চট্টগ্রাম সফরে বিনিয়োগ-সামরিক সহায়তায় গুরুত্বারোপ মার্কিন দূতের
২০ এপ্রিল ২০১৯ ১১:১৬
ঢাকা: বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার চট্টগ্রামে চারদিনের সফর শেষ করেছেন। গত ১৬ এপ্রিল থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম সফর করেন। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য-বিনিয়োগ ও যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক সহযোগিতা এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টি এ সফরে গুরুত্ব পেয়েছে। এছাড়া দুদেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করা ছিল এ সফরের উদ্দেশ্য।
চট্টগ্রামে রাষ্ট্রদূত মিলার যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি জ্বালানি কোম্পানি ‘এক্সিলারেট’ পরিদর্শন করেন। বঙ্গোপসাগরে নির্মিত ‘এক্সিলারেট’ এর ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) চট্টগ্রামের ৬০ লাখ অধিবাসী ও চট্টগ্রাম শিল্প এলাকার জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করছে। এফএসআরইউ প্রতিদিন ৫০ কোটি কিউবিক ফুট গ্যাস রিগ্যাসিফিকেশন করতে সক্ষম। এর ফলে বাংলাদেশের নিজস্ব প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার ব্যবহারে সক্ষমতা বাড়ছে।
রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার স্থানীয় শিল্প সম্পর্কে আরও জানতে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসব শিল্প বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে। তিনি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাত করেন এবং দেশের ৯০ শতাংশের বেশি বাণিজ্য পরিচালিত হওয়া চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম ঘুরে দেখেন।
এছাড়া মার্কিন রাষ্ট্রদূত জাহাজভাঙা ইয়ার্ড ও একটি স্টিল রি রোলিং মিলও পরিদর্শন করেন। তিনি সেখানে শ্রমিক অধিকার ও তাদের নিরাপত্তার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন। এছাড়া শিশুশ্রম অবসান ঘটানোর জন্য ব্যবসায়ী নেতাদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ স্পেশাল ওয়ারফেয়ার ড্রাইভিং অ্যান্ড স্যালভেজ (এসডব্লিউএডিএস) মহড়ার সমাপনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত দুইদেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক সম্পর্কের সমর্থনে বক্তব্য দেন। এ মহড়ার মধ্যে ছিল মানবাধিকার, প্রাথমিক চিকিৎসা ও মিশন পরিকল্পনা বিষয়ক মডিউল। রাষ্ট্রদূত মিলার ২০০৫ সালে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা অপারেশনে (পিস্ কিপিং অপারেশনে বা পিকেও) নিহত সীম্যান মোহাম্মদ নুরুল ইসলামের সমাধিতে পুস্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানান এবং একটি গাছের চারা রোপণ করেন।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা অপারেশনে নিহত মোট ১৪৬ জন বাংলাদেশির প্রতিও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশের অবদানের প্রশংসা করেন।
রাষ্ট্রদূত মিলার এছাড়াও চট্টগ্রাম ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে (সিআইইউ) স্থাপিত ‘আমেরিকান কর্নার’ পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি দুইবারের ফুলব্রাইট ফেলো সিআইইউ এর উপাচার্য ড. মাহফুজুল হক চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে অটিজম নিয়ে সচেতনতা বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে স্থানীয়দের সঙ্গে অংশ নেন। রাষ্ট্রদূত মিলার যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার সুযোগ-সুবিধা এবং ‘আমেরিকান কর্নার’ এ প্রদত্ত এডুকেশন ইউএসএ তথ্য-সেবাগুলো তুলে ধরেন। পরে তিনি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এর প্রতিষ্ঠাতা ও উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেন।
এছাড়া রাষ্ট্রদূত মিলার চট্টগ্রাম ওয়ার সেমেটারি পরিদর্শন করেন। তিনি দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ার ফোর্সের সদস্য হিসেবে লড়াইয়ের সময় নিহত আমেরিকান পাইলট উইলিয়াম বি. রাইসের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। রাষ্ট্রদূত ওই যুদ্ধে নিহত সবার আত্মত্যাগকে সম্মান জানাতে ‘ক্রস অব রিমেমব্রান্স’ এ পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
সারাবাংলা/একে