Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শক্তি সঞ্চয় করছে ফণী, উপকূলের ১৯ জেলায় প্রস্তুতি


২ মে ২০১৯ ২২:২৫

ঢাকা: দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে শুক্রবার (৩ মে) সন্ধ্যানাগাদ আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ফণী। ফণীর কারণে সৃষ্ট ক্ষয়-ক্ষতি মোকাবিলায় ১৯টি উপকূলীয় জেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে সাড়ে তিনহাজার আশ্রয়কেন্দ্র। খোলা হয়েছে ২৪ ঘণ্টার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।

ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন লন্ডন সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলেছেন তিনি।

এদিকে, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণায়ের প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাব মোকাবিলায় সম্ভাব্য আক্রান্ত ১৯ জেলার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। আগামীকাল শুক্রবার (৩ মে) সকাল ১০টা থেকে এসব মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু হবে। এছাড়া ফণীর আঘাতে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর জন্যও সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এরই মধ্যে ‘সিভিয়ার সাইক্লোনে’ পরিণত হওয়া ফণীর সম্ভাব্য ছুটি মোকাবিলায় ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকার সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তাদের সংশ্লিষ্ট কর্মস্থলে উপস্থিত থেকে সবাইকে সহযোগিতার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি, আমরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পেরেছি।’

এ মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিশেষ বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

বৃহস্পতিবার (২ মে) সন্ধ্যায় সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে এ তথ্য জানিয়েছেন দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।

এ সময় জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে যেন প্রাণহানি না ঘটে, সে জন্য সরকার সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে। একইসঙ্গে সম্পদের ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্যও প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ফণীর ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ভালো প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আশা করি, আমরা যথেষ্ট সক্ষমতার সঙ্গে এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব মোকাবিলা করতে পারব।’

মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেলেও তাদের ঘরবাড়ি নিয়ে দুশ্চিন্তা না করতে বলেছেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সাইক্লোন সেন্টারে মানুষজন আশ্রয় নেওয়ার পর বাড়িঘর পাহারা দেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে। তবে, আগুনজনিত দুর্ঘটনা রোধে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মোমবাতির বদলে সৌর বিদ্যুৎ ও হ্যাজাকের ব্যবস্থা রাখা হবে।’

উপকূলীয় জেলাগুলোতে গৃহীত প্রস্তুতির তথ্য জানিয়ে বলা হয়, উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে ২০০ টন করে চাল ও প্রতিটি জেলার জন্য ৫ লাখ নগদ টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় জেলাগুলোতে ৪১ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার পাঠানো হয়েছে। মোট এক লাখ ৪৭ হাজার স্বেচ্ছাসেবীসহ মেডিকেল টিমগুলোকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, আজ ২ মে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক ই এলাহী চৌধুরী খুলনা ও চট্রগ্রাম অঞ্চলের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে আগামী ৪৮ ঘণ্টা কর্মস্থলে অবস্থান করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন, বাড়ানো হয়েছে দক্ষ লোকবল।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদফতর উপকূলীয় এলাকা গুলোতে চিকিৎসকদের সব ধরনের ছুটি ও প্রশিক্ষণ বাতিল করেছে। পাশাপাশি রোগী পরিবহনের জন্য অ্যাম্বুলেন্স ও অন্যান্য যানবাহন প্রস্তুত, দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কমিউনিটি ক্লিনিকসমূহকে একযোগে কাজ করার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২ মে) ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের করা এক প্রস্তুতিমূলক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সভায় জরুরি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নির্দেশনামূলক গাইডলাইন তৈরি করা হয়। এই গাইডলাইন এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগ, জেলা ও উপজেলায় পাঠানো হয়েছে বলে অধিদফতর সূত্রে জানা যায়। একইসঙ্গে দুর্যোগ মোকাবিলায় বিভাগীয় পর্যায়সহ, জেলা ও উপজেলায় জরুরি সভা করা হয়েছে এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা, উপজেলা ও প্রতিষ্ঠানভিত্তিক জরুরি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ে তিনটি, উপজেলা পর্যায়ে পাঁচটি এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে একটি ‘জরুরি মেডিকেল টিম’ গঠন করা হয়েছে। এরইমধ্যে বরিশাল বিভাগে ৪৯৭টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০৪৮টি এবং খুলনা বিভাগে ৮১৭টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে বলেও জানায় অধিদফতর।

বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগে জেলা ও উপজেলাতে কন্ট্রোল রুম চালু করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। হট লাইনে যোগাযোগ করার জন্য বিশেষ নাম্বারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নাম্বারগুলো হচ্ছে, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯৩৭১১০০১১, ০১৯২৭৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫। এছাড়াও, প্রাথমিক ও জরুরি চিকিৎসার জন্য এলাকাগুলোর কাছের মেডিকেল হাসপাতাল থেকে নবীন চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষা পর্যায়ের শেষ ধাপের ছাত্রছাত্রীদের প্রস্তুত রাখতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ রুহুল আমিন মল্লিক সারাবাংলাকে বলেন, ফণী এরইমধ্যেই সিভিয়ার সাইক্লোনে পরিণত হয়েছে। এর কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ১৭০ কিলোমিটারের চেয়েও বেশি এবং সমুদ্রে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ওর অবস্থান। যদি সে উড়িষ্যা উপকূলে আঘাত করে তবুও বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল অঞ্চল তার ছোবল থেকে রেহাই পাবে না। তবে, ভয়ের বিষয় এই যে, আবারও দিক পরিবর্তন করার সম্ভাবনা রয়েছে ফণীর।

২ মে বিকেল ৫টার দিকে আবহাওয়া অধিদফতরের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান সারাবাংলাকে জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণী উপকূলের আরও কাছাকাছি এসেছে। বর্তমানে এটি মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭১৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। বৃহস্পতিবার (২ মে) বিকেল ৫টার দিকেও ঘূর্ণিঝড়টি ৭৯০ কিলোমিটার দূরে ছিল।

ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে জলোচ্ছ্বাসও হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আগামীকাল সন্ধ্যার দিকে এটি বাংলাদেশ অতিক্রম করবে। সামনে অমাবস্যা থাকায় ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে জলোচ্ছ্বাসও হতে পারে।’

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরিশাল কার্যালয়ের সিনিয়র পর্যবেক্ষক প্রণব কুমার জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়টি খুব মন্থর গতিতে এগোচ্ছে এবং শক্তি সঞ্চয় করছে।

আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরাঞ্চলে এই জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের স্থলভাগ পার হওয়ার সময় চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলায় ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ এবং সেই সঙ্গে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

এর আগে, দুপুরে আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমদ এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ফণী ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে না গিয়ে সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে। ফণীর গতি বেড়ে এটি আরও শক্তিশালী হয়েছে। যদি এটি বাংলাদেশে সরাসরি আঘাত হানে তাহলে সুপার সাইক্লোনে রূপ নিতে পারে।

সারাবাংলা/জেএ/একে

ঘূর্ণিঝড় ফণী ফণী


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর