ইভিএমে আঙ্গুলের ছাপ মিলছে না, অভিযোগ বাড়ছে কেন্দ্রে-ইসিতে
১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১১:৫৪
ঢাকা: ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ভোটে অধিকাংশ কেন্দ্রে ইভিএমে আঙ্গুলের ছাপ না মেলায় ভোট দিতে পারছেন না ভোটাররা। এমন অভিযোগ একের পর এক জমা পড়ছে নির্বাচন কমিশনে। কমিশনের কাছে প্রিজাইডিং অফিসারের সহায়তায় যাতে ভোট দেওয়া যায় সে অনুমতি চাওয়া হয়েছে।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) কমিশনে সারাবাংলার সঙ্গে কথা হয় ঢাকা উত্তরের সহকারী রিটার্নিং অফিসার তারিকুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি জানান, কেন্দ্র গুলোতে ইভিএমে আঙ্গুলে ছাপ না মিললে ১ শতাংশ ভোটারকে প্রিজাইডিং অফিসারের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার সুযোগ রাখা রয়েছে। তবে এরই মধ্যে উত্তরের অধিকাংশ কেন্দ্রেই ১ শতাংশের বেশি ভোট এভাবে দেওয়া হয়ে গেছে। প্রিজাইডিং অফিসারদের পক্ষ থেকে তাদের এই কোটা বাড়ানোর অনুমতি চাওয়া হয়েছে।
বেশ কিছু আবেদন জমা পড়েছে, এবং কমিশন তা বাড়ানোর বিবেচনা করছে, জানান এই রিটার্নিং কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, কেন্দ্রে ভোটারদের চাপ বেড়ে গেলে, আর আঙ্গুলের ছাপ না মেলায় ভোট দিতে না পারলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। আর সে কারণেই তারা ওই কোটা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করছেন।
এ বিষয়ে ইভিএম প্রকল্পের সিস্টেম অ্যানালিসিস্ট আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলার প্রতিবেদকের। তিনি জানান, এরই মধ্যে কোনও কোনও কেন্দ্রে ২ শতাংশ ভোট প্রিজাইডিং অফিসারের মাধ্যমে দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। তবে অভিযোগ করলেই হবে না, বিষয়টি যাচাই করে দেখতে হচ্ছে কমিশনকে, সে অভিযোগ কতটা যথার্থ।
এদিকে, মাঠ পর্যায় থেকেই আসছে ইভিএমে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার খবর।
ধানমন্ডির সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে এসেছেন মো রফিকুল ইসলাম। কয়েকবার ডান ও বাম হাতের ফিঙ্গার দিলেন। কিন্তু মেশিনে বারবার দেখাচ্ছে আবার চেষ্টা করুন। শেষে বিরক্ত হয়ে বলেই ফেললেন ভোট আর দেব না। অথচ তার রয়েছে ডিজিটাল স্মার্ট কাড। এমনকি নিবার্চনী কেন্দ্রে ভোটারের তালিকায় নামের লিস্টও রয়েছে। কিন্তু বারবার ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মেলায় বিরক্ত তিনি। তবে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার নিজ দায়িত্ব নিয়ে তার ফিঙ্গার দিয়ে রফিকুল ইসলাম তার ভোটটি দেন।
এ বিষয়ে কেন্দ্রটির সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার মাহবুব সারাবাংলাকে বলেন, কোন ভোটারের ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মিললে সেটা তিনি তার নিজের ফিঙ্গার দিয়ে ভোটারকে ভোট দেওয়াতে পারেন। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব নিতে হয়। আর অবশ্যই ভোটারের নাম ভোটার তালিকায় থাকতে হয়। কেন ফিঙ্গার মিলছে না জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে চাননি।
ধানমন্ডি কাকলি হাইস্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে এসেছেন মোতাহেরা বেগম। বয়স ৭৬ বছর। বৃদ্ধ হওয়ায় বারবার আঙ্গুলের ফিঙ্গার না মেলায় ভোট দেবেন না বলে জানিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় সেখানকার সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার মাসুদুজ্জামান তাকে বুঝিয়ে নিজের ফিঙ্গার দিয়ে ভোট দেওয়ালেন।
ভোট দিয়ে বেরিয়ে আসার পর কথা হয় সারাবাংলার সঙ্গে। এসময় তিনি জানান, ডিজিটাল স্মার্ট কাড থাকার পরও ফিঙ্গার মিললো না। ৫ বার ২ হাতের ফিঙ্গার দিলাম। বাবা হাতই তো ব্যথা হয়ে গেল। এই কি ডিজিটাল। এমন জানলে আগে ভোটই দিতাম না৷
কথা হয় সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার মাসুদুজ্জামানের সঙ্গে তিনি জানান, এরকম সমস্যা হচ্ছে। তবে কেন হচ্ছে সেটা তিনি জানেন না।
সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে এসেছেন মো আলমগীর হোসেন। ভোটার ক্রমিক নম্বর ৮৫৯। ফিঙ্গার দিলে ৩বার কিন্তু ৩বারই মিললো না। পরে সেখানকার প্রিজাইডিং অফিসার মো আলমগীর কবীর ভোটারের এনআইডি নম্বর দিয়ে নিজের ফিঙ্গার দিয়ে ভোটারকে ভোট দেওয়ান।
কেন এই সমস্যা জানতে চাইলে প্রিজাইডিং অফিসার মো. আলমগীর কবীর সারাবাংলাকে বলেন, যখন এনআইডি করা হয় তখন ভোটারদের ফিঙ্গার যেমন ছিলো এখন হয়তো হাত কেটে যাওয়া বা বিভিন্ন কারণে ফিঙ্গার না মিলতে পারে। তবে ভোট দেওয়ার অপশন রয়েছে। কিছুটা হয়তো ভোটারদের ভোগান্তি হচ্ছে কিন্তু মেশিনে না মিললে কারও কিছু করার নেই।
মো রফিকুল ইসলাম। ঢাকা কলেজে এসেছেন ভোট দিতে। কিন্তু কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলার পুরুষ কক্ষে নিজের বারবার ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিলেও মেশিনে দেখাচ্ছে আবার চেষ্টা করেন। অবশেষে রাগ করেই বললেন, আমার ফিঙ্গার কি আমার না। ভোট দিতে আর ইচ্ছেই করে না। পরে দায়িত্বরত সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার মকবুল হোসেন নিজের ফিঙ্গার দিয়ে ভোটারকে ভোট দেওয়ান। তবে এ বিষয়ে তিনি কোন কথা বলতে রাজি হননি।
দুপুর দেড়টার দিকে শাহজাদপুর নজর মাহমুদ আলিম মাদরাসা ভোটকেন্দ্রের (ওয়ার্ড নম্বর ১৮) একটি ইভিএম মেশিন নষ্ট হয়ে যায়। নির্বাচন কমিশনে বিষয়টি জানানো হলে কর্মকর্তারা মেশিনটি ঠিক করতে আসেন। দুপুর সোয়া ২টা পর্যন্ত সেই মেশিনটি ঠিক হয়নি।