আপত্তি ওঠা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে শিগগিরই ঢাকায় বৈঠক
৩ মে ২০১৯ ২২:০৫
ঢাকা: প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ কয়েকদফায় মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের তালিকা দিয়েছে। প্রথম ধাপে প্রত্যাবাসনের জন্য ওই তালিকা যাচাই-বাছাই করে মিয়ানমার প্রায় দুই হাজার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আপত্তি তুলেছে। মিয়ানমারের যাচাই-বাছাইয়ে আপত্তি ওঠা রোহিঙ্গাদের বিষয় সমাধানে খুব শিগগিরই ঢাকায় বৈঠক করতে দুই দেশ রাজি হয়েছে।
মিয়ানমারের সৃষ্টি করা রোহিঙ্গা সংকট কাটাতে এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে গঠিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের চতুর্থ বৈঠকে শুক্রবার (৩ মে) এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকটি মিয়ানমারের নেপিডোতে অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার (৩ মে) সন্ধ্যায় এক বার্তায় এই তথ্য জানিয়েছে।
বার্তায় বলা হয়, নিরাপদ, স্বেচ্ছায় এবং টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু করতেন মিয়ানমারের প্রতি তাগিদ দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ মিয়ানমারকে বলেছে, ‘প্রত্যাবাসন এর জন্য যে সকল প্রশাসনিক এবং আইনি বাধা রয়েছে সেগুলোর সমাধান করতে হয়। এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যেন রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরে যেতে স্বেচ্ছায় সম্মত হয়।’
বাংলাদেশ মিয়ানমারকে আরও বলেছে, ‘রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। তারা যাতে স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে যায়, এ জন্য মিয়ানমারকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। কক্সবাজারের একাধিক আশ্রয় শিবিরে যে সকল মিয়ানমারের নাগরিক আশ্রয় নিয়েছে, তারা যাতে স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফেরত যায় এজন্য মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নিতে হবে। কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরগুলো সফর করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে স্বেচ্ছায় ফেরত যেতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।’
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে গত ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশের মধ্যে গত ২০১৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে গত ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে নেপিডোর সঙ্গে স্বাক্ষর করা চুক্তিতে উল্লেখ ছিল, ‘৯ অক্টোবর ২০১৬ এবং ২৫ আগস্ট ২০১৭ সালের পর যে সব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তাদেরকে ফেরত নেবে মিয়ানমার। চুক্তি স্বাক্ষরের দুই মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।’
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, চুক্তি স্বাক্ষরের প্রায় দেড় বছর পার হলেও প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। উল্টো একাধিক অজুহাতে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি এড়িয়ে গেছে নেপিডো।
জাতিসংঘসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং কানাডার সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা এরই মধ্যে জানিয়েছে যে প্রত্যাবাসনের জন্য কোনো অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেনি মিয়ানমার। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমার সরকার আন্তরিক নয়।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন শুরু হলে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাত লাখেরও বেশি মানুষ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের একাধিক শিবিরে মিয়ানমারের নাগরিক প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ বলে আখ্যা দিয়েছে। রাখাইনে সংঘঠিত সহিংসতাকে জাতিগত নিধন আখ্যা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। তুমুল সমালোচনা করছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, কুয়েত, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পুরো বিশ্ব।
সারাবাংলা/জেআইএল/একে