Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিপক্ষে ঢাবির একাডেমিক কাউন্সিল


২৯ জানুয়ারি ২০২০ ০৮:০০

দেশের সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। তবে ভর্তি প্রক্রিয়ায় নানা জটিলতা ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বায়ত্তশাসন বা স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে একমত হতে পারছে না ঢকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ক্ষেত্রে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অনেকগুলো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়। আমাদের এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনা হবে।’

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে ইউজিসির বৈঠকে অংশ নেননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তার পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামাদ সেখানে যোগদেন।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিল এটার পক্ষে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে এ বিষয়টা নিয়ে একবার আলোচনা করা হয়েছিল, সেখানে শিক্ষকরা এটা সমর্থন করেনি। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা সমর্থন করি। আমি মনে করি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের জন্য মঙ্গলজনক হবে। মানুষের কষ্ট লাগব হবে, অর্থ ও সময় কম ব্যয় হবে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হলে একই সঙ্গে সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ও ক্লাস শুরু করতে পারবে।’

ইউজিসির বৈঠক সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ইউজিসিতে আমি গিয়েছিলাম। তারা বলেছে, স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাদ দিয়ে হলেও বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দিয়ে এ বছর সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষা শুরু করা হোক। আমি তখন বলেছি, বড় বড় যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে, যেমন ৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত দেশের চারটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ যারা ভর্তি পরীক্ষা পাইয়োনারিং করবে, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের ডেকে আলাদাভাবে একটি বৈঠক করা। আমি প্রস্তাব করেছিলাম, বড় বড় যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে, সেগুলো দিয়ে শুরু করার কথা। যাদের অবকাঠামো দুর্বল, এখনো অসম্পূর্ণ তারা পরে ভর্তি পরীক্ষা নেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স অনুসারে প্রতিষ্ঠাকাল অনুসারে চক্রাকারে নেবে। মহামান্য রাষ্ট্রপতির এ ব্যাপারে নির্দেশনা আছে, আমরা জেনেছি শিক্ষামন্ত্রণালয় ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও এটা চান এবং দেশের মানুষের কল্যাণ হবে বলে নাগরিক সমাজও এটা মনে করে।’

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হলে ভিন্ন ডিসিপ্লিনের সাবজেক্ট বা প্রশ্নফাঁস নিয়ে কোনো অসুবিধা হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেক্ষেত্রে একটা পদ্ধতি আছে, সেটা হলো গুচ্ছ পদ্ধতি পরীক্ষা গ্রহণ। যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একই ধরনের সাবজেক্ট পড়ানো হয়, তারা আলাদাভাবে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেবে। আর প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টা তো অমূলক না। সেটা ইউজিসির নেতৃত্বে একটা সেন্ট্রাল মনিটরিং টিম থাকবে এবং প্রশ্নগুলো এরা নিজেরা নিয়ে যাবে। গ্রামে একটা প্রবাদ আছে ‘মরবো বলে করবো না, বাঁচলে পরে খাবো কি?’ এখন কথা হলো ছাত্রদের ও অভিবাবকদের মঙ্গলের দিকটা একটু চিন্তা করে এটা তো শুরু করতে হবে। এজন্য শিক্ষকদের মধ্যে একটু ত্যাগের মনোভাব থাকা দরকার।’

অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পাচঁটি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা হয়, এসব অনুষদের ডিন বা শিক্ষকরা বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আরও আলোচনা ও পর্যালোচনার দরকার আছে বলে মনে করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়টি আরও ভেবে দেখা উচিত। হুট করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত না। ৭৩-এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী যে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে, অন্তত সেগুলো আলাদা পরীক্ষা নেওয়া উচিত।
আমাদের শিক্ষকদের মতামত নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি বের করতে হবে। যাতে এর সুফল আসে।’

বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক তোফায়েল আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে একাডেমিক কাউন্সিলে শিক্ষকদের মতামত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।’

এদিকে ইউজিসি থেকে সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষা ঘোষণার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে এ পদ্ধতির সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, ‘সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা ব্যবস্থাপনাটা কীভাবে হচ্ছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে একযুগে ভর্তি পরীক্ষা হলে একজন শিক্ষর্থী অসুস্থ বা অন্যকোনো সমস্যায় পড়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারলে, তার সারাজীবন একটা আক্ষেপ থেকে যাবে। শিক্ষার্থীদের সময়, ভিন্ন ভিন্ন প্রস্তুতি ও অর্থ ব্যয়ের দিক বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নিলেও এ বিষয়টাও বিবেচনা করা দরকার।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হক লেখেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষের উচিত, সরকার-ইউজিসির এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করা। শুধু নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক স্বায়ত্তশাসন আর স্বাতন্ত্র্যের জন্য নয়, উচ্চশিক্ষা এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দার্শনিক মেজাজ রক্ষার স্বার্থেও তা করা উচিত। আমরা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিরোধী। মেডিকেলের উদাহরণ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রযোজ্য হবে না। মেডিকেল এমনকি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত পদ্ধতি চলতে পারে, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়। চিকিৎসাবিজ্ঞান ও প্রকৌশলবিদ্যা জ্ঞানকাণ্ড হিসেবে সমধর্মী। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিপ্লিনগুলো বিচিত্র। বরং সমধর্মী বিষয়গুলো কয়েকটি গুচ্ছে বিভক্ত করে পরীক্ষার সংখ্যা কমিয়ে আনা যায়।’

অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের অর্থ ব্যয় হ্রাস, যাতায়াত দুর্ভোগ কমানো, সময়ের অপচয় এমন কিছু সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকে মনে করেন শিক্ষার্থীদের চাহিদা মেটানো কিংবা সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও একই সঙ্গে সমান মর্যাদা বা শিক্ষার সুযোগের পরিবেশ এখনো সৃষ্টি করতে পারেনি। শিক্ষার্থীদের ভর্তির ব্যাপারে প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়েরই নিজস্ব স্বকীয়তা রয়েছে যা একীভূত করার উপযুক্ত সময় এখনো আসেনি। মৌলিক চাহিদার (শিক্ষা) উপযুক্ত ব্যবস্থা ও সুষ্ঠু বণ্টন না করে এটা এক প্রকার অন্ধকার গলিতেই ছুঁটছে।

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) গত ২৩ জানুয়ারি ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তবে চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি, চবি, রাবি, জাবি) এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এখনো এ বিষয়ে চূড়ান্তভাবে কথা দেয়নি। ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে শিগগিরই আবারও আলোচনা করবে ইউজিসি। এরপরও রাজি না হলে তাদের বাদ রেখেই বাকিগুলো নিয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হবে বলে জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢাবির একাডেমিক কাউন্সিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর