Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বন্ধের পথে মতিঝিল-আব্দুল্লাহপুর রুটের এসি বাস


২৬ জুলাই ২০১৯ ০৮:০৬

ঢাকা: রাজধানীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) বাস চলাচল করে শুধুমাত্র মতিঝিল-আব্দুল্লাহপুর রুটে। এই বাস সার্ভিস নিয়ে যাত্রীদেরও আগ্রহ বেশি। অফিসগামী যাত্রীসহ অনেকেই ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার বাদ দিয়ে এই বাসে প্রতিদিন যাতায়াত করেন। কিন্তু বাস বরাদ্দে অনিয়মে বিআরটিসির এই রুট এখন বন্ধের পথে।

শুরুতে মতিঝিল-আব্দুল্লাহপুর রুটে প্রায় ৩০টি এসি বাস চলাচল করলেও এখন তা কমে মাত্র ৮টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। জোয়ারসাহারা ডিপোর তথ্যে দেখা গেছে, বিআরটিসির বাসগুলো মধ্যে সবচেয়ে লাভজনক ছিল আব্দুল্লাহপুর-মতিঝিল রুটের এসি বাস। বিশেষ করে গরমে এই বাসে কোন সিট ফাঁকা পাওয়া যেত না। এমনকি দাঁড়িয়েও বহুযাত্রী এই বাসে যাতায়াত করেন।

বিজ্ঞাপন

বিআরটিসির এসি বাসের যাত্রী মশিউর রহমান জানালেন, উত্তরা থেকে তিনি নিয়মিত মতিঝিল অফিসে যাতায়াত করেন। কিন্তু বিআরটিসির বাস সংকটের কারণে এখন তাকে বাড্ডা রোডের বেসরকারি পরিবহনের বাসে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

মশিউর রহমান আরও জানান, বছরখানেক আগেও আধঘণ্টা পর পর মতিঝিল-আব্দুল্লাহপুর রুটে এসি বাস পাওয়া যেত। এখন কয়েক ঘণ্টার পর পর বাস পাওয়া যায়। এ কারণে এই এসি বাসের নিয়মিত যাত্রীরা আর এ বাস ব্যবহার করেন না। এছাড়া বাসগুলো বেশ পুরাতন এবং নোংরা হয়ে গেছে।

উত্তরা থেকে মতিঝিল নিয়মিত যাওয়া আসা করেন বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা রহিমা বেগম। তিনি বলেন, ‘বিআরটিসি বাড্ডা সড়কে কোনো এসি বাস দেয় না। অথচ এই রোডে পরিবহন মালিকদের বহু সিটিং সার্ভিস বাস চলছে। গত বছর থেকে অতিরিক্ত ভাড়ায় এসি বাসও নেমেছে। কিন্তু বিআরটিসি ভারত থেকে বহু বাস এনে সেগুলো কোথায় দিল?’

বিজ্ঞাপন

বিআরটিসির সাবেক এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাস বন্টনে রাজস্ব আয় আর যাত্রী সেবা বিবেচনায় নিচ্ছেন না বিআরটিসির বর্তমান ঊর্ধ্বতনরা। রুট পারমিট ছাড়াই বিআরটিসি যেকোনো রুটে বাস নামাতে পারে। ব্যাপক চাহিদা থাকার পরও উত্তরা থেকে বাড্ডা হয়ে মতিঝিল অথবা মিরপুর থেকে কালসী হয়ে বাড্ডা কিংবা মতিঝিল-গাবতলী, আগারগাঁও-মতিঝিল সড়কে এসি বাস দেওয়া হলো না।’

এর পেছনে বিআরটিসির প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাস মালিকদের অবৈধ যোগসাজস থাকতে পারে বলে জানান তিনি। তবে দুদিন আগে উত্তরা সার্কুলার রোডের এসি বাসগুলোকে কুড়িল বাড্ডা-রামপুরা হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত চালানো হচ্ছে। প্রায় ১২টি বাস নামানো হয়েছে এই সড়কে।

এদিকে বিআরটিসি ডিপো সূত্র জানায়, আব্দুল্লাহপুর-মতিঝিল রুটের এসি বাসের বেশিরভাগ এখন বিকল। ডিপোতে নতুন ভারতীয় দ্বিতল এবং একতলা ৩০টি বাস দেওয়া হলেও এ রুটে কোনো এসি বাস দেওয়া হয়নি।

বিআরটিসি’র একটি সূত্র জানায়, পরিবহন মালিকদের সঙ্গে আঁতাত করে বিআরটিসির উচ্চমহল রাজধানীর লাভজনক রুটগুলোতে বাস নামান না। বিআরটিসির বাস যেকোনো রুটে চলতে পারমিট লাগে না। কিন্তু এ সুবিধার কোনো সদ্ব্যবহার করছে না প্রতিষ্ঠানটি।

সূত্র আরও জানায়, বিআরটিসি প্রধান কার্যালয়ের ডিজিএম (অপারেশন) মনিরুজ্জামান বাবু রাজধানীর ডিপোগুলোতে দেওয়া নতুন বাস বহিরাগত বিশেষ সিন্ডিকেটের হাতে টাকার বিনিময়ে অলিখিত ইজারা দিয়েছেন। এর আগে থেকেই মতিঝিল-আব্দুল্লাহপুর রুটের এসি বাসগুলো বহিরাগত এক হোটেল মালিককে দিয়ে রাখা ছিল। আর বাস বরাদ্দ দিয়ে মনিরুজ্জামান বাবু কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তার সঙ্গে বহিরাগত সিন্ডিকেটের সম্পর্কের অভিযোগ বিআরটিসি এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রণালয়েও একাধিকবার এসেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরুজ্জামান বাবু বলেন, ‘তিনি কোনো ডিপোর কেউ না। বাস বরাদ্দ তিনি দেন না।’পরে অবশ্য তিনি জানান, তার অধীনে বিআরটিসির চারটি বাস ও একটি ট্রাক ডিপো রয়েছে। এগুলো তিনি দেখাশোনা করেন। তবে বাস বরাদ্দ দেন বিআরটিসি চেয়ারম্যান।

বিআরটিসি জোয়ার সাহারা বাস ডিপোর ম্যানেজার মশিউর রহমান জানান, মতিঝিল-আব্দুল্লাহপুর রুটে আগের বাসগুলো রয়েছে। এ রুটে নতুন কোনো এসি বাস বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।

বিআরটিসি প্রধান কার্যালয়ের অপারেশন বিভাগের তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় ৩৯৭টি বাস আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৩৩টি বাস বিভিন্ন ডিপোতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখনও বরাদ্দের অপেক্ষায় রয়েছে ১৬৪টি বাস। বরাদ্দ দেওয়া ২৩৩টি বাসের মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সিটি বাস ছিল ৭৬টি এবং ইন্টারসিটি ১টি। এছাড়া নন এসি ৭৮টি ও দ্বিতল ৭৮টি বাস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এত বাস নিয়ে আসলেও বিআরটিসির প্রধান আইকনিক রুট হিসেবে পরিচিত মতিঝিল-আব্দুল্লাহপুর রোডে বাস দেওয়া হয়নি। রাজধানীর ব্যস্ততম এবং একই সঙ্গে বিআরটিসির জনপ্রিয় এই রুট প্রায় বন্ধের পথে।

এ বিষয়ে বিআরটিসির পরিচালক (কারিগরি) কর্নেল মাহবুবুর রহমান জানান, মতিঝিল-আব্দুল্লাহপুর রুটের এসি বাসগুলো নষ্ট হলে সেগুলো মেরামত করা হবে। মেরামত কাজ একটি চলমান প্রক্রিয়া। গাড়ি নষ্ট হবে তারপর মেরামত হবে। এ নিয়ে বিআরটিসির কারিগরি শাখার তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এ নিয়ে বিস্তারিত জানাতে তিনি রাজি হননি।

পুরাতন এই রুটে নতুন কোনো বাস না দিয়ে বিআরটিসির বাস বন্ধের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (প্রশাসন) হামিদুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

এদিকে বিআরটিসির নতুন বাস বরাদ্দের মধ্যেই বর্তমান চেয়ারম্যানকে বদলি করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রহমত উল্লাহ মোহাম্মদ দস্তগীরকে নতুন চেয়ারম্যান করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশ হাতে এসেছে। কিন্তু নতুন চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ বিভাগের একটি প্রশিক্ষণে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন বলে সারাবাংলা কে নিজেই জানিয়েছেন।

রহমত উল্লাহ মোহাম্মদ দস্তগীর সারাবাংলা কে জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে বিআরটিসিতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন।

অনিয়ম এসি বাস বিটিআরসি ভোগান্তি মতিঝিল-আব্দুল্লাহপুর রুট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর