বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ
১৮ মে ২০১৯ ০৭:২৯
ঢাকা: বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। ২৩ বছরের এই নীতিমালা সংশোধনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় বেসরকারি খাতের অন্তর্ভুক্ত করা, স্থানীয় কোম্পানিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বীমা পলিসি বাধ্যতামূলক করা হবে। এছাড়া বিভিন্ন ট্যাক্স ও ভ্যাট বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা থাকবে সংশোধিত নীতিমালায়।
নীতিমালা সংশোধনের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে পাওয়ার সেলকে এরইমধ্যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।
ওই কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি অর্থ বিভাগ থেকে বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠানো এক চিঠিতে বেসরকারিখাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন নীতিমালা সংশোধন এবং স্থানীয় কোম্পানিতে বীমা বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে। এই চিঠি পাওয়ার পরই বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
উল্লেখ্য, বর্তমানে মোট ২০ হাজার ৭৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ৫৫ শতাংশ বেসরকারি খাত থেকে উৎপাদিত হয়।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, ‘২৩ বছরের পুরানো বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন নীতিমালা সংশোধনের কাজ আমরা শুরু করেছি। বর্তমানে বেসরকারি খাত থেকে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ আমরা পাচ্ছি। এই বেসরকারি খাতকে আরও উৎসাহিত করতে এবং বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে নীতিমালা সংশোধনের প্রয়োজন। এছাড়া বেসরকারি খাতকে শুরু উৎপাদনে নয়, সঞ্চালন ও সরবরাহ ব্যবস্থাতেও বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হবে। এসব কারণেই বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন নীতিমালা পরিবর্তন করা হচ্ছে।’
বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এই নীতিমালা সংশোধন করা হলে ইন্স্যুরেন্স নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে আর এসআরও জারি করতে হবে না। বর্তমানে বেসরকারি খাতের বড় প্রকল্পের ক্ষেত্র ইন্স্যুরেন্স করার পর এনবিআর থেকে পৃথক এসআরও জারি করতে হয়। সম্প্রতি ভারতের রিলায়েন্স নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে নির্মিতব্য এলএনজি ভিত্তিক ৭৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ভারতের একটি বীমা কোম্পানিতে ইন্স্যুরেন্স করার অনুমতি চাইলে সরকার তাতে সায় দেয়নি। রিলায়েন্সকে বাংলাদেশের স্থানীয় কোনো বীমা কোম্পানিকে ইন্স্যুরেন্স করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। বর্তমানে নীতিমালা অনুযায়ী, যে কোনো বিনিয়োগকারী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য বিদেশি বীমা কোম্পানিতে পলিসি খুলতে পারে।
জানা গেছে, নীতিমালায় বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রাখা হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন খাত ছাড়াও সঞ্চালন ও সরবরাহ খাতে বেসরকারি বিনিয়োগের বিষয়টি নতুন করে যোগ করা হবে। এরইমধ্যে বিদ্যুৎ সঞ্চালন খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ আনতে প্রাথমিকভাবে কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে মদুনাঘাট ও চট্টগ্রামের রাউজান থেকে মীরসরাই পর্যন্ত দুটি গ্রিড লাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশে প্রথমবারের মত এই দুটি লাইন হবে বেসরকারি খাতে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন একটি সন্তোষজনক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। কিন্তু সঞ্চালন ও সরবরাহ ব্যবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। তাই নীতিমালা সংশোধন করা হলে বিদ্যুতের এই দুই খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো সম্ভব হবে। আগামী তিন বছরের মধ্যে সারাদেশের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও সরবরাহ ব্যবস্থা সন্তোষজনক পর্যায়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে পাওয়ার সেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান।
সারাবাংলা/এইচএ/একে