শাহ আলমগীরের দেখানো পথ অনুসরণীয়: স্মরণসভায় বক্তারা
২২ মার্চ ২০১৯ ১৭:০৭
ঢাকা: ‘শাহ আলমগীর একদিকে পেশাদার সাংবাদিক, অন্যদিকে দক্ষ প্রশাসকও ছিলেন। তিনি ছিলেন সদ্য হাস্যোজ্জ্বল, সৎ, নীতিবান এবং কাজ পাগল মানুষ। তার দেখানো পথ অনুসরণীয়। আবার তিনি এতটাই নিখুঁত, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতেন যে, শাহ আলমগীরকে প্রকৃত অর্থেই অনুসরণ করা সম্ভব কি না সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে।’
শাহ আলমগীরের স্মরণ সভায় শুক্রবার (২২ মার্চ) সকালে বক্তাদের আলোচনায় এ প্রসঙ্গ উঠে আসে। সম্প্রচার সাংবাদিক কেন্দ্রের (বিজেসি) আয়োজনে জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিলনায়তনে ‘স্মরণে শাহ আলমগীর’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়।
গণমাধ্যম জগতের কীর্তিমান ব্যক্তিত্ব শাহ আলমগীর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) না ফেরার দেশে পাড়ি দেন।
শাহ আলমগীর স্মরণে অনুষ্ঠানে প্রার্থনা সঙ্গীত ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। প্রদর্শন করা হয় তার কর্মময় জীবনের একটি ভিডিও চিত্র। এরপর শাহ আলমগীরের নানা অবদানের কথা তুলে ধরেন সহকর্মী, সহযোদ্ধা ও বন্ধুরা।
‘স্মরণে শাহ আলমগীর’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, ‘শাহ আলমগীরের সঙ্গে আমার ৪৭ বছরের সম্পর্ক। আলমগীর এই ৪৭ বছরে মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছে তা অকৃত্রিম। এই ভালোবাসা মেকি নয়। মানুষ তাকে হৃদয় থেকে ভালোবাসে। এ রকম সফল জীবন আর হতে পারে না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মফিদুল রহমান বলেন, ‘শাহ আলমগীর ছিলেন সদালাপী। তার সঙ্গে কথা বলে আরাম পাওয়া যেত, মনে শান্তি আসত।’
প্রথম আলোর যুগ্ম-সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, ‘শাহ আলমগীর ছিলেন সকলের বন্ধু। তার মতো বন্ধু তৈরি করার ক্ষমতা খুব কম মানুষেরই আছে। তিনি একাধারে সাংবাদিক নেতা ও কর্মী ছিলেন। তিনি দুর্দিনে সময়ের বন্ধুদের কথা সবসময়েই মনে রেখেছেন। তিনি এমন একজন মানুষ ছিলেন যে তার দুঃখ-কষ্ট সহজে প্রকাশ পেত না কিন্তু আনন্দের বিষয়গুলো তিনি সবার সঙ্গে ভাগ করতেন।’
দৈনিক সমকালের যুগ্ম-সম্পাদক অজয় দাস গুপ্ত বলেন, ‘শাহ আলমগীর এমন একজন মানুষ ছিলেন যে তিনি কঠিন কথা সহজে বলতে পারতেন। তিনি ছিলেন বটবৃক্ষের মতো, যার ছায়াতলে এলে মন ভালো হয়ে যেত।’
দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক খন্দকার মনিরুজ্জামান বলেন, ‘তিনি সবসময়েই ইতিবাচক চিন্তা করতেন। শাহ আলমগীর গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য সাংবাদিক কল্যাণ তহবিলের উদ্যোগ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করেছেন। আমি মনে করি, এটা একটা বিশাল কাজ। ভালো মানুষ না হলে এমন কাজ করা যায় না। তিনি সবসময়েই কমিউনিটির স্বার্থের কথা ভাবতেন।’
প্রধান তথ্য কমিশনার মর্তুজা আহমেদ বলেন, ‘৮৫ সালে পিআইবি গঠিত হয় কিন্তু শাহ আলমগীরের সময়টা হচ্ছে পিআইবির স্বর্ণযুগ। তার আমলে পিআইবিতে যত কাজ হয়েছে এবং পিআইবিকে যেভাব প্রযুক্তিসহ উন্নত করা হয়েছে তা আগে কখনো হয়নি। শাহ আলমগীর কর্তব্যপরায়ণ বলেই এমনটা সম্ভব হয়েছে। একটা সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সাংবাদিকদের ঢাকায় এসে পিআইবিতে প্রশিক্ষণ নিতে হতো। কিন্তু শাহ আলমগীর এ ধারা ভেঙে দিয়ে পিআইবিকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এখন আর সাংবাদিকদের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঢাকায় আসতে হয় না, পিআইবি প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসে। তার দেখানো পথ আমাদের জন্য অনুসরণীয়।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমীন বলেন, ‘শাহ আলমগীরের গণমাধ্যমের সবগুলো শাখায় স্বচ্ছন্দে বিচরণ ছিল। তিনি অনেক সাংবাদিক তৈরি করেছেন। তিনি সফল সাংবাদিক ও প্রশাসক ছিলেন।’
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বিএসএস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘শাহ আলমগীর কখনো ক্ষোভ লালন করতেন না। তিনি কখনো কারও সঙ্গে কড়া ভাষায় কথা বলেননি। আমরা দুইজন একসঙ্গে কাজ করেছি, সাংবাদিক ইউনিয়ন করেছি। আমি দেখেছি যে অন্যরা তার বিরুদ্ধে বললেও তিনি কখনোই কারো বিরুদ্ধে কারো পেছনে কথা বলতেন না।’
শাহ আলমগীর স্মরণে বলতে গিয়ে একপর্যায়ে বিএসএস ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদের চোখে পানি চলে এলে তিনি নিজেকে সামলে নিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।
একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু বলেন, ‘শাহ আলমগীর ছিলেন একই সঙ্গে সৎ, নিষ্ঠাবান, পরোপকারী, দক্ষ এবং তার মধ্যে মানুষের সকল গুণাবলিই উপস্থিত ছিল। তাই আমার মনে হয়, তিনি একজন অনুকরণীয় মানুষ। কেননা তাকে অনুসরণ করা চাট্টিখানি কথা না। তিনি ছিলেন সিদ্ধার্থ পুরুষ।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘শাহ আলমগীর কখনো আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। তাকে নিয়ে আমরা যত উচ্চ প্রশংসা করি না কেন তা অতিকথন হবে না। হাসিমুখ ছাড়া তাকে কল্পনায় করা যায় না।’
এ ছাড়াও স্মরণ সভায় শাহ আলমগীরের সহধর্মিনী ফৌজিয়া বেগম মায়া, মাছরাঙা টেলিভিশনের হেড অব নিউজ এবং সম্প্রচার সাংবাদিক কেন্দ্রের চেয়ারম্যান রেযোয়ানুল হক রাজাসহ অন্যরা বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠান শেষে শাহ আলমগীরের পরিবারের হাতে বিজেসির পক্ষ থেকে একটি জলছবি স্মৃতি হিসেবে তুলে দেন জিটিভির প্রধান সম্পাদক ও বিজেসির অন্যতম ট্রাস্টি সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা।
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিজেসির ট্রাস্টি রাশেদ আহমেদ।
সারাবাংলা/জেআইএল/একে