Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘মুক্ত নাগরিক হিসেবে বাঁচতে জনগণ যে কোনো ত্যাগে প্রস্তুত’


২০ মার্চ ২০১৯ ০৭:২২

।। সুমন ইসলাম।।

ঢাকা: ২০ মার্চ, ১৯৭১। ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের মধ্যে চতুর্থ দফা বৈঠক হয়। সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত এ বৈঠকের নির্ধারিত স্থান ছিল রমনার প্রেসিডেন্ট ভবন। এই প্রথম প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় ছয় শীর্ষস্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকে বঙ্গবন্ধু সঙ্গে রাখলেন। ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট স্থায়ী এ বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু যখন প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বাইরে এলেন, তখন শত শত কণ্ঠের ‘জয় বাংলা’ স্লোগান তাকে আচ্ছন্ন করে।

বিজ্ঞাপন

এ দিনের আলোচনা প্রসঙ্গে পরদিন দৈনিক পাকিস্তান সংবাদ শিরোনাম করে, ‘মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক সংকট নিরসনের পথে এগোচ্ছে।’ সংবাদে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় নীতির বর্তমান সংকট নিরসনের পথে মুজিব-ইয়াহিয়া আলোচনায় অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলেন, রাজনৈতিক সংকট সমাধানের পথে তারা এগোচ্ছেন। কাল আবার বৈঠক হবে।

এদিকে, মুক্তিপাগল মানুষের দৃপ্ত পদচারণায় রাজধানী টালমাটাল হয়ে ওঠে। মিছিলের পর মিছিল এগিয়ে চলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে শপথ গ্রহণের শেষে একের পর এক শোভাযাত্রা বঙ্গবন্ধুর বাস ভবনে গিয়ে সমবেত হয়। বঙ্গবন্ধু সমবেত জনতার উদ্দেশে একাধিক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, মুক্তিপাগল সাড়ে সাত কোটি বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়কে পৃথিবীর কোনো শক্তিই রুখতে পারবে না।

বাংলাদেশের মানুষের সার্বিক মুক্তি অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রধান মিয়া মমতাজ মোহাম্মদ খান দৌলতানা ও জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মওলানা মফতি মাহমুদ পৃথক পৃথক বৈঠকে মিলিত হন।

সুপ্রিম কোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম কৌঁসুলী এ কে ব্রোহি সকালে করাচি থেকে ঢাকায় আসেন। পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভূট্টো করাচিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তিনি লন্ডন পরিকল্পনা মানবেন না। ১৯৬৯ সালে লন্ডনে বসে শেখ মুজিব, খান আবদুল ওয়ালী খান ও মিয়া মমতাজ মোহম্মদ খান দৌলতানা ওই পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিলেন। ভূট্টো বলেন, ওই পরিকল্পনা আওয়ামী লীগ প্রধানের ঘোষণা করা ৬-দফার ভিত্তিতেই করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, স্বাধীন দেশের মুক্ত নাগরিক হিসাবে বেঁচে থাকার জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে বাংলার মানুষ প্রস্তুত বয়েছে। চারুকলার শিল্পীরা স্বাধীনতা পোস্টার বুকে বেঁধে অসহযোগ আন্দোলনে রাস্তায় বের হন। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ২৩ মার্চ স্বাধীন পূর্ববাংলা দিবস হিসেবে পালনের আহ্বান জানান।

অন্যদিকে, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তার সামরিক উপদেষ্টা জেনারেল হামিদ খান, পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসক টিক্কা খান, জেনারেল পীরজাদা, জেনারেল ওমর, জেনারেল মিঠঠাসহ সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি গোপন বৈঠকে বসেন। এ বৈঠকে তিনি সামরিক প্রস্তুতির পর্যালোচনা করেন।  বৈঠকে শেখ মুজিবের সঙ্গে বৈঠক ব্যর্থ হলে কী করণীয় হবে, তা আলোচিত হয় এবং ‘অপারেশন সার্চলাইট’ অনুমোদন করা হয়। এসময় প্রতিদিন সিংহল হয়ে একের পর এক ফ্লাইট বোয়িং-৭০৭ বিমানে করে সৈন্য ও রসদ ঢাকায় আনা হচ্ছিল এবং কয়েকটি জলজাহাজ পূর্ণ করে সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র চট্টগ্রাম বন্দরে আনা হচ্ছিল। অসহযোগ আন্দোলন শুরুর দিকে বাংলাদেশে স্থলবাহিনীর শক্তি ছিল এক ডিভিশন, ২০ মার্চ তা এসে দাঁড়ায় দুই ডিভিশনেরও বেশি।

২০ মার্চ বঙ্গবন্ধুর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ও সুপ্রিম কোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী একে ব্রোহি ঢাকায় আসেন। তিনি সন্ধ্যায় হোটেল কন্টিনেন্টালে কাউন্সিল মুসলিম লীগ সভাপতি মিয়া মোমতাজ মোহাম্মদ দৌলতানা, ন্যাপপ্রধান খান আবদুল ওয়ালী খান, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মুফতি মাহমুদ, পাঞ্জাব কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রধান সরদার শওকত হায়াত খান, বেলুচিস্তানের ন্যাপ নেতা গাউস বেজেঞ্জা প্রমুখ নেতার সঙ্গে আলোচনা করেন। ২০ মার্চ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা বঙ্গবন্ধু ঘোষিত স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন।

সারাবাংলা/টিআর

২০ মার্চ উত্তাল মার্চ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর