Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গ্যাসের দাম বাড়িয়ে ৯ হাজার কোটি টাকা তোলার টার্গেট


৩০ জুন ২০১৯ ২০:৩১

ঢাকা: গ্যাসের দাম বাড়ানোর মাধ্যমে ভোক্তাদের কাছ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৯ হাজার কোটি টাকা তুলবে সরকার। ভোক্তাদের কাছ থেকে পাওয়া এই টাকা দিয়ে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানির ফলে সৃষ্ট আর্থিক ঘাটতির ৪৪ শতাংশ মেটানো হবে। আর ঘাটতির বাকি ৫৬ শতাংশ বাজেট বরাদ্দ ও জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল থেকে মেটানো হবে।

মূলত এলএনজি বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রির কারণে ভোক্তা পর্যায়ে ফের গ্যাসের দাম বাড়ানো হলো। প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের বর্তমান গড় মুল্য ৭ টাকা ৩৮ পয়সা থেকে ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়িয়ে ৯ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়েছে। এ হিসেবে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য গড়ে দুই টাকা ৪২ পয়সা বেড়েছে। ১ জুলাই থেকে নতুন এ মূল্য কার্যকর করা হবে।

বিজ্ঞাপন

এলএনজি আমদানির কারণে আগামী অর্থবছরে এই খাতে আর্থিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১৮ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। এই ঘাটতি মেটাতে শুধু গ্রাহক থেকে তোলা হবে ৮ হাজার ৬২০ কোটি টাকা।

ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ছাড়া অন্যান্য শ্রেণিতে ২২ থেকে ৬৪ শতাংশ গ্যাসের দাম বেড়েছে। সার কারখানায় ব্যবহৃত গ্যাসের দাম সবোর্চ্চ ৬৪ শতাংশ বেড়েছে। গৃহস্থালির ডাবল বার্নার চুলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম ২২ শতাংশ বেড়েছে। মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণায় বিদ্যমান নূন্যতম চার্জ প্রত্যাহার করে নিলেও গৃহস্থালি ছাড়া অন্যান্য শ্রেণির গ্রাহকদের প্রতি ঘনমিটার মাসিক অনুমোদিত লোডের বিপরীতে ১০ পয়সা হারে ডিমান্ড চার্জ আরোপ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: গ্যাসের দাম বেড়ে এক চুলায় ৯২৫, দুই চুলায় ৯৭৫ টাকা

রোববার (৩০ জুন) কারওয়ানবাজারে বাংলাদেশ রেগুলেটরী কমিশন (বিইআরসি) এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দাম মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম। এ সময় কমিশনের অন্য তিন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণায় কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘মূলত এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রির কারণে সৃষ্ট আর্থিক ঘাটতি মেটাতেই এই দাম বাড়ানো হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা তুলে ধরে চেয়ারম্যান বলেন, ‘গ্যাসের উৎপাদন পর্যায়ে মূল্য নির্ধারণ করে নিয়ন্ত্রণও করে সরকার। এখানে কমিশনের কিছু করার থাকে না। কমিশনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘গ্যাস খাতের ক্রান্তিকাল চলছে। চাহিদা অনুযায়ি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। গ্যাসের উৎপাদন, এলএনজি আমদানি, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে এই দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে জাতীয় গ্রিডে ৬১০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। আগামী অর্থ বছরে এলএনজি সরবরাহ এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট হবে।’

তবে গ্যাস খাতে সিস্টেম লসের নামে চুরি, নির্দেশ দেওয়ার পরও বিতরণ কোম্পানিগুলো ইলেট্রনিক মিটার না বসানো, আর্ন্তজাতিক বাজার থেকে কম দামে এলএনজি ক্রয় না করাসহ নানা অনিয়ম নিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে সঠিক উত্তর দিতে পারেনি কমিশনের সদস্যরা। এ বিষয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা এ বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। এবারের আদেশে এগুলো এড্রেস করা হয়েছে। নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

গ্যাসের দাম কোন শ্রেণিতে কত বাড়লো

সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে। এই শ্রেণিতে মোট গ্যাসের ৪১ দশমিক ৫০ শতাংশ ব্যবহার হয়। বিদ্যুতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের বর্তমান দাম ৩ টাকা ১৬ পয়সা থেকে ৪১ শতাংশ বাড়িয়ে ৪ টাকা ৪৫ পয়সা করা হয়। এর ফলে এ শ্রেণিতে রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে এক হাজার ৮৬২ কোটি টাকা।

সার উৎপাদনে মোট গ্যাসের ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ ব্যবহার হয়। বর্তমান মূল্য ঘনমিটার প্রতি দুই টাকা ৭১ পয়সা থেকে ৬৪ শতাংশ বাড়িয়ে ৪ টাকা ৪৫ পয়সা করা হয়েছে। এতে রাজস্ব বাড়বে ৩৪৫ কোটি টাকা।

শিল্পে মোট গ্যাসের ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ ব্যবহার হয়। এই শ্রেণিতে বর্তমান মূল্য ঘনমিটার প্রতি ৭ টাকা ৭৬ পয়সা থেকে ৩৮ শতাংশ বাড়িয়ে ১০ টাকা ৭০ পয়সা করা হয়েছে। এ শ্রেণিতে রাজস্ব বাড়বে এক হাজার ৭১৮ কোটি টাকা।

শিল্প কারখানায় উৎপাদিত ক্যাপটিভ পাওয়ারে মোট গ্যাসের ১৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ ব্যবহার করা হয়। এই শ্রেণির গ্রাহকদের জন্য বর্তমান মূল্য ঘনমিটার প্রতি ৯ টাকা ৬২ পয়সা থেকে ৪৪ শতাংশ বাড়িয়ে ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ শ্রেণিতে রাজস্ব বাড়বে দুই হাজার ৪৫০ কোটি টাকা।

চা বাগানে মোট গ্যাসের শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার হয়ে থাকে। এই শ্রেণিতে ঘনমিটার প্রতি বর্তমান দাম ৭ টাকা ৪২ পয়সা থেকে ৪৪ শতাংশ বাড়িয়ে নতুন দাম ১০ টাকা ৭০ পয়সা করা হয়েছে। এতে করে রাজস্ব ১০ কোটি টাকা বাড়বে।

বাণিজ্যিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে মোট গ্যাসের শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ ব্যবহার করা হয়। এই শ্রেণির গ্রাহকরা বর্তমানে ঘনমিটার প্রতি ১৭ টাকা ৪ পয়সা পরিশোধ করলেও মুল্য বৃদ্ধির পর পরিশোধ করতে হবে ২৩ টাকা। এই শ্রেণিতে দাম বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। দাম বৃদ্ধির কারণে রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে ৬২ কোটি টাকা। তবে বাণিজ্যিক গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প গ্রাহকদের গ্যাসের দাম বাড়েনি। বর্তমান দাম ঘনমিটার প্রতি ১৭ টাকা ৪ পয়সাই থাকছে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে মোট গ্যাসের শূন্য দশমিক ৪৬ শতাংশ ব্যবহৃত হয়।

মোট গ্যাসের সাড়ে ৪ শতাংশ গ্যাস সিএনজিতে ব্যবহার হয়। প্রতি ঘনমিটার সিএনজির মূল্যহারের মধ্যে ফিড গ্যাসের মূল্যহার ৩৫ টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তবে অপারেটর মার্জিন ৮ টাকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

গৃহস্থালিতে মোট গ্যাসের ১৪ শতাংশ ব্যবহার করা হয়। এই শ্রেণির গ্রাহকদের মধ্যে মিটার ব্যবহারকারীরা বর্তমানে ঘনমিটার প্রতি ৯ টাকা ১০ পয়সার জায়গায় ১২ টাকা ৬০ পয়সা পরিশোধ করতে হবে। মিটার ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে ৩৮ শতাংশ মুল্যবৃদ্ধি হয়েছে। এছাড়া সিঙ্গেল বার্নার ৭৫০ থেকে ২৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৯২৫ টাকা এবং ডাবল বার্নারে বর্তমান মুল্য ৮০০ টাকা থেকে ২২ শতাংশ বাড়িয়ে ৯৭৫ টাকা করা হয়েছে। এর ফলে ১ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা রাজস্ব বাড়বে।

যেভাবে আর্থিক ঘাটতি মেটানো হবে

বেশি দামে এলএনজি কিনে কম দামে বিক্রির কারণে আগামী অর্থবছরে আর্থিক ঘাটতি দাঁড়াবে ১৮ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। এই ঘাটতি মেটাতে জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল থেকে দুই হাজার ৪২০ কোটি টাকা, সরকার থেকে ৭ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা এবং গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত রাজস্ব আসবে ৮ হাজার ৬২০ কোটি টাকা।

সারাবাংলা/এইচএ/একে

গ্যাস গ্যাসের দাম প্রাকৃতিক গ্যাস বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরী কমিশন বিইআরসি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর