সম্রাটের ২০ দিন রিমান্ড চায় পুলিশ, শুনানি বুধবার
৭ অক্টোবর ২০১৯ ২৩:৩৬
ঢাকা: মাদক ও অস্ত্র মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে জিজ্ঞাসাবাদের ১০ দিন করে ২০ দিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ।
সোমবার (৭ অক্টোবর) রাতে ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম ইয়াসমিন আরার আদালতে রমনা থানা পুলিশ এ আবেদন করে। আদালত আগামী বুধবার (৯ অক্টোবর) আসামিদের উপস্থিতিতে গ্রেফতার এবং রিমান্ড শুনানির দিন ঠিক করেছেন।
এছাড়াও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমানের বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছেন পুলিশ। আরমানের উপস্থিতিতে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন ও রিমান্ড শুনানির জন্য একই দিন ঠিক করেছেন।
আরও পড়ুন- সম্রাটের বিরুদ্ধে অস্ত্র-মাদক আইনে ২ মামলা
এর আগে, সোমবার বিকালে সম্রাটের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে দুইটি মামলা করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)। র্যাব-১-এর ডিএডি আব্দুল খালেক বাদী হয়ে রমনা মডেল থানায় এ দুটি মামলা করেন।
এ প্রসঙ্গে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) কাজী মাইনুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের থানায় ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি অস্ত্র আইনে, অন্যটি মাদক আইনে। অস্ত্র মামলা হয়েছে সম্রাটের নামে। মাদক আইনের মামলায় সম্রাটের পাশাপাশি তার সহযোগী আরমানকেও আসামি করা হয়েছে।
এর আগে, রাজধানীতে অবৈধভাবে ক্যাসিনো পরিচালনার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে রোববার (৬ অক্টোবর) কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে কুঞ্জশ্রীপুর গ্রাম থেকে ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে আটক করে র্যাব। একইসঙ্গে সম্রাটের সহযোগী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহসভাপতি এনামুল হক আরমানকেও আটক করা হয়।
সম্রাটকে ৬ মাসের জেল, অফিসে অস্ত্র-মদ-ক্যাঙ্গারুর চামড়া
গোয়েন্দা তথ্য বলছে, ক্যাসিনো সাম্রাজ্যের বড় একটি অংশই মূলত চলে দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের ছত্রছায়ায়। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় তার অধীন ক্যাসিনোর সংখ্যা ১৫টিরও বেশি। আর এসব ক্যাসিনো থেকে প্রতিরাতে তার পকেটে ঢোকে ৪০ লাখ টাকারও বেশি!
গত ১৮ সেপ্টেম্বর র্যাবের ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকেই দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল সম্রাটের গ্রেফতার নিয়ে নানা ধরনের গুঞ্জন ছিল। গত ২৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইসি) সম্রাট ও তার স্ত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠিও দেয়।
সম্রাট আটক হয়েছেন— এমন গুঞ্জনের মুখে সর্বশেষ গত ২৮ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘সম্রাট গ্রেফতার কি না— এ প্রশ্নের উত্তর আপনারা শিগগিরেই জানতে পারবেন।’ শেষ পর্যন্ত র্যাবের হাতে আটক হয় সম্রাট।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে রাজধানীর মতিঝিলে ইয়ং মেনস ক্লাবে প্রথম অভিযান শুরু করে র্যাব। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া সেখানে অবৈধ ক্যাসিনো চালাতেন বলে অভিযোগ আছে। ওই একইসময়ে গুলশানে খালেদের বাসাতেও অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে সন্ধ্যায় আটক করা হয় তাকে।
অভিযানে খালেদের বাসা থেকে একাধিক অস্ত্র, মাদক ও বিপুল পরিমাণ টাকা জব্দ করে র্যাব। অন্যদিকে ইয়ং মেনস ক্লাবের ক্যাসিনো থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা জব্দ করা হয়, আটক করা হয় ১৪২ জনকে। তাদের মধ্যে ৩১ জনকে একবছর ও বাকি ১১১ জনকে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া বিপুল পরিমাণ মদ, বিয়ার, সিগারেটসহ নেশাজাতীয় বিভিন্ন দ্রব্য জব্দ করা হয় ওই ক্যাসিনো থেকে।
পরে মতিঝিলের ক্লাব পাড়ার ঐতিহ্যবাহী ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্লাব, ধানমন্ডির কলাবাগান ক্লাবসহ উত্তরা-বনানী-গুলশানের বেশকিছু ক্লাবের অবৈধ ক্যাসিনোতেও অভিযান চালানো হয়। প্রতিটি ক্যাসিনো থেকেই উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ মদ, বিয়ার, সিগারেটসহ নেশাজাতীয় দ্রব্য। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
অস্ত্র ও মাদক মামলা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান ক্যাসিনো সম্রাট