কমলাপুর ফিটফাট, বিমানবন্দর সদরঘাট!
৫ এপ্রিল ২০১৯ ১২:০৯
ঢাকা: লাগানো হয়েছে নতুন লাইট। বেড়েছে আলোকসজ্জা। পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দৌঁড়ঝাপ চলছে। কিছুটা হলেও বদলানোর চেষ্টা চলেছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের চেহারা। কিন্তু এ্রর ছিঁটেফোঁটা ছোয়াও নেই রাজধানীতে রেলের আরেকটি প্ল্যাটফর্ম বিমানবন্দর স্টেশনে। এখানে ময়লা আবর্জনার স্তুপ। ফুটওভার ব্রিজে ঘুমাচ্ছে ভবঘুরে। স্টেশন ঘিরে ফুটপাতের দোকান। আর খুঁটিতে খুঁটিতে ঝুলছে বিভিন্ন কোম্পানির পণ্যের বিজ্ঞাপন।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। শুক্রবার (৫ এপ্রিল) কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যাওয়ার কর্মসূচি নেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। এক মাস আগে একবার পরিদর্শন করে নানা অবস্থাপনা দেখে আল্টিমেটাম দিয়ে এসেছিলেন। সে অনুযায়ী কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পরিচ্ছন্নতার পাল্লা শুরু হয় এই স্টেশনে। কিন্তু কমলাপুর থেকে ২০ কিলোমিটারের মধ্যে রাজধানীর ভেতরেই অপর স্টেশনটি নিয়ে নেই কারো মাথা ব্যাথা। সেখানকার চেহারা পাল্টায়নি এতটুকু।
আরও পড়ুন- ‘ঈদে ট্রেনের টিকিট শুধু কমলাপুর নয়, ঢাকার বিভিন্ন স্থানে’
বাংলাদেশ রেলওয়েকে ধূমপানমুক্ত অনেক আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এরপরও স্টেশনের ভেতরে একের পর এক সিগারেটের স্টল। এসব স্টল থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। আর সে অভিযোগের তীর বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন শ্রমিকলীগের দিকে।
বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম লাগোয়া এক সারিতে ১৫ টি ভাসমান দোকান। নাম প্রকাশ না করে একজন দোকানী বলেন, ১১টি পয়েন্টে টাকা দিয়ে দোকান বসিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে শ্রমিকলীগ, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী, পরিচ্ছিন্নতা কমী এবং স্টেশন মাস্টারের নামও বললেন তিনি।
বিষয়টি জানতে স্টেশন মাস্টারের রুমের দিকে গিয়ে তাকে পাওয়া গেল না। প্রায় দুই ঘন্টা সেখানে অবস্থান করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে জানা গেল স্টেশন মাস্টার মরণ চন্দ্র বসেন পেছনের একটি রুমে। সেটি তার ধূমপান কক্ষ। তার অফিস কক্ষে তাকে খুব কম সময়ই দেখা যায়।
পরে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও ধরেননি তিনি।
আরও পড়ুন- শিগগিরই ট্রেনের সব টিকিট মোবাইল অ্যাপে: রেলপথমন্ত্রী
কমলাপুর রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমকতা ইয়াসিন ফারুক জানান, এ্ স্টেশনে সার্বক্ষণিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করে। অপরাধ এবং নিরাপত্তার বিষয়টি কেবল এখানে পুলিশ দেখে। এর বাইরে কোন অবস্থ্যাপনা দেখলেও পুলিশের কিছু করার নেই।
এদিকে, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা দেখা যায়নি স্টেশনে। ফুটওভারব্রিজ রেখে রেলের চারটি লাইন পায়ে মাড়িয়ে এপার ওপার হচ্ছেন মানুষ্। প্লাটফর্ম জুড়ে যত্র তত্র ময়লা আবর্জনা। এমনকি স্টেশনের একটি মাত্র ফুটওভার ব্রিজে ভবঘুরেদের আস্তানা। উপরে উঠে দেখা যায় আবর্জনায় প্রায় অব্যবহারযোগ্য হয়ে গেছে এটি। ফুটওভার ব্রিজে উঠে পথশিশুরা খালি বোতল জমা করে ব্যাগে ভরছে।
বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের মূল ফটকের ভেতর অনেকের জটলা দেখে সামনে এগিয়ে দেখা যায় ট্রেন শিডউল জানার জন্য মনিটরের দিকে চেয়ে আছেন অর্ধশত মানুষ। এই মনিটর পরিষ্কার করা হয়নি বহুদিন। মনিটর স্ক্রিনে বহু দাগ পড়ে আছে। এই জায়গাটিও কিছুটা অন্ধকার, নেই লাইটিংয়ের ব্যবস্থা।
টিকিট কাউন্টারেরও গতি শ্লথ। এখানে ১২টি কাউন্টার থাকলেও সচল দেখা গেছে মাত্র ৫টি।
এদিকে, বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে বিশ্রামাগার নির্ধারিত সময়ে খোলা হয় না। সকালে দেরি করে আসেন বিশ্রামাগারের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। এজন্য বাইরে ২ ও ৫ টাকা দিয়ে টয়লেটে লম্বা লাইন পড়ে থাকতে দেখা গেছে। আর এ টয়লেটটি নোংরা এবং দুর্গন্ধে ভরা।
ঢাকার মত গুরুত্বপূর্ণ এই ‘বি ক্লাস’ স্টেশন পার হয় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ও ঢাকাগামী ৭১ টি ট্রেন। এখান থেকে ট্রেনে উঠেন প্রায় অর্ধেক যাত্রী। এছাড়া দুই ঈদেও চাপ পড়ে এই স্টেশনে।
রেলভবনের একজন কর্মকর্তা জানান, রেলমন্ত্রী বিমানবন্দর একবার পরিদর্শন করে গেছেন। কিন্তু বেশি সময় ছিলেন না। পঞ্চগড় যাওয়ার জন্য এই স্টেশনে এসেছিলেন তখন। এ স্টেশনের অব্যবস্থাপনা নিয়ে সম্প্রতি অনেক অভিযোগ তাদের কাছেও এসেছে। কমলাপুর স্টেশনের পরেই এই স্টেশনের দিকে নজর দেওয়া হবে।
এসএ/এমএম