসভিত্তিক ওই তিনটি কেন্দ্র গ্যাস পেলে আগের চেয়ে কম দামে বিদ্যুৎ দেবে।
তিনি বলেন, আমরা আলোচনা করে বিদ্যুতের দাম আগের চেয়ে কমিয়েছি।
আর ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো সার সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে, পাওয়ার মাস্টার প্ল্যান-২০১৬ অনুয়ায়ী ২০২১ সালের বাংলাদেশের ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। কয়লাভিত্তিক বড় কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসতে আরও সময় প্রয়োজন হবে। এই প্রেক্ষাপটে রেন্টাল/কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের মেয়াদ বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী আরও তিনি থেকে পাঁচ বছর বাড়ানোর বিষয়ে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এতে বিদ্যুতের মুল্য বিষয়ে বলা হয়েছে, কেন্দ্র তিনটি থেকে বর্তমান বাল্ক সাপ্লাই ট্যারিফ ইউনিট প্রতি দুই দশমিক ০৫ টাকা থেকে কমিয়ে দুই দশমিক ০২ টাকায় কেনা হবে। ভবিষ্যতে বাল্ক ট্যারিফে কোন ধরনের পরিবর্তন আসলে সে অনুযায়ী মুল্য নির্ধারিত হবে।
২০১৮ সালের ৩১ আগষ্ট এই কেন্দ্র তিনটির চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। একই বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে আরও পাঁচ বছর মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সার-সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, সরকার কিছু মানুষকে ব্যবসা দিতে চাইছে। তাদেরকে লাভবান করতে চায়। এটাই হয়তো সরকারের অবজেকটিভ। নইলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে কেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুতের অনুমতি দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, এসকল বিদ্যুৎ কেন্দ্রতো অনেক আগেই বন্ধ করে দেয়ার কথা। করা হয়নি, বরং এগুলোর মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। যার কোন যৌক্তিক কারণ নেই।
সারবাংলা/এইচএ/এমএম
কুইক রেন্টাল গ্যাস গ্যাস সঙ্কট পেট্রোবাংলা বিদ্যুৎ বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় রেন্টাল