স্যাটেলাইট সংযোগে নানা সম্ভাবনা দেখছেন টিভি ব্যক্তিত্বরা
২ অক্টোবর ২০১৯ ১৯:২১
ঢাকা: দিনটিকে বাংলাদেশের জন্য একটি বিশাল অর্জনের দিন বলে উল্লেখ করলেন নঈম নিজাম। ঐতিহাসিক ও গর্বের বললেন সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা। সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে, বললেন খ. ম. হারূন। সম্প্রচার জগতের জন্য নতুন দ্বার উন্মোচন হিসেবে দেখছেন রেজওয়ানুল হক রাজা। সম্প্রচার মাধ্যমের জন্য স্বস্তির দিন হিসেবে দেখছেন তুষার আবদুল্লাহ। আর দেশ হিসেবে এটা একটা বড় অগ্রগতির উদাহরণ বলে মনে করছেন মোস্তফা ফিরোজ।
২ অক্টোবর (বুধবার) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সকল বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার সুবিধার উদ্বোধন করার পর এমন প্রতিক্রিয়াই আসছিল টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর শীর্ষ পর্যায় থেকে।
সারাবাংলার সঙ্গে প্রতিক্রিয়ায় তারা সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো আগে থেকেই স্যাটেলাইট সুবিধা নিয়ে সম্প্রচার কাজ চালিয়ে আসছিল। তবে সেজন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মালিকানাধীন স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হতো। ১ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট তার বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু করে। আর ২ অক্টোবর এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই উদ্বোধন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দেশের সবগুলো বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল তাদের সম্প্রচার শুরু করে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে। আর সে কারণেই এমন প্রতিক্রিয়া।
‘আজ আমি একটু উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়াই দিতে চাই। এখন থেকে কেবল দেশেই নয়, বিদেশেও আমাদের টিভি দেখা যাবে— এটাই আমার ভেতর সবচেয়ে ইতিবাচক অনুভূতি তৈরি করে,’— বলছিলেন নঈম নিজাম।
নিউজটুয়েন্টিফোর টেলিভিশনের সিইও এবং বাংলাদেশ প্রতিদিনের এই সম্পাদক সারাবাংলাকে বলেন, দুই দশকেরও বেশি সময় আগে এটিএন বাংলায় আমরা যখন প্রথম স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার কাজ শুরু করি, তখন এর সত্যিকারের ঝক্কিটি আমরা টের পেয়েছিলাম। থাইল্যান্ডের একটি স্যাটেলাইট কোম্পানির সহায়তায় সে কাজ ছিল অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য। আর সময়সাধ্যও। আজ দেশের এতগুলো টেলিভিশন চ্যানেল একসঙ্গে নিজের দেশের নিজস্ব স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার শুরু করতে পেরেছে— এটা বাংলাদেশের জন্য একটা বিশাল অর্জন।
‘নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক ঘটনা। দেশের সব টেলিভিশন চ্যানেল একসঙ্গে একই দিনে দেশের নিজস্ব স্যাটেলাইটে যুক্ত হয়েছে। আজ আমাদের গর্বের দিন,’— বললেন সারাবাংলা ডটনেট ও জিটিভির প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা। তিনি বলেন, এই স্যাটেলাইট কোম্পানিটি দেশের বলে টেলিভিশনগুলোর ঝক্কি অনেকটা কমে যাবে। আগে বিদেশে টাকা পাঠানোটাও একটা বড় ঝামেলা ছিল। সেটা এখন সহজ হয়ে যাবে। বিদেশি কোম্পানিকে বেশি টাকা দিতে হতো, সেটাও অনেকটা কমে আসবে।
‘তবে একটা বিষয় জরুরি, সেবাটা দিতে হবে দক্ষতার সঙ্গে। কারণ বিদেশি কোম্পানি থেকে এতদিন আমরা উন্নত সেবা পেয়ে এসেছি। দেশের কোম্পানিকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে,’— বলেন সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা। তিনি আরও বলেন, আরেকটি বিষয় আমি যুক্ত করতে চাই, স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ এখন যে টাকাটা সাশ্রয় হবে সেটি যেন টেলিভিশনের কর্মীদের জীবনমান উন্নয়নে ব্যয় করা হয়।
স্যাটেলাইট টেলিভিশনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব খ ম হারূন জানালেন, উপমহাদেশে স্যাটেলাইট প্রযুক্তিতে সম্প্রচারিত টেলিভিশন জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে ১৯৯৫-এর পর থেকে। আর ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশে একটি-দু’টি করে স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল আমাদের দেশে সম্প্রচার শুরু করে। তারপর সময়ের চাহিদায় এখন ২০১৯-এ চ্যানেলের সংখ্যা প্রায় ৪০টির কাছাকাছি। এতদিন আমরা নির্ভরশীল ছিলাম ব্যংকক, সিঙ্গাপুর ও হংকংভিত্তিক স্যাটেলাইটের ওপর।
খ ম হারূন আরও বলেন, দেশের চ্যানেলগুলো স্টাফদের বেতন নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ করতে না পারলেও বিদেশে স্যাটেলাইটের ভাড়া পরিশোধ করতে হতো একদম নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে। এই টাকা পরিশোধেও ছিল নানা ধরনের জটিলতা। আইনের ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে বিদেশি মুদ্রায় সে ভাড়া পরিশোধ করতে হতো।
‘ভারত, চীন, থাইল্যন্ড কিন্তু শুরু থেকেই তাদের নিজস্ব স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভরশীল ছিল। সেখানে অনেক পরিকল্পিতভাবে স্যাটেলাইট টেলিভিশনের বিকাশ ঘটেছে, আর আমাদের দেশে অপরিকল্পিতভাবে,’— বলেন এই মিডিয়া বোদ্ধা।
এমন পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আমাদের জন্য একটি সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিলো। এখন সব চ্যানেল মালিকদের উচিত নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানকে আধুনিক ও পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া— যোগ করেন এই মিডিয়া বোদ্ধা।
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার সুবিধার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী
সময় টেলিভিশনের বার্তা প্রধান তুষার আবদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, এই স্যাটেলাইট সুবিধার পর প্রথমত ব্যাংকিংয়ের আইনি ঝামেলা থেকে মুক্ত হতে পারবে দেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো। এর আগে স্যাটেলাইট কোম্পানির পাওনা পরিশোধের কিছু নীতিমালাজনিত সীমাবদ্ধতা ছিল। সেদিক থেকে নতুন প্রক্রিয়া অনেক স্বস্তির হবে। এবং অবশ্যই টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর এই খাতে ব্যয় কমবে। সাশ্রয়ী টাকা টেলিভিশনের গুণগতমান, কুশীলবদের বেতন-ভাতা নিয়মিত করার কাজে ব্যয় হবে বলে মনে করি।
মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তাপ্রধান রেজওয়ানুল হক রাজা বলেন, বিদেশি স্যাটেলাইটের ওপর আমাদের নির্ভরতা কমলো— এটি বড় একটি দিক। আমি মনে করি, এর মাধ্যমে দেশের সম্প্রচার জগতের জন্য নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো। তবে এই সেবা যেন নিরবচ্ছিন্ন হয়, সেটি নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন তিনি।
রেজওয়ানুল হক আরও বলেন, আগে আমাদের সবচেয়ে বড় ঝামেলার দিকটি ছিল স্যাটেলাইটের ভাড়া পরিশোধ। দেশের বাইরে সে অর্থ পাঠানোর বৈধ পথ খুব একটা ছিল না, ফলে ঝক্কি ছিল। এখন আমরা সেটি থেকে মুক্ত হতে পারব। তবে দেশি যে কর্তৃপক্ষ ভাড়া নেবে, তাদের ভাড়া অল্প হলেও কিছুটা কম, যা কিছুটা সাশ্রয়ের সুযোগ তৈরি করে দেবে বলে মত দেন তিনি।
বাংলাভিশনের বার্তাপ্রধান মোস্তফা ফিরোজ বলেন, এটি দেশ হিসেবেই একটি বড় অগ্রগতি। আগে স্যাটেলাইট ভাড়ার নামে আমাদের রেমিট্যান্স চলে যেত বিদেশে, এখন সেটি হবে না। আগে স্যাটেলাইটের ভাড়া ইচ্ছামতো বাড়ানো হলে আমরা খুব একটা কিছু বলতে পারতাম না। এখন ভাড়াসহ সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ রাখা যাবে।
উল্লেখ্য, বুধবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে এই স্যাটেলাইট সুবিধার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার বক্তৃতায় বলেন, এই স্যাটেলাইট ব্যবহারের কারণে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর যে অর্থ সাশ্রয় হবে, তা যেন তারা দেশের উপকারে ব্যয় করেন।
আরও পড়ুন-
দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে কোনো ছাড় নয়: প্রধানমন্ত্রী
টেলিভিশন চ্যানেল প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ বেসরকারি টিভি চ্যানেল সাংবাদিকতা স্যাটেলাইট