শহীদ আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত বিদ্যালয়ের জমি দখলের পাঁয়তারা
১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৬:৫৮
বরিশাল: অমর একুশের গানের সুরকার শহীদ বুদ্ধিজীবী আলতাফ মাহমুদের প্রতিষ্ঠিত সঙ্গীত বিদ্যালয়টির জমি দখলের পাঁয়তারার অভিযোগ উঠেছে। অমৃত লাল দে কোম্পানির পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ দে জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও সামাজিক আন্দোলন নেতাদের অভিযোগ ।
বিজয় কৃষ্ণ দে’র বিরুদ্ধে অভিযোগ—বিদ্যালয়টির ১০ শতাংশ জমি দখলের জন্য তিনি ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করেছেন।
জানা যায়, ১৯৭২ সালে স্থানীয় সঙ্গীতপ্রেমীদের উদ্যোগে বরিশালে শহীদ আলতাফ মাহমুদের নামে সঙ্গীত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৮৫ ও ৮৬ সালে দুই দফায় বগুড়া-আলেকান্দা মৌজার ১৩৪ নম্বর খতিয়ানের ৩১৪৮ নম্বর দাগের ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ জমিটি একতলা পাকা ভবন বিদ্যালয়ের নামে বরাদ্দ দেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক। সেখানে ওই ভবনেই সঙ্গীত বিদ্যালয়টির কার্যক্রম চলছে।
বরাদ্দ পাওয়া জমিটি বিদ্যালয়ের নামে ২০০৭ সালে সরকারি গেজেটভুক্ত হয়। এর পরের বছর নগরীর রূপাতলীর রফিক উদ্দিন আহমেদ রফিজ ও তার পরিবারের সদস্যরা ওই জমি নিজেদের দাবি করে তা রেজিস্ট্রি করে নেয়। রেজিস্ট্রিতে জমির বিগত ২৫ বছরের তথ্য এবং বর্তমান অবস্থা উল্লেখ করার বিধান থাকলেও তা করা হয়নি।
এরপর ওই চক্র মিথ্যা তথ্য দিয়ে ২০১২ সালে বরিশালের যুগ্ম জেলা জজ ও অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আদালতে ভিপি অবমুক্ত মামলা করেন। একই বছর একই আদালতে ভিপি স্যুট মামলা করেন জমির মালিকানা দাবিদার শৈল দে। মামলার বাদী শৈল দে আদালতকে বিভ্রান্ত করে জানান, ওই জমি তাদের ভোগ-দখলে আছে।
এ বিষয়ে আদালত ব্যাখ্যা চাইলে গত ২৫ মার্চ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জমিটির বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসন জানায়, লিজ কেসের মাধ্যমে ওই জমি শহীদ বুদ্ধিজীবী আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত বিদ্যালয়কে দেওয়া হয়। ১৯৭২ সাল থেকে বিদ্যালয়টি সুনামের সঙ্গে তার কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।
জমিতে সরকারের পক্ষে লিজপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাদী শৈল দে বা অন্য কারও স্বত্ব বা দখল নেই। উল্লিখিত জমি নগরীর প্রাণ কেন্দ্রে এবং মূল্যবান হওয়ায় আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে কিছু কাগজপত্র জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে জমির মালিকানা দাবি করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়।
পুরনো এই বিদ্যাপীঠটি রক্ষা করার দাবি জানিয়ে শহীদ আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্পিতা রায় অর্থি বলেন, ‘এই বিদ্যালয়টির মাধ্যমে আমরা আলতাফ মাহমুদের অমর সৃষ্টি সম্পর্কে জানতে পেরেছি। কিন্তু বিদ্যালয়টির জমি দখল করার পাঁয়তারা চলছে। এটি বন্ধে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চাই।’
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট এস এম ইকবাল বলেন, ‘নগরীর কতিপয় চিহ্নিত ভূমিগ্রাসী জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন জমি-জমা আত্মসাৎ করছে। এরাই শহীদ আলতাফ মাহমুদের বিদ্যালয়ের জমিটি মিথ্যা তথ্য দিয়ে আদালতকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এই জমি অবৈধভাবে শিল্পপতি বিজয় দে’র কাছে বিক্রি করা হয়েছে বলে শুনেছি। আমরা এই জমিটি বেহাত হতে দেব না।’
অমৃত লাল দে কোম্পানির পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ বলেন, ‘শহীদ আলতাফ মাহমুদ একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাকে আমি শ্রদ্ধা করি। কিন্তু আমরা আলতাফ মাহমুদের জমি ক্রয় করিনি। কাগজপত্র দেখে একজনের কাছ থেকে ওই জমিটি ক্রয় করেছি। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে যে কারও সঙ্গে বসতে রাজি আছি। যদি আমরা জমি না পাই তবে নেব না।’
জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান জানান, শহীদ আলতাফ মাহমুদ সংঙ্গীত বিদ্যালয়ের নামে জেলা প্রশাসন জমিটি বরাদ্দ দেয়। সম্প্রতি এক ব্যক্তি ওই জমি তার নিজের দাবি করে আদালতে মামলা করেছেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আদালতে জবাব দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘শহীদ আলতাফ মাহমুদ এদেশের গর্ব। প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই শেষে আদালত সঠিক রায় দেবেন বলেই বিশ্বাস করি। আমরা আশাবাদী, সঙ্গীত বিদ্যালয়টি সুন্দরভাবে তার কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।’
আলতাফ মাহমুদ শহীদ আলতাফ মাহমুদ শহীদ আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত বিদ্যালয়