ঢাকা-চট্টগ্রাম: পথের সময় কমাচ্ছে নতুন তিন সেতু
২৬ মে ২০১৯ ২০:১৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো: শনিবার দুপুর ২টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর সিনেমা প্যালেস থেকে ঢাকার উদ্দেশে বাস নিয়ে রওনা দেন এস আলম পরিবহনের চালক কামাল হোসেন। সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে তিনি ঢাকায় ফকিরাপুলে পৌঁছান। ঢাকায় আসতে সময় লেগেছে প্রায় পাঁচঘণ্টা। তবে ফিরতি পথে রাত ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে রওনা দিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর অলঙ্কার মোড়ে পৌঁছাতে আবার কামালের সময় লেগেছে প্রায় সাতঘণ্টা।
চালক কামাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘যাওয়ার সময় রাস্তা ফ্রি ছিল, নতুন সেতু দিয়ে এসেছি। তাই খুব সহজেই ঢাকায় ঢুকে গেছি। কিন্তু আসার সময় গাবতলী থেকে রওনা দেওয়ায় ঢাকা শহর পার হতেই শুধু সময় লেগেছে একঘণ্টার মতো। এরপর কাঁচপুর ব্রিজের কাছে ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ চলছে। সেখানেও আধাঘণ্টার ওপর জ্যামে ছিলাম। ঢাকায় এবং কাঁচপুর ব্রিজের কাছে জ্যাম না থাকলে সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রাম শহরে পৌঁছাতে পারতাম।’
সড়কপথে ঢাকা-চট্টগ্রামের দূরত্ব ২৬৪ কিলোমিটার। তিনদিন আগেও এই পথ পাড়ি দিতে গণপরিবহন ও পণ্যবাহী পরিবহনের সময় লেগেছে অন্তত ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা। কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চার লেনের দুটি সেতু খুলে দেওয়ার পর এ চিত্র পাল্টাতে শুরু করেছে। তাৎক্ষণিকভাবে পুরোপুরি সুফল পাওয়া না গেলেও যাত্রাপথ অতিক্রমের সময় কমতে শুরু করেছে।
গণপরিবহন ও পণ্যপরিবহনের সংশ্লিষ্টদের মতে, কাঁচপুর এলাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ শেষ হলে সাড়ে ৪ থেকে সর্বোচ্চ ৫ ঘণ্টায় ঢাকা-চট্টগ্রামে পৌঁছানো যাবে। তবে নতুন দু’টি সেতু চালুর পর ঢাকা-চট্টগ্রাম যাত্রাপথে সময় কী পরিমাণ কমছে, সেটা নির্ধারণে এক সপ্তাহ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
শনিবার (২৬ মে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা ও গোমতী নদীর ওপর নির্মিত সেতু দুটির উদ্বোধন করেন। খুলে দেওয়ার পর সেতু দুটিতে যান চলাচল শুরু হয়। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে খুলে দেওয়া হয় নবনির্মিত কাঁচপুর সেতু।
সংশ্লিষ্টদের মতে, নবনির্মিত তিনটি সেতুই চার লেনের। আগে সেতুগুলো ছিল দুই লেনের। চার লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক গিয়ে গাড়ি সেতুর প্রবেশপথ পর্যন্ত পৌঁছে যানজটে আটকা পড়ত।
নগরীর সিনেমা প্যালেস এলাকায় এস আলম কাউন্টারের ব্যবস্থাপক জয়নাল আবেদিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগে তো চট্টগ্রাম থেকে বাস ছাড়লে কখন গিয়ে ঢাকায় পৌঁছাবে তার কোনো গ্যারান্টি ছিল না। তিনটি সেতুর মুখেই যানজটে পড়তে হত। সময় লাগত ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা। কখনো তার চেয়েও বেশি। এখন সময় অনেক কমবে। যদিও এখনও ৬-৭ ঘণ্টা লাগছে, আস্তে আস্তে সেটা সাড়ে চার থেকে ৫ ঘণ্টায় নেমে আসবে।’
বাসচালক কামাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সেতু দুটি খুলে দেওয়ায় ঈদের সময় যাত্রীদের জন্য খুব বেশি সুবিধা হয়েছে। আমাদের জন্য সুবিধা হয়েছে। আমরা তো সরকারের কাছে বেশি কিছু চাই না। সময় কম লাগলে আমরা অন্তত একটা ট্রিপ বেশি চালাতে পারব। আমাদের ইনকামও বাড়বে।’
নগরীর দামপাড়ায় সৌদিয়া পরিবহনের এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘সেতুর সুফল পুরোপুরি পেতে একটু সময় লাগবে। এখন রমজান, সামনে ঈদ। এমনিতেই গাড়ির চাপ আছে। অন্তত এক সপ্তাহ গাড়ি চালানোর পর বোঝা যাবে, আসলে আমরা কত কম সময়ের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রামে পৌঁছাতে পারছি। তবে সেতুগুলো যদি ঈদের আগে খুলে না দিত, মানুষের ভোগান্তি খুব বেশি হত। নতুন সেতুগুলো খুলে দেওয়ায় আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ।’
সুফল পাওয়া যাচ্ছে পণ্য পরিবহনেও। নগরীর কদমতলীর পরিবহন ব্যবসায়ী সুফিউর রহমান টিপু সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, শনিবার রাত ৮টায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে তার দু’টি কাভার্ড ভ্যান পণ্য নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। আটঘণ্টার মধ্যে ভোর ৪টার দিকে সেগুলো ঢাকায় পৌঁছে।
টিপু সারাবাংলাকে বলেন, ‘এমনিতে আমাদের একটি কাভার্ডভ্যান বন্দর থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ১২ ঘণ্টা। কারণ, পণ্যবাহী বড় গাড়ি, ড্রাইভাররা কিছুক্ষণ রেস্ট নেন, রাস্তায় তেল নিতে হয়। নানাকারণে যাত্রীবাহী গাড়ির চেয়ে পণ্যবাহী গাড়িতে সময় বেশি লাগে। কিন্তু এখন ৮-৯ ঘণ্টায় কাভার্ড ভ্যান বন্দর থেকে ঢাকায় পৌঁছে যাচ্ছে।’
আন্তঃজেলা পণ্য পরিবহনকারী ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক টিপু সারাবাংলাকে বলেন, ‘তিনটি নতুন সেতু হওয়ায় আমাদের পণ্য পরিবহনে সময় কমেছে অন্তত তিনঘণ্টা। সরকারকে ধন্যবাদ জানাই এ জন্য যে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে সংযোগকারী সেতুগুলো নতুনভাবে নির্মাণের সিদ্ধান্ত দ্রুত তারা বাস্তবায়ন করেছে।’
সারাবাংলা/আরডি/একে