Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রধানমন্ত্রীর ৪৮৪ অনুশাসন নিয়ে বই, উঠছে একনেকে


২৪ নভেম্বর ২০১৯ ১৩:১৪

ঢাকা: জনস্বার্থ এবং উন্নয়ন কাজ পরিচালনায় গত সাড়ে ১০ বছরে ৪৮৪টি অনুশাসন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) ২৪৯টি বৈঠকে এসব অনুশাসন দেন তিনি। যা বাস্তবায়নে বিশেষ তদারকির উদ্যোগ নিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘ সাড়ে দশবছর টানা সরকার পরিচালনার সময়ে দেশের উন্নয়ন ও জনস্বার্থে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া সবগুলো অনুশাসন নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। যা বই আকারে আগামী মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) উঠবে জাতীয় অর্থনেতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সস্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। তার সামনেই অনুশাসনগুলোর সমন্বিত রূপ প্রকাশ করা হবে।

সূত্র জানিয়েছে, পরে প্রতিবেদনটি সবগুলো মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক এবং প্রকল্প পরিচালকদের কাছে পাঠানো হবে। যাতে যে যার স্থান ও অবস্থান থেকে এসব অনুশাসন মেনেই পরবর্তী কাজগুলো করে যেতে পারেন।

প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো শপথ নেন। আর জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ছয় মাসে ১০টি একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এগুলোতে প্রধানমন্ত্রী অনুশাসন দিয়েছিলেন ২৫টি।

এছাড়া ২০০৯-১০ অর্থবছরে ২৪টি একনেক সভায় ৫৩টি, ২০১০-১১ অর্থবছরে ১৪টি একনেক সভায় ২৩টি, ২০১১-১২ অর্থবছরে পাঁচটি একনেক সভায় ছয়টি, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ছয়টি একনেক বৈঠকে সাতটি, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১৪টি একনেক সভায় ২৪টি অনুশাসন দেন শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবার নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২৩ একনেক সভায় ৫৭টি অনুশাসন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৭টি একনেক সভায় ৮৩টি, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৫টি একনেক সভায় ৮৮টি, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২২টি একনেক বৈঠকে ৫৮টি অনুশাসন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে (গত জুন মাস পর্যন্ত) ১৯টি একনেক বৈঠকে ৫৮টি অনুশাসন দেন প্রধানমন্ত্রী। তবে এরই মধ্যে ৩০ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর টানা তৃতীয় দফায় সরকার গঠন করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর দেয়া অনুশাসনের অনেকগুলোই বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে দাবী করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে পরিকল্পনা সচিব মো. নূরুল আমিন। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, একনেক ও এনইসি বৈঠকগুলোতে বিভিন্ন প্রকল্পের তথ্য বিশ্লে¬ষণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নানা বিষয়ে অনুশাসন দিয়েছেন। যা অনেকগুলোই বাস্তবায়ন করা হয়েছে কিংবা হচ্ছে।

সেগুলো কেনো প্রতিবেদন বা বই আকারে কেনো প্রকাশ করা হচ্ছে? সারাবাংলার এমন প্রশ্নের জবাবে এই সচিব বলেন, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এসব অনুশাসনের যাতে যথাযথ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়, সেজন্যই বই আকারে প্রতিবেদন তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

কোন কোন অনুশাসন এক দিনে বাস্তবায়নের বিষয় নয়, দীর্ঘ সময় ধরে বাস্তবায়ন করতে হয়, বলেন মো. নূরুল আমিন।

আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে আগামী মঙ্গলবার একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সামনে বইটি উপস্থাপন করার, অপর প্রশ্নের জবাবে জানান পরিকল্পনা সচিব।

প্রতিবেদন মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এসব অনুশাসনের মধ্যে রয়েছে- উপকূলীয় অঞ্চলে সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের ক্ষেত্রে অবশ্যই ছাদের বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য ইনহাউজ ওয়াটার রিজার্ভারের ব্যবস্থা রাখা। এছাড়া শেল্টারগুলোতে সোলার প্যানেল এবং আশ্রিতদের মূল্যবান জিনিষপত্র রাখার জন্য স্টোর রুম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

ঢাকা শহরের সব সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ে উপ-বৃত্তি দেওয়ার নির্দেশনাও এই অনুশাসনগুলোর একটি।

এছাড়া, ভবিষ্যতে যমুনা নদীতে টানেল নির্মাণের লক্ষ্যে সেতু বিভাগ থেকে একটি ফিজিবিলিটি স্টাডির উদ্যোগ নেওয়া, দেশি ফল উৎপাদন বাড়ানো ও গবেষণার মাধ্যমে গুনগত মান বাড়ানোর উদ্যোগও প্রধানমন্ত্রীর অপর একটি অনুশাসন।

এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া অনুশাসনগুলোর মধ্যে রয়েছে, প্রকল্পের ব্যয় ও সময় বাড়ানোর প্রবণতা কমিয়ে সঠিক কর্মপরিকল্পনা নেওয়া ও তার ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা। রোহিঙ্গাদের জন্য কোন প্রকল্প নেওয়া হলে স্থানীয় অধিবাসীদের সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করাও ছিলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম একটি অনুশাসন। এছাড়া পাহাড় যাতে ধসে না পড়ে সেজন্য পর্যাপ্ত রিটোইনিং ওয়াল নির্মাণসহ পর্যাপ্ত গাছ ও ঘাস লাগানোর নির্দেশনা ছিলো প্রধানমন্ত্রীর।

‘প্রকল্প শুধু ভবন নির্মাণ, গাড়ী ও আনুষাঙ্গিক কাজের জন্য নয়। জনসেবার জন্য প্রকল্প গ্রহণ ও অর্থ ব্যয় করতে হবে’ প্রধানমন্ত্রীর এমন উদ্ধৃতির কথা উল্লেখ রয়েছে অনুশাসন সংক্রান্ত এই প্রতিবেদনে।

দেশের সকল বড় সড়কগুলোর পাশে এক স্তর নিচু করে দুই দিকে আর একটি সড়ক নির্মাণেরও একটি অনুশাসন দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, মূল রাস্তার পাশের রাস্তা দিয়ে যাতে রিক্সা, ভ্যান, মানুষ এবং ধীরগতির যানবাহন নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারে সে জন্য এই ব্যবস্থা রাখা জরুরি।

সাম্প্রতিক সময়ে রেলপথে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় তা আলোচনায় রয়েছে। তবে বিষয়টি আরও আগেই প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে যা একনেকে তার দেওয়া একটি অনুশাসন থেকে স্পষ্ট হয়। দেশব্যাপী রেলপথে বিদ্যমান ব্রিজগুলোর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে একটি বিস্তারিত সমীক্ষার ওপর জোর দিয়েছিলেন তিনি, যার ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে রেল ব্রিজগুলো মেরামত বা পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে।

এছাড়া দেশের সকল সরকারি মেডিকেল কলেজ,হাসপাতাল এবং ইনস্টিটিউটে কর্মরত চিকিৎসকদের কর্মস্থলে প্রাইভেট প্রাকটিস করার লক্ষ্যে তার দেওয়া একটি অনুশাসন আরো আগেই আলোচনায় আসে। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে সেটিও ছিলো একটি যুগোপযোগী অনুশাসন।

এছাড়া, রাজধানীর পুরান ঢাকার নিমতলী দুঘর্টনা ও চুড়িহাট্টা দূঘর্টনার মতো ভবিষ্যতে যাতে কোন ঘটনা না ঘটে সেজন্য পুরান ঢাকার বিদ্যমান রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম জরুরী ভিত্তিতে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কথা একটি একনেক সভায় বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কৃষি জমি নষ্ট করা যাবে না এমন একটি অনুশাসন ছিলো যাতে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা এমনভাবে করতে হবে যাতে কৃষি জমি রক্ষা পায়।

ঢাকা শহরের ফুটপাথ রক্ষার লক্ষ্যে ফুটপাতের হকারদের পুনর্বাসনের জন্য বন্ধের দিনগুলোতে নিদিষ্ট স্থানে সাপ্তাহিক মার্কেট বসানোর দিন ধার্য করাও ছিলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া একটি অনুশাসন।

এছাড়াও তিনি পুলিশ বাহিনীর বিভিন্ন কর্মস্থলে আবাসিক সুবিধা বাড়াতে একটি বড় প্রকল্প নিতে বলেছিলেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। আর দেশে ইসলামের নামে যে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে পড়ছে তার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির ওপর জোর দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী তার অপর এক অনুশাসনে। এ বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ারও নির্দেশ দেন তিনি।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা ও সামষ্টিক অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী একনেক বৈঠকে অনুশাসন দেন। অনুশাসনকে অর্ডার বলা হয়। এগুলো অবশ্যই প্রতিপালন করতে হবে। তা না হলে চাকুরি শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ হবে। কেননা সরকার প্রধান হিসেবে তিনি যা বলেন, তা বাস্তবায়ন করা সচিবদের দায়িত্ব।’

সারাবাংলা/জেজে/এমএম

৪৮৪ অনুশাসন অনুশাসন একনেক একনেক বৈঠক প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর