জাতীয় সংকটে মাঠে নেই ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’
২৫ জুলাই ২০১৯ ০৮:০৮
ঢাকা: ডেঙ্গু, গুজব, গণপিটুনি, শেয়ারবাজারে ধস, প্রিয়া সাহার দেশবিরোধী বক্তব্য ও বন্যাসহ চলমান জাতীয় সংকটে কোনো তৎপরতা নেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের। প্রধান দুই শরিক ‘বিএনপি’ ও ‘গণফোরাম’ দলীয় ব্যানারে বন্যা দুর্গতদের মাঝে সীমিত আকারে ত্রাণ তৎপরতা চালানোর উদ্যোগ নিলেও ফ্রন্টের ব্যানারে নেই কোনো কর্মসূচি।
জাতীয় সংকট নিরসন বা মোকাবিলায় অন্য দুই শরিক ‘নাগরিক ঐক্য’ ও ‘জেএসডি’র দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা নেই। তবে ‘ঐক্যফ্রন্টের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে’ ব্যক্তিগত ও দলীয় উদ্যোগে বন্যা দুর্গত এলাকায় মাঝে মাঝে ঢুঁ মারছেন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের ৭৫ দিন আগে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠন করা হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ‘বিএনপি’, ‘গণফোরাম’, ‘জেএসডি’, ‘বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ’ ও ‘নাগরিক ঐক্য’ নিয়ে গঠিত এই ফ্রন্ট নির্বাচনের পর ১২০ দিন সক্রিয় ছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে একেবারেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। এই নিষ্ক্রিয়তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সম্প্রতি ড. কামাল হোসেনে বলেন, ‘ওইটা তো একটা রাজনৌতিক জোট ছিল। জাতীয় ইলেকশনকে সামনে রেখে ওটা করা হয়েছিল। বন্যাসহ চলমান জাতীয় সংকট নিরসনে জনগণের ঐক্য গড়ে তোলা প্রয়োজন।’
তবে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে জোটের অন্যতম শরিক দল নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বুধবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘উনি কী বুঝে এমন বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা আমি বুঝতে পারছি না। কেবলমাত্র নির্বাচনের জন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছিল— এ কথাটা ঠিক নয়। সাত দফার ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছিল। এর মধ্যে অন্যতম ছিল গণতন্ত্রের মুক্তি।’
রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, ড. কামাল হোসেনের এই বক্তব্যে প্রমাণ হয় গত বছর ১৩ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ছিল মূলত নির্বাচনী জোট। নির্বাচনে হারার পর এই জোটের প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করছেন না এর উদ্যোক্তরা। বরং এই জোটকে এখন বোঝা মনে করছেন তারা। ফলে দেশজুড়ে ডেঙ্গুজ্বর ভয়াবহ আকার ধারণ করে হাজার হাজার লোক আক্রান্ত এবং বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হলেও এ ব্যাপারে জোরালো কোনো বক্তব্য নেই তাদের। এছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করার মতো কোনো কর্মসূচি এমনকি হতাহতদের ব্যাপারে কোনো শোকবাণীও দেয়নি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। অথচ নির্বাচনের আগে জোটের শীর্ষ নেতারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ‘জাতির মুক্তির সনদ’ হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন।
নির্বাচনের পর সুবর্ণচরে নির্যাতিত গৃহবধূকে দেখতে যাওয়া, সিলেটে নিহত ছাত্রদলনেতার স্বজনকে সান্ত্বনা দিতে যাওয়া, কুমিল্লায় ক্ষতিগ্রস্থ কর্মী-সমর্থকদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা দিতে যাওয়ার মতো কর্মসূচি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জোট থেকে নির্বাচিত বিএনপি ও গণফোরামের আটজন সংসদ সদস্য শপথ নেওয়ায় অন্য তিন শরিক জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। অন্যদিকে নির্বাচনের পর বিএনপির বড় একটি অংশ জোটের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করেছে। সর্বশেষ বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ঘোষণা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সে কারণেই চলমান জাতীয় সংকট নিয়ে এক মঞ্চে দাঁড়াতে পারেনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
ছোট-বড় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ডেঙ্গু, গুজব, গণপিটুনি, শেয়ারবাজারে ধস, প্রিয়া সাহার দেশবিরোধী বক্তব্য ও বন্যাসহ চলমান জাতীয় সংকট নিয়ে স্বোচ্চার হলেও দেশের সর্ববৃহৎ বিরোধী জোট ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ কোনো আওয়াজ তুলছে না। বরং জোটের শীর্ষ নেতারা বলার চেষ্টা করছেন- জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ছিল শুধুই নির্বাচনী জোট।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাহমুদুর রহমান মান্না সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি বিদেশে ছিলাম। বেশি কিছুদিন হলো জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বসা হয় না। চলমান সংকট নিয়ে কেন কর্মসূচি দেওয়া হয়নি, সেটা আমি বলতে পারব না। একসঙ্গে বসলে আবার হয়তো কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হবে।’
‘জাতীয় সংকটে কেন মাঠে নেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট?’- এমন প্রশ্নের জবাবে ফ্রন্টের অন্যতম উদ্যোক্তা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান দুই দল বিএনপি ও গণফোরাম। আর এই দুই দলের পক্ষে কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করছেন ড. মঈন খান ও অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন। আমারও প্রশ্ন কেন মাঠে নেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট?’
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম
আরও পড়ুন
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট: অফিস নেই! ঐক্য আছে?