গহীনেই মুগ্ধ সবাই
২৬ মে ২০১৯ ১৯:৪৪
ঢাকা: ঢাকা শিশু হাসপাতালের বাথরুম থেকে উদ্ধার হওয়া সেই নবজাতক গহীনকে রাখা হয়েছে আজিমপুরের ছোটমনি নিবাসের তৃতীয় তলায়। সমাজসেবা অধিদফতরের আওতাধীন এ নিবাসে যারা যে কাজেই আসছেন না কেন তারা একনজর গহীনকে দেখতে চান। কিন্তু গহীনকে রাখা হয়েছে ‘সংরক্ষিত কক্ষে’।
অফিসিয়াল সব ধাপ পার হয়ে সেখানে যাওয়ার অনুমতি সবার মেলে না, তবুও অনেকেই অফিস কক্ষে এসে জানতে চান গহীন কেমন আছে, বাচ্চাটা সুস্থ আছে তো? সবাই যেন এখনও গহীনেই মুগ্ধ— বলছিলেন ছোটমনি নিবাসে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা।
তিনি জানান, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ শিশু গহীনকে দেখতে আসেন। কেউ কেউ আবার শিশুটিকে দত্তক নিতে চান। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী এখানে থাকা শিশুদের দেখতে হলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। সেটি অনেকের পক্ষে সম্ভব না হওয়ায় মন খারাপ করেই ফিরতে হয় অনেককে।
রোববার ( ২৬ মে) আজিমপুরের ছোটমনি নিবাসে গেলে প্রধান ফটকেই দেখা হয় দুই নারীর সঙ্গে। টাঙ্গাইল থেকে তারা এসেছেন জানিয়ে বলেন, ‘গহীনের ছবি দেখেছেন টেলিভিশনে। তখন থেকেই মেয়েটার প্রতি মায়া জন্মেছে। শিশু হাসপাতালে আসতে চাইলেও নানা ঝামেলার কারণে আসতে পারিনি। আজ সময় হওয়াতে ভোরেই রওনা হই। যতদূর জানি, এসব শিশুকে দত্তক নিতে হলে আইনি প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। অনেক শিক্ষিত ও ধনী পরিবারও আদালতে আবেদন করেন। তাই আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের আশা না করাই ভালো, বলেন তিনি। বোরকার আড়ালে মুখ ঢেকে থাকলেও তার আক্ষেপ বুঝতে অসুবিধা হয় না।
কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গহীনকে ছোট নিবাসে আনার পর থেকেই এখানে দর্শনার্থীদের ভিড় বেড়েছে। কিন্তু নিরাপত্তাসহ অনেক কারণেই তাদের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয় না।’ অনেকেই হয়ত ভালো মন নিয়ে আসেন কিন্তু খারাপ মানুষের সংখ্যাও কম নয় বলেন তারা।
এখানকার সবাই যেন গহীনের ব্যাপারে একটু বেশি কনর্সান, সবাই একটু ফুসরত পেলেই গহীনকে দেখে আসেন, এখানে সবাই এখনও গহীনে মুগ্ধ বলেন তারা।
কত কত শিশুদের এখানে নিয়ে আসা হয় মন্তব্য করে একাধিক কর্মকর্তা জানান, অনেক শিশু অসুস্থ থাকে। তাদের নিয়ে চিকিৎসকের কাছে দৌড়াতে হয়। খাওয়াতে গিয়ে ঘাম ছুটে যায়। কিন্তু এই বাচ্চাটা একদম সুস্থ, স্বাভাবিক। শারীরিক কোনো অসুবিধা নেই, ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করছে, ঘুমুচ্ছে। ওকে নিয়ে বাড়তি কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।
গত ১৬ মে ঢাকা শিশু হাসপাতাল থেকে ছোটমনি নিবাসের কর্মকর্তাদের কাছে তুলে দেওয়া হয় শিশু গহীনকে। শিশু হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে গহীনকে ছোটমনি নিবাসে নেওয়া হয়।
এর দুইদিন আগে শিশু হাসপাতালের বাথরুমে কান্নার শব্দ পেয়ে তিনদিন বয়সী শিশুটিকে উদ্ধার করেন হাসপাতালের একজন কর্মচারী। এরপর থেকেই তার দেখাশোনা করে আসছিলেন শিশু হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার রাসেল মাহমুদ ও তার স্ত্রী পলি বেগম।
১০ বছর আগে এ দম্পতির বিয়ে হলেও তারা নিঃসন্তান এবং তারাই শিশুটির নাম রাখেন গহীন। শিশুটিকে দত্তক নিতেও আগ্রহী ছিলেন তারা। তবে নিয়ম অনুযায়ী সরাসরি এভাবে হাসপাতাল থেকে কোনো শিশুকে হস্তান্তরের নিয়ম নেই বলে তাকে শিশুমনি নিবাসে পাঠানো হয়েছে।
ছোটমনি নিবাসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, এখন পর্যন্ত গহীনকে নিতে তিনটি আবেদনপত্র জমা পড়েছে তাদের কাছে। হয়ত ঈদের পরেই এ সব বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
ছোটমনি নিবাসের উপ-তত্ত্বাবধায়ক জুবলী বেগম রানু বলেন, ‘বাচ্চাটার জন্য অনেকেই আসছে এখানে, সাংবাদিকরাও আসছেন। কিন্তু আমাদের এখানে যে কেউ চাইলেই ভেতরে যেতে পারবে না, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে।’
গহীন কেমন আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মেয়েটা সুস্থ আছে, ভালো আছে। আপনারা কোনো নাম রেখেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে মেহরীন বলেই ডাকছি, তবে ফাইনালি এখনও কিছু হয়নি।’
সারাবাংলা/জেএ/একে
আরও পড়ুন
শিশু গহীনকে ফেলে যাওয়া দুই নারীকে শনাক্ত করা যায়নি
আজিমপুরের ছোটমনি নিবাসে যাচ্ছে শিশু ‘গহীন’
‘গহীন’ কি সোনার মোহর?