কৃষিজমি রক্ষায় উপজেলাভিত্তিক মাস্টারপ্ল্যান চাইলেন প্রধানমন্ত্রী
১৩ জুলাই ২০১৯ ১৬:৪৭
ঢাকা: কৃষিজমি রক্ষায় দেশের যত্রতত্র দালানকোঠা নির্মাণে উপজেলাভিত্তিক মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করতে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (১৩ জুলাই) সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শাপলা হলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আয়োজিত ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান-২০১৯’ উপলক্ষে তিনি এসব কথা বলেন।
নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পক্ষে সিনিয়র সচিব ও সচিবরা ২০১৯-২০ অর্থবছরের কর্মসম্পাদন চুক্তিতে সই করে প্রধানমন্ত্রীর হাতে এই চুক্তিপত্র তুলে দেন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চালু হবার পর এবার ষষ্ঠবারের মতো এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হল।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির মাধ্যমে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। এরই অংশ হিসাবে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির বাস্তবায়নে সফলতার স্বীকৃতিস্বরূপ ১০টি মন্ত্রণালয়-বিভাগকে সম্মাননাপত্র প্রদান করা হয়।
সার্বিক মূল্যায়নে বিদ্যুৎ বিভাগ প্রথম স্থান অর্জন করে। আর জাতীয় শুদ্ধাচার চর্চার জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগকে পুরস্কৃত করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের একটা ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতা আছে। বিশাল জনসংখ্যা। এই মানুষগুলোকে একটা চমৎকার জীবন দিতে হবে। তাদের উন্নত করতে হবে। কিন্তু সে উন্নয়নটা শুধু শহরকেন্দ্রিক বা রাজধানী কেন্দ্রিক না। যেন গ্রাম থেকে উঠে আসে। তৃণমূল থেকে যদি আমরা উন্নয়ন করতে না পারি তাহলে সাফল্য আসবে না, অহেতুক রাজধানীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। গ্রাম থেকে শহরে আসার যে একটা প্রবণতা এটা যেমন বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি গ্রামে কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক সুবিধা এবং নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।’ যে কারণে আমরা ঘোষণা দিয়েছি, আমার গ্রাম আমার শহর। যাতে গ্রামে বসে শহরে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পায় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তৃণমূল পর্যন্ত নাগরিক সুযোগসুবিধা বৃদ্ধির বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষগুলোকে সকল নাগরিক সুবিধা দিতে চাই, যাতে করে তাদেরকে গ্রাম থেকে শহরে এসে ভিড় করতে না হয়। নিজের গ্রামেই সব ধরনের আধুনিক সুযোগ সুবিধা তারা উপভোগ করতে পারবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে একটা সমস্যা হচ্ছে, গ্রামে। বিভিন্নভাবে খবর নিলাম এবং কালকে (১২ জুলাই) আমাদের উপদেষ্টা পরিষদ ও ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং ছিল। আমরা আটটা টিম করে আটটা বিভাগে পাঠিয়েছিলাম, দেশের অবস্থা দেখতে। এখানে আমাদের বোধহয় একটা কাজ করা খুবই জরুরি, উন্নয়নের স্বার্থে। একটা হচ্ছে, আমাদের কৃষি জমি বাঁচানোর জন্য একশটা অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। আর মানুষের এখন একটা আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সকলের একটা প্রবণতা বেড়ে গেছে, যার যেখানে জমি আছে, সেখানেই একটা দালানকোঠা তৈরি করছে। অনেক সময় কৃষি জমির ওপরও দালান কোঠা তৈরি হচ্ছে। এই জায়গায় আমার মনে হয়, একটা নীতিমালা, একটা নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার এবং একটা মাস্টারপ্ল্যান থাকা দরকার।’
‘আমাদের এ দিকটা একটু দেখা উচিত। কিভাবে আমরা আমাদের কৃষি জমিগুলোকে রক্ষা করব। আমাদের পরিবেশ রক্ষা করব, প্রতিবেশ রক্ষা করব। আবার পাশাপাশি উন্নয়নটা যাতে হয় এবং সেই উন্নয়নটা যাতে পরিকল্পিতভাবে হয়। আর যেখানে সেখানে ঘরবাড়ি এভাবে যদি হতে থাকে, তাহলে আমাদের যেমন জমিও নষ্ট হবে, আবার তাদের জন্য নাগরিক সুবিধা দেওয়াটাও একটু কঠিন হয়ে যাবে। এই বিষয়টা আমাদের চিন্তা করতে হবে এবং ভাবতে হবে। তাই প্রত্যেকটি উপজেলাভিত্তিক একটা মাস্টারপ্ল্যান করা, কোথায় বসতবাড়ি হবে, কোথায় স্কুল হবে? যেগুলো হয়ে গেছে, হয়ে গেছে।’ তারপরও আমাদের যতদূর সম্ভব একটু গুছিয়ে নেওয়া এবং মানুষকে বোঝানো দরকার বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কারী মো. আবুল কামাল আজাদ। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন উপদেষ্টারা।
অনুষ্ঠানে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির বাস্তবায়নে বিদ্যুৎ বিভাগ প্রথম স্থান অর্জন করার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আহমদ কায়কাউস বক্তব্য রাখেন।
সারাবাংলা/এনআর/এমআই
কৃষি জমি প্রধানমন্ত্রী বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি মাস্টারপ্ল্যান শেখ হাসিনা