Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বায়ুদূষণ: শুধু স্বাস্থ্য নয়, হুমকির মুখে শিশুর বিকাশও


৩০ নভেম্বর ২০১৯ ০৮:০০

ঢাকা: সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে প্রথমসারিতে রাজধানী ঢাকা। শুধু তাই নয়, বিশ্বের যে পাঁচটি দেশের শতভাগ মানুষ দূষিত বায়ুর মধ্যে বসবাস করে, তার একটি বাংলাদেশ।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রকাশিত বৈশ্বিক বায়ুদূষণের ঝুঁকি বিষয়ক ‘দ্য স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার-২০১৯’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানমাত্রার চেয়ে অনেক নিচে বাংলাদেশের বায়ুর মান। এমন অবস্থায় বায়ুদূষণের কারণে নানাবিধ রোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

বিজ্ঞাপন

পড়ুন: বিষাক্ত ঢাকার বাতাস, মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা

মাতুয়াইল শিশু-মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. জাহাঙ্গীর চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বায়ুদূষণের কারণে সব বয়সের মানুষেরই সমস্যা হয়। তবে শিশুদের একটু বেশি সমস্যা হয় কিছু কারণে। বায়ুদূষণের কারণে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের বিষয়টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। একই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ার কারণে শারীরিকভাবেও নানা সমস্যায় আক্রান্ত হতে হয় শিশুদের। দূষিত বায়ুতে যে সিসা থাকে তার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশুর স্নায়ুবিক বিকাশও।’

শুধুমাত্র ঢাকা শহর নয় বরং বাংলাদেশের বায়ুদূষণের জন্য এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দায়ী করেন বিভিন্ন যানবাহনের ধোঁয়াসহ চারপাশে থাকা ইটভাটার ধোঁয়া এবং কল-কারখানা থেকে বের হওয়া বিভিন্ন রাসায়নিক ধোঁয়াকে। আর এ থেকে পরিত্রাণের জন্য সরকারের খুব দ্রুত সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘সম্প্রতি বিশ্বের বায়ুমান যাচাই বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এয়ার ভিজ্যুয়াল-এর বায়ুমান সূচক নিয়ে করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৭ থেকে ১৯ নভেম্বর বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নগরী ছিল ঢাকা। আর এমন বায়ুদূষণ রাজধানীবাসীর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। যার প্রভাব পড়তে পারে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশেও।

কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞ এ চিকিৎসক বলেন, ‘বায়ুদূষণের কারণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, সীসা এগুলোর মাত্রা বেড়ে যায়। এছাড়াও বর্তমানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণার পরিমাণও এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি। দূষিত বায়ুতে থাকা সীসা মারাত্মকভাবে লিভার, কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত করা থেকে শুরু করে মস্তিষ্কেও প্রভাব ফেলে। এর প্রভাব পড়ে শিশুদের উপরেও। এই সীসার কারণে শিশুদের মানসিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এমনকি শারীরিক বৃদ্ধির হারও কমে যেতে পারে। এছাড়াও গর্ভবতী নারীদের গর্ভপাত পর্যন্ত হতে পারে এই সীসার কারণে।’

আরও পড়ুন: বায়ু দূষণে শীর্ষে বাংলাদেশ, রাজধানী হিসেবে ঢাকা দ্বিতীয়

ডা. উত্তম কুমার বলেন, ‘বায়ুদূষণের কারণে প্রথমেই সবচাইতে বেশি প্রভাব পড়ে শ্বাসযন্ত্রের উপরে। মারাত্মকভাবে শরীরের ক্ষতি করে। এর কারণে শরীরের প্রতিটি জায়গায় প্রদাহ হতে পারে যেমন হাঁচি-কাশি দীর্ঘায়িত হওয়া থেকে শুরু করে ভাইরাসজনিত জ্বরও হতে পারে। কারণ শরীরের রেসপিরেটরি সিস্টেমে ক্রনিকলি বায়ু দূষণ হতে থাকে সেক্ষেত্রে ফুসফুসের ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। অ্যাজমা, সিওপিডি ছাড়াও ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ থেকে শুরু করে শ্বাসকষ্টের মতো রোগও বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও দূষিত বাতাসে থাকা নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড ব্রঙ্কাইটিস ছাড়াও ফুসফুসের উপরেও প্রভাব ফেলে। এছাড়াও দূষিত বায়ুতে ক্যাডমিয়াম, প্রোমিয়ামসহ আরও কিছু ক্ষতিকর উপাদান থাকে যার কারণে লিভার, কিডনি সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকিও থাকে।’

আবহাওয়াগত পরিবর্তনের এই সময়টাতে বায়ু দূষণের বিষয় থেকে সবকিছু নিয়ে আমাদের সচেতন থাকার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞ এ চিকিৎসক।

                                                              বায়ুদূষণ প্রতিরোধের এখনই সময়

ডা. উত্তম কুমার আরও বলেন, ‘এ সময়ে আমরা যদি সতর্ক না হই তবে শরীরের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা আছে ও যাদের অ্যালার্জি সংক্রান্ত সমস্যা আছে তাদের রোগের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এ সময়টাতে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে মা ও শিশুদের এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের যেন ঠান্ডা না লাগে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।’

বায়ুদূষণের বিষয়ে প্রিভেনটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এম এইচ চৌধুরী লেলিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বায়ু দূষণের সঙ্গে মানুষের যে অংশটির সরাসরি সংযোগ সেটি হল শ্বাসতন্ত্র। ফলে শ্বাসতন্ত্রের প্রায় সমস্ত রোগ অর্থাৎ যাদের অ্যাজমাসহ বিভিন্ন ধরনের শ্বাসতন্ত্রের অ্যালার্জি আছে সেগুলো বেড়ে যাওয়া শঙ্কা থাকে, যা এরইমধ্যে আমরা দেখছি। শিশুদের ক্ষেত্রে জন্ম নেওয়ার পরে নবজাতক এবং ছোট শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পূর্ণাঙ্গ থাকে না। ফলে যত বায়ু দূষণ হবে তত তার শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা বাড়তে থাকবে। এক্ষেত্রে শ্বাসের টানসহ ফুসফুসের নানাবিধ রোগ হতে পারে। এছাড়াও স্নায়ুর সমস্যাও দেখা দিতে পারে।’

বায়ুদূষণের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, ‘আগে আমরা কার্বন মনো অক্সাইডসহ নানা ক্ষতিকর উপাদান পেতাম দূষিত বায়ুতে। এর সঙ্গে ভাসমান ধুলিকণা প্রচুর পরিমাণে বেড়েছে এবং বেড়েছে ভাসমান প্লাস্টিক কণা। বেড়ে গেছে সীসাসহ নানা ক্ষতিকর উপাদানও। আমাদের দেশের বায়ুদূষণের প্রধান উৎস হলো ঢাকা শহরের চলমান মেগা প্রজেক্ট থেকে নিঃসরিত ধুলোবালি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে গাড়ির ধোঁয়া এবং কিছু ক্ষেত্রে জেনারেটরের ধোঁয়াও। আগে বলা হতো, ঢাকার চারপাশে যে সব ইটভাটা রয়েছে সেগুলোর কারণে ৫৬ শতাংশ বায়ু দূষণ হয়ে থাকে। সেগুলো কিন্তু এখন কমেনি বরং অনেকক্ষেত্রে বেড়েছে। এছাড়াও দেখা গেছে পলিথিনের ব্যবহার আইনগতভাবে নিষিদ্ধ হলেও তা এখনও ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও অফিসে ব্যবহৃত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি) থেকে নির্গত ধোঁয়াও কিন্তু যোগ হচ্ছে বায়ুতে। গাছের সংখ্যাও আমাদের কমছে।’

বায়ুদূষণ রোধে সমণ্বিত উদ্যোগ না নেওয়া গেলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নাগরিকদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

                                            পড়ুন: রাজধানীর পরিবেশ দূষণ রোধে কমিটি গঠনের আদেশ হাইকোর্টের

বায়ুদূষণের কারণে শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে আশঙ্কা করে শিশু হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. এ এস এম মশিউল আজম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা শহরে সাম্প্রতিক সময়ে বেড়ে যাওয়া বায়ুদূষণের কারণে শ্বাসতন্ত্রজনিত যেমন শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা বা হাঁচি-কাশি সহ বিভিন্ন রোগ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর এক্ষেত্রে বাচ্চারাই সবচাইতে বেশি ঝুঁকির মুখে পড়বে কারণ তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। এমন পরিস্থিতিতে আসলে দূষিত এলাকা থেকে শিশুদের দূরে রাখার বিষয়টি আপাতত সমাধান হিসেবে ভাবা যেতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বায়ুদূষণ কমাতে ঢাকা শহরে বৃক্ষের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। আমাদের বায়ুদূষণের আরেকটি কারণ জ্বালানিচালিত গাড়ির বিষাক্ত কালো ধোঁয়া। এক্ষেত্রে মেট্রোরেল হলে হয়তবা আমাদের জন্য কিছুটা আশার আলো বয়ে নিয়ে আসবে। এটির কারণে শহরের বায়ুদূষণের পরিমাণ কিছুটা কমে আসবে কিন্তু সেটাও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।’

                                                      ‘রাজধানীর বায়ুদূষণের জন্য ৫৮ ভাগই দায়ী ইটভাটা’

উল্লেখ্য, ‘দ্য স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার-২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি বায়ুদূষণের কারণে মানুষের গড় আয়ু কমে যাওয়া ও স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে, এ সময়ে জন্ম নেওয়া শিশুদের গড় আয়ু কমবে ২০ মাস।

আবহাওয়ার পরিবর্তন দূষিত বায়ুর শহর বায়ু দুষণ রাজধানী ঢাকা শিশুর বিকাশ

বিজ্ঞাপন

২৫ নভেম্বর ঢাকায় সংহতি সমাবেশ
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৩

আদানি গ্রুপের নতুন সংকট
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৩৬

আরো

সম্পর্কিত খবর