আলোচনায় ফল হবে না, ক্ষমতা শেখ মুজিবকে দেওয়া উচিত: মওলানা ভাসানী
২১ মার্চ ২০১৯ ০০:৪৫
১৯৭১ সালের ২১ মার্চ। অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের ২১ তম দিনে মুক্তি পাগল হাজার হাজার মানুষের দৃপ্ত পদচারণায় রাজধানী ঢাকা অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। সর্বস্তরের মানুষের সম্মিলিত মিছিল ‘জয়বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান তুলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অভিমুখে এগিয়ে চলে। সেখানে মুক্তি অর্জনের শপথ নিয়ে মিছিল যায় বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে।
বিকেলে চট্টগ্রামে ন্যাপ প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পোলো গ্রাউন্ডে এক বিশাল জনসভায় বলেন, আলোচনায় ফল হবে না। এদেশের হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি থেকে চাপরাশি পর্যন্ত যখন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে মানে না, তখন শাসন ক্ষমতা শেখ মুজিবের হাতে দেওয়া উচিত।
সকালে জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে পঞ্চম দফা বৈঠকে মিলিত হওয়ার আগে তার নিজ বাসভবনে বিশিষ্ট আইনজীবী এ. কে. ব্রোহির সঙ্গে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনায় মিলিত হন। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ৫ম দফা বৈঠকের সময় প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন।
এদিকে, পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো বিকেলে সদলবলে করাচি থেকে ঢাকায় আসেন। ভুট্টোর আগমন উপলক্ষে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে সেনা মোতায়েন করা হয়। সাংবাদিকদের বিমানবন্দরে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়। ভুট্টোকে বিমানবন্দর থেকে হোটেল ইন্টার-কন্টিনেন্টালে নিয়ে আসার সময় রাস্তার দুপাশে পথচারীরা ভুট্টো বিরোধী স্লোগান দেয়। সন্ধ্যায় পিপলস পার্টি প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো কড়া সেনা প্রহরায় প্রেসিডেন্ট ভবনে যান। সেখানে দুঘণ্টারও বেশি সময় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক শেষে হোটেলে ফিরেই ভুট্টো তার উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। এর আগে হোটেল লাউঞ্জে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের ভুট্টো বলেন, এ মুহূর্তে আমি এটুকু বলতে পারি যে, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। ভুট্টো সাংবাদিকদের আর কোনো সময় না দিয়ে সরাসরি লিফটে চড়েন। সাংবাদিকরা তার সহগামী হতে চাইলে ভুট্টোর ব্যক্তিগত প্রহরীরা অস্ত্র উঁচিয়ে বাধা দেয়।
১৯ মার্চ জয়দেবপুরে জারি করা কারফিউ বেলা ১২টায় ৬ ঘণ্টার জন্য প্রত্যাহার করা হয়। পরে সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পুনরায় কারফিউ বলবৎ করা হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন আগামী ২৩ মার্চ প্রতিরোধ দিবসের কর্মসূচির প্রতি তাদের সমর্থন ঘোষণা করে। মগবাজারে মহিলা সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক মহিলা সমাবেশে সেনাবাহিনীর প্রাক্তন বাঙালি সৈনিকদের নিয়ে একটি প্যারা-মিলিটারি ফোর্স গঠনের আহবান জানানো হয়।
** প্রতিবাদ-বিক্ষোভে ঘুম ভেঙে জেগে উঠে ‘সুপ্ত আগ্নেয়গিরি’
সারাবাংলা/