যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা পরিকল্পনা শক্তিশালী করতেই ওয়েলস ঢাকায়
৫ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:০০
ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল এর অন্তর্ভুক্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় উদ্যোগ (ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি বা আইপিএস) বাস্তবায়নে ঢাকার জোড়ালো সমর্থন চায় ওয়াশিংটন। এতে ঢাকা ইতিবাচক আগ্রহ দেখালেও দুপক্ষের মধ্যে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এই ইস্যুতে ঢাকা-ওয়াশিংটন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো শক্তিশালী করতেই যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) ঢাকা সফরে আসছেন বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, গত ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র যে জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল প্রণয়ন করেছে তার মধ্যে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল বাস্তবায়ন অন্যতম। যুক্তরাষ্ট্র চায় যে, ভারত মহাসাগরের পশ্চিম উপকূল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূল অবাধ ও মুক্ত এবং নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকুক। এজন্য বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া-ভারত-জাপান এর জোড়ালো সমর্থন চায় যুক্তরাষ্ট্র।
ঢাকায় আসার আগে ভারপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস ব্যাংককে সদ্য সমাপ্ত পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলন ও ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বাণিজ্য ফোরামে অংশ নেন এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক অংশিদারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। এছাড়া সেখানে তিনি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় উদ্যোগ ইস্যূতে যুক্তরাষ্ট্র-অস্ট্রেলিয়া-ভারত-জাপান ‘চতুর্মাত্রিক’ আলোচনা অধিবেশনে যোগ দেন।
এর আগে, গত বছরের অক্টোবরে ঢাকা সফর করেছিলেন এলিস ওয়েলস। সেবার সারাবাংলা’র এক প্রশ্নের জবাবে ভারপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনের নেয়া ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল সমমনা দেশ জপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত এবং বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়েই বাস্তবায়ন করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এই অঞ্চলের উন্নয়নে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল কোনোভাবেই চীনের নেয়া উন্নয়ন কৌশলের পাল্টা জবাব নয়। তবে এই অঞ্চলের উন্নয়নে চীনের নেয়া ভ’মিকা খুবই জটিল।’
তিনি আরো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলকে সমর্থন করায় এরই মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশকে ৪ কোটি ডলার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এই উদ্যোগকে সফল করতে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাত সংশ্লিষ্টরা ৮৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। যেখানে দ্বিপক্ষীয়ভাবে ১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হবে। এই বাণিজ্য থেকে অংশগ্রহণকারি প্রতিটি দেশই লাভবান হবে। এই কৌশলের অন্যতম বিষয় হচ্ছে বাণিজ্য এবং উন্নয়নের জন্য ভারত মহাসাগরের নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করা। এই উদ্যোগের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং সু-শাসন প্রতিষ্ঠার বিষয় রয়েছে।’
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নেয়া ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলে অংশ নিতে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এই কৌশলে বাংলাদেশ কোনো প্রকার যুদ্ধ-বিগ্রহে অংশ নিবে না। বাংলাদেশের কৌশল হচ্ছে বৈশ্বিক অঙ্গণ থেকে শান্তিপূর্ণ উপায় উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান সারাবাংলা’কে জানান, চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা পালন করছে। যে কারণে বেশ কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের রাতারাতি উন্নতি ঘটেছে। এই অঞ্চলের চালকের আসনটি চীনও নিতে চায়, এ জন্য তারাও এই অঞ্চলের উন্নয়নে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের নেয়া ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস এর ঢাকা সফর উপলক্ষ্যে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এক বার্তায় জানিয়েছে, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস ১ থেকে ৭ নভেম্বর থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশ সফর করছেন।
ভারপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েলস ঢাকায় উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। কক্সবাজারেও তিনি বাংলাদেশি কর্মকর্তা ও আন্তর্জাতিক ও বেসরকারি সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক সহায়তা নিয়ে আলোচনা করবেন এবং শরণার্থী ও আশ্রয়দাতা জনগোষ্ঠীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবেন।
সারাবাংলা/জেআইএল/টিএস