আমাদের ভিশন ২০২১ এ শেষ নয়, প্লানিং আরও ১৫ বছর: জয়
১০ জুলাই ২০১৯ ১৮:৪০
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিখাত বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে বলেছেন, আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিশনটি শুধু ২০২১ সালে শেষ না। আমরা প্লানিং করছি আগামী ১৫ বছর। আর আমরা যদি দেশের মানুষকে এই সুবিধা এই উন্নয়ন দিয়ে যেতে পারি, আমার আশা আছে, বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে আগামীতেও ভোট দিয়ে ক্ষমতায় রাখতে পারে।
বুধবার (১০ জুলাই) দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ: সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রধান আলোচক হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয় একথা বলেন।
একাদশ জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্যদের ডিজিটাল প্রযুক্তিতে দক্ষতা বৃদ্ধিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের আইসিটি অবকঠামো, মানব সম্পদ এবং প্রযুক্তি দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় অনুষ্ঠিত হয়।
সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খানের সভাপতিতে কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিশেষ অতিথি ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া এবং জুনায়েদ আহমেদ পলকসহ অন্যরা।
সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘আমাদের বর্তমান অগ্রগতি অনেকটাই এগিয়ে গেছে। যখন ২০০৮ সালের ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং ভিশন ২০২১’র স্বপ্ন আমরা প্রকাশ করি তখন বাংলাদেশে ডিজিটাল বলতে কিছুই ছিল না।’
বিগত দুই মেয়াদের কথা তুলে জয় আরও বলেন, ‘এই দশ বছর এখন মনে হয় অনেক সময়। কিন্তু এত অল্প সময়ের মধ্যে এতকিছু ডিজিটাল হয়ে যাবে, ডিজিটালাইজড হয় এটা কিন্তু বিশ্বের খুব অল্প দেশই করতে পেরেছে। আমরা যেখানে দশ বছরে করেছি, খুব কম দেশ আছে এতো অল্প সময়ের মধ্যে এতো দ্রুত কাজ এগিয়ে নিতে পেরেছে। আমরা থ্রি-জি নয়, ফোরজিতে চলে এসেছি। আর আমাদের পরিকল্পনা আছে, সারা বিশ্বে যখন ফাইভ জি গ্লোবাল হবে আমরা তার সঙ্গে সঙ্গেই করব।’
দশ বছর আগে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে দেশের কোথায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হত না। কিন্তু এই দশ বছরের প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটার ফাইবার বসিয়েছি এবং প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ দিয়ে দেব বলেও জানান তিনি।
এছাড়াও এরইমধ্যে সরকারি সেবার ক্ষেত্রে তিনশ’র ওপর সেবা ডিজিটাল হয়ে গেছে দাবি করেন সজীব ওয়াজেদ জয়।
সংসদ সদস্যদের প্রতি অনুরোধ রেখে জয় বলেন, ‘এই পয়েন্টটা মাথায় রাখবেন। আগে কীভাবে কী প্রসেসে এসেছে, কী ডকুমেন্ট প্রয়োজন সেটাই করতে হবে সেটা কিন্তু না। কারণ এখন অনেক কিছু ডিজিটালাইজড হয়ে গেছে। যেসব কাগজপত্রের প্রয়োজন নেই, বাতিল করে দেন। আপনারা নতুন পদ্ধতিতে, ডিজিটাল পদ্ধতিতে যে তথ্য আমাদের সকলের ডাটাবেজে আছে সেগুলো ব্যবহার করে যাতে প্রজেক্টটা হয়, সেই জায়গাতে নজর রাখবেন।’
এতে প্রথম সুবিধা হচ্ছে, সময় বেঁচে যাচ্ছে। আগে একটা কাজ করতে হয়ত দুই সপ্তাহ লাগত। এখন কিন্তু সেটা ২০ মিনিটে করা যায় দাবি করে মোবাইলের মাধ্যমে এ প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে মাধ্যমে টাকা লেনদেনের বিষয়টি উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরেন জয়।
সরকারি সেক্টরে ই-ফাইলিং সিসেটমের সুবিধার কথা তুলে এমপিদের প্রতি অনুরোধ করে জয় বলেন, ‘আমরা ই-ফাইলিং সিস্টেম বানিয়েছি। এটা কিন্তু বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। যত ডিজিটাল সিস্টেম, ই-ফাইলিং সিস্টেম দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ তাতে আমাদের, আপনাদের, দেশের ইফিসিয়েনসি বাড়ছে। তাতে কিন্তু আমাদের অর্থনীতির ওপর একটা ডাইরেক্ট প্রভাব পড়বে। আমরা যদি ইফিসিয়েনসিটা বাড়াতে পারি তাহলে নাম্বার ওয়ানে চলে যেতে পারব। আমাদের গ্রোথ রেট এখন ৮ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নিয়ে যাব। শুধুমাত্র যদি ইফিসিয়েনসি বাড়াতে পারি। আর ডিজিটাল পদ্ধতিতে সেটা সম্ভব, সেটা হচ্ছে। এটাকে আরও আমাদের দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
সরকারি সব কিছু ডিজিটালাইজড করার জন্য আমাদের দুর্নীতির সূচক আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। আমরা কিন্তু আসলেই দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ বানাতে পারি ডিজিটাল পদ্ধতিতে। সব সরকারি সিস্টেম ডিজিটালাইজড হলে দুর্নীতিটা সুযোগ পাবে না। বেসরকারি দুর্নীতি সেটা ভিন্ন ব্যাপার বলেও জানান জয়।
ডিজিটাইলেজশনের ফলে নাগরিক জীবনে সুযোগ-সুবিধা ত্বরান্বিত হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে জয় বলেন, ‘প্রতিটি ক্ষেত্রে যদি হয়ে যায় তখন আমাদের দেশবাসীর জন্য আমাদের ভাই-বোনদের জীবন আরও সহজ হবে। তারা পরিবারকে আরও সময় দিতে পারবে। তাদের জীবন আরামদায়ক হবে, এটিই হলো আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ। আমাদের সরকারের স্বপ্নই হচ্ছে দেশের মানুষের জন্য দেশের মানুষের জীবনকে উন্নয়ন করা।’
টানা মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার ফলে অধিকাংশ সংসদ সদস্যরাই তার পরিচিত উল্লেখ করে জয় বলেন, ‘গত দশ বছর আমরা সুযোগ পেয়েছি, বাংলাদেশের মানুষ আমাদেরকে ভোট দিয়ে সুযোগ দিয়েছে। দেশের জন্য করা, দেশে উন্নয়ন করা, একটি পরিবর্তন আনা, একটি বিপ্লব আনা; যেটা বাংলাদেশের মানুষ ভাবতেও পারেনি। এই যে ডিজিটাল বাংলাদেশ, পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, মেট্রোরেল, ফোরজি এটা কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ কল্পনাই করতে পারেনি যে এতো অল্প সময়ের মধ্যে হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘দশবছর আগে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল এগুলো তো দূরের কথা, একটাই দাবি ছিল বিদ্যুৎ বিদ্যুৎ। এখন কিন্তু বিদ্যুৎ নিয়ে কোনো কথাই বলে না। অথচ আওয়ামী লীগ সরকার যখন প্রথমবার ক্ষমতায় আসল তখন সবাই বলেছিল, বিদ্যুতের এত জটিল সমস্যা, এটা কোনো সরকার সমাধান করতে পারবে না। দশ বছর তো দূরের কথা, আমরা আমাদের প্রথম টার্মেই করে দিয়েছি।’
ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রা শুরু করার প্রেক্ষাপট তুলে জয় বলেন, দেশকে কিভাবে ডিজিটালাইজড করতে হয়, বিশেষ করে অল্প সময়ের মধ্যে; এই অভিজ্ঞতা কিন্তু আমাদের কারও ছিল না। বিশ্বেই কারও ছিল না। আমরা কিন্তু নিজেদের মতো করেছি। বাইরে থেকে পরামর্শক এনে তাদের প্ল্যান অনুযায়ী করিনি। এটি সম্পূর্ণভাবে নিজেদের পরিকল্পনায় করা, নিজেদের প্লানে করা।’
ডিজিটালাইজেশনে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে জয় আরও বলেন, ‘এই পর্যন্ত আমরা তিনশোর ওপর সরকারি সেবাকে ডিজিটাইজড করেছি। আমরা পরিকলপনা মোতাবেক স্টাডি করে দেখেছি যে, আমাদের প্রায় দেড় হাজারের মত সরকারি সেবা আছে। প্রায় বারোশ’র মত বাকি আছে। তবে এখন যেহেতু ক্রিটিক্যাল কিছু সিস্টেম অলরেডি হয়ে গেছে। যেমন আমাদের ন্যাশনাল আইডি সিস্টেম। নিজস্ব ডেটা সেন্টার। এটার উপর বেইজ করে কিন্তু এখন আমরা অন্যান্য সার্ভিসগুলো ডিজিটালাইজড করা আরও অনেক সহজ হয়ে গেছে।’
সংসদ সদস্যদের সহযোগিতা কামনা করে জয় বলেন, ‘ডেটার নেটওয়ার্কটাই হল আইসিটির রাস্তা। এই রাস্তার উপরেই কিন্তু আইসিটি চলে। বিভিন্ন সংসদীয় এলাকায় টেলিকমিউনিকেশনের কাজ করে যাচ্ছি। ফোরজি এনেছি। দশ বছর আগে তো আইসিটি মন্ত্রণালয় বলে কিছুই ছিল না। তবে আমাদের টেলিকমিউনিকেশন্স কিন্তু এখনও সেই ১০/২০ বছর আগের আইনে চলছে। এটা এখন আমাদের নতুন করে মডেল পদ্ধতিতে আমি উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা প্রায় ১৫ বছরের একটা পরিকল্পনা করেছি। সম্পূর্ণ নতনু করে একটা টেলিকমিউনিকেন্স ফর্মস তৈরি করব। যাতে ভবিষ্যতে জন্য একটা সুন্দর নতুন টেলিকমিউনেকশন ফর্মস হয়ে দাঁড়ায়।’
চীফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী লিটনের বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে জয় বলেন, চীপ হুইপ একটা কথা বললেন, ‘যেটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। যে অগ্রগতিতে আমরা এগিয়েছি, এখান থেকে যদি আমাদের নেক্সট লেভেলে যেতে হয়, আমাদের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে শিক্ষা। আমরা যদি তরুণ প্রজন্ম ভবিষ্যত প্রজন্মকে ভাল কোয়ালিটি শিক্ষা দিতে পারি, তারা যখন সারাবিশ্বের সঙ্গে কম্পিটিশন করে বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। আমরা আর কতদিন বাঁচব। তারাই হচ্ছে বাংলাদেশর ভবিষ্যৎ। তরুণরা আমাদের ছাত্রছাত্রীরা তাদের প্রতিও আমাদের এখন আরও বেশি নজর দিতে হবে। এই অনুরোধ আপনাদের কাছে।’
আমাদের নিজেদের একটু মাইন্ড সেট পরিবর্তন করা দরকার দাবি করে জয় বলেন, ‘তরুণ প্রজন্ম এবং সিনিয়রদের মধ্যে একটা মাইন্ড সেটের ভাগ থাকে। যেটাকে জেনারেশন গ্যাপ বলা হয়। এটা বাস্তবতা, প্রত্যেক জেনারেশনে থাকবে। আমি অনুরোধ করব, মডার্ন পদ্ধতিতে নিজেদের চিন্তাধারা, ভয় এগুলো ছেড়ে যে সকল দেশ দ্রুত এগিয়ে গেছে, (সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়া) তাদের কাছ থেকে উদাহরণ নিয়ে আমরা নিজেদের নিয়ম-আইন নীতিমালা একটু দ্রুত পরিবর্তন করি, যাতে আরও বেশি আরও দ্রুত এগিয়ে যেতে পারি।’
কর্মশালার বিষয়ে সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে জয় বলেন, আমার যেটি বলার ছিল, এই যে আমাদের স্বপ্ন, আমাদের কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিশনটি শুধু ২০২১ সালে শেষ না। আমরা প্লানিং করছি আগামী ১৫ বছর। আর আমরা যদি দেশের মানুষকে এই সুবিধা এই উন্নয়ন দিয়ে যেতে পারি, আমার আশা আছে যে, বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় রাখতে পারে।
‘তাই আসেন একসাথে আমরা বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ করেছি, ভবিষ্যতে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করি।’
সারাবাংলা/এনআর/একে