তিস্তা, সীমান্ত হত্যা, এনআরসি— যা বলেছিলেন শ্রিংলা
৫ মার্চ ২০২০ ১৮:০৯
ঢাকা: ঢাকা সফরে এসে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস) আয়োজিত সেমিনারে যোগ দিয়ে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাব দিয়ে গেছেন। প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত তিস্তা চুক্তি, সীমান্ত হত্যা, সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে আলোচিত এনআরসি-সিএএ ইস্যু নিয়ে ভারতের খোলামেলা বক্তব্য যেমন তাতে উঠে এসেছে, তেমনি ভিসা প্রক্রিয়া নিয়েও কথা বলেছেন তিনি।
সীমান্ত হত্যাকে দুঃখজনক মন্তব্য করে সীমান্তে ‘আধুনিক কাট-প্রুফ বেড়া’ দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন সচিব শ্রিংলা। চলতি বছরের মধ্যেই অমীমাংসিত তিস্তা চুক্তির সম্পন্নের আশা জাগিয়েছেন। আবার ভারতের এনআরসি-সিএএ নিয়ে বাংলাদেশে কোনো প্রভাব না পড়বে না— এমন মনোভাবের কথাও জানিয়েছেন বাংলাদেশে দীর্ঘসময় কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শ্রিংলা।
সোমবার (২ মার্চ) ঢাকায় প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ হোটেলে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে নির্ধারিত বক্তব্যের বাইরেও গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব।
সীমান্ত হত্যা নিয়ে যা বললেন
বাংলাদেশের সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র গুলিতে প্রায়ই হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের অভিযোগের কাঠগড়ায় প্রায়ই দাঁড়াতে হয় ভারতকে। পররাষ্ট্র সচিব শ্রিংলা এ বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের মধ্যকার ৪১০০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা একটি জটিল সীমান্ত কারণ এটি জনবহুল এলাকা ছাড়াও বন, নদী এবং মাঠের মধ্য দিয়েও গেছে। দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের কারণে সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ ক্রিয়াকলাপের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে যেমন মাদক ও গবাদি পশু চোরাচালান রয়েছে, তেমনি রয়েছে শুল্ক এবং সাধারণ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের আওতায় থাকা পণ্য চোরাচালানও।’
‘দু’দেশেরই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যকার নীতি হচ্ছে সীমান্তে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রোধ করার পাশাপাশি সীমান্তে শান্তি ও বন্ধুত্বপূর্ণ স্থিতি বজায় রাখার জন্য একটা আন্তরিক ও সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক চর্চা করা। যদিও সীমান্তরক্ষী বাহিনী কখনোই অপরাধ দমনের জন্য সুসম্পর্কের উপর নির্ভর করতে পারে না, কারণ মানুষ সেখানে অপরাধপ্রবণ। গত দুই বছরে সহিংস ঘটনা বেড়েছে কারণ আমাদের সীমান্ত বাহিনীর ক্ষমতা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা চোরাচালানকারী এবং তাদের সহযোগীদের মরিয়া করে তুলেছে,’— বলেন শ্রিংলা।
বিএসএফ উভয় দেশের পাচারকারীদের সহিংস আক্রমণের শিকার হয়ে আসছে, এমন তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারের নির্দেশের প্রেক্ষিতে, বিএসএফ একটি নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করে যেটি হলো শেষ পর্যন্ত প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করা। সতর্ক করা, ফাঁকা গুলি করার মতো অন্যান্য প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপগুলো দ্বারা তাদের উপর আক্রমণকারী চোরাকারবারীদেরকে বিরত করতে ব্যর্থ হলে তখনই শুধু বিএসএফ সদস্যরা তাদের জীবন বাঁচাতে প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য হয়।’
‘যদিও এটি সত্য যে প্রতিটি মৃত্যুই অত্যন্ত দুঃখজনক, কিন্তু আমরা আমাদের নিরাপত্তাকর্মীদের তাদের নিজের জীবন বাঁচাতে না বলতে পারি না। এছাড়া, পরিসংখ্যানে স্পষ্ট যে, সহিংসতার প্রায় সমস্ত ঘটনা সীমান্তের ভারতীয় অংশের মধ্যেই সংঘটিত হচ্ছে এবং আহত বা নিহতদের তালিকায় ভারতীয় এবং বাংলাদেশী নাগরিকের সংখ্যা প্রায় সমান। যেটা প্রমাণ করে যে, দুই দেশের নাগরিকরাই বিএসএফ এর উপর আক্রমণে জড়িত এবং বিএসএফ কেবল চোরাকারবারীদের আক্রমণের জবাব দিচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, গত তিন বছরে, চোরাচালানকারীদের আক্রমণের অনেক বিএসএফ সদস্য মারাত্মক আহতসহ হতাহতের শিকার হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৯ সালে, ১২ জন ভারতীয় নাগরিক মারা গিয়েছিলেন, চারজন আহত হয়েছিল। একই বছর বিএসএফের ৮৩ জন আহত এবং একজন নিহত হয়েছিল।’
সমাধান হিসেবে কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে থাকা অবশিষ্ট ১৬৫ কিলোমিটার সীমান্তে আধুনিক কাট-প্রুফ বেড়া স্থাপনের ওপর জোর দিয়েছেন শ্রিংলা। একইসঙ্গে সীমান্ত হাটগুলোর দ্রুত সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পণ্যের আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য উন্নয়নের প্রচেষ্টা বাড়ানোর ওপর জোর দেন তিনি।
তিস্তা চুক্তি নিয়ে যা বললেন
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তিস্তা নদীতে পানিবণ্টন চুক্তির জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে চুক্তিটি হচ্ছে না। বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে তার ন্যায্য পানির হিস্যা থেকে, এমন আলোচনা বাংলাদেশে জোরালোভাবে আছে।
এর উত্তরে শ্রিংলা বলেন, ‘তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তির একটি দ্রুত ও পারস্পরিক-গ্রহণযোগ্য সমাধানে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা জানি, সীমান্তের উভয় পাশেই এটি একটি আবেগের বিষয়, তবে এই বিষয়ে আমাদের সরকারের প্রতিশ্রুতি কমেনি। আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা অনুযায়ী, চুক্তিটি কেবলমাত্র সকল অংশীদারদের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা যেতে পারে। তবে এরই মধ্যে আমরা আমাদের অন্যান্য অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন এগিয়ে নিতে পারি, যাতে উভয় পক্ষের লোকেরা আমাদের ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্ব থেকে উপকৃত হতে পারে।’
‘আমি জেনে খুশি হয়েছি যে, গত আগস্টে আমাদের পানিসম্পদ সচিবের ঢাকা সফরকালে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল তা বাস্তবায়নে উভয় পক্ষ সাতটি আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি প্রবাহের বিষয়ে গত মাসে (২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি) তথ্য বিনিময় করেছে। আমাদের এই তথ্যগুলোর সমন্বয় ত্বরান্বিত করতে হবে যাতে এ বছরের মধ্যেই পানিবণ্টন চুক্তিগুলো চূড়ান্ত করা যায়।’
এনআরসি এবং সিএএ নিয়ে আশ্বস্ত করলেন বাংলাদেশকে
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের আসামে নাগরিকপঞ্জি হালনাগাদ মারাত্মকভাবে ভাবিয়ে তুলেছে বাংলাদেশকে। এ নিয়ে বাংলাদেশে দৃশ্যত নানামুখী আশঙ্কার পাশাপাশি ক্ষোভ-বিক্ষোভও দেখা যাচ্ছে। তবে শ্রিংলা মনে করছেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের প্রভাব প্রতিবেশি দেশের ওপর পড়বে না।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শুধু আসাম রাজ্যে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি হালনাগাদকরণ প্রক্রিয়া চলছে। প্রকৃতপক্ষে, এই প্রক্রিয়াটি ভারতের সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশনায় এবং তত্ত্বাবধানে হয়েছে। ১৯৮৫ সালে আসামের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে তৎকালীন ভারত সরকারের স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির প্রতিশ্রুতি পালন করতেই এই প্রক্রিয়া। এটি আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ একটি প্রক্রিয়া। নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পরেও যারা অন্যায়ভাবে বঞ্চিত হয়েছেন বলে মনে করেন তাদের জন্য মামলা করার এবং নাগরিকপঞ্জিতে অন্তর্ভুক্তি পেতে অনেকগুলো বিচারিক প্রতিকার রয়েছে। এই প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন হওয়ার পরেও ভারতের উচ্চ আদালত এমনকি সুপ্রীম কোর্ট পর্যায়েও আপিল শুনানির সুযোগ রয়েছে। অতএব, বাংলাদেশের উপর কোনও প্রভাব পড়বে বলে এই মুহূর্তে উদ্বেগের কোনও কারণ নেই।’
ভারতে বসবাসরত অ-ভারতীয়দের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতেই নাগরিকপঞ্জি হালনাগাদ চলছে এমন জানিয়ে শ্রিংলা বলেন, ‘নাগরিকত্ব সংশোধন আইনটি এমন একটি আইন যা ভারতে কয়েক দশক ধরে বসবাসরত অ-ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক অধিকার এবং সরকারী পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে করা হয়েছে। এর দু’টি মাত্র বিধান রয়েছে, যার দু’টিই ভারতের নাগরিক নয় এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য: (ক) তাদের অবৈধ অভিবাসী হিসাবে ঘোষণা করা হয়নি তা নিশ্চিত করা, এবং (খ) তাদেরকে নাগরিকত্বের জন্য একটি ত্বরান্বিত পথ দেওয়া যেখানে ১২ বছরের পরিবর্তে ছয় বছর সময় লাগবে নাগরিকত্ব পেতে। এটি ভারতে বসবাসরত রাষ্ট্রহীন মানুষের সংখ্যা হ্রাস করার একটি প্রচেষ্টা।’
‘ভারতের নাগরিকদের বা কোনও জাতি বা ধর্মীয় পরিচয়ের বিদেশী নাগরিক, যারা প্রাকৃতিকীকরণ বা অন্য কোনও পথে ভারতে নাগরিকত্ব পেতে ইচ্ছুক তাদেরে উপর এই বিলের কোনও প্রভাব নেই। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে বলেছিলেন, “কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া নয় বরং দেওয়াই এই বিলের উদ্দেশ্য। এটি কেবল পূর্বানুক্রমিক প্রভাবসহ একটি পদক্ষেপ, যার লক্ষ্য আমাদের উপমহাদেশের বহুসংখ্যক ব্যক্তিকে নিয়মিত করা, যারা কয়েক দশক ধরে সরকারী কোনও সুবিধা ছাড়াই ভারতে বসবাস করছেন। আমরা তাদের দিকেই মনোযোগ দিচ্ছি যারা আমাদের প্রতিবেশী কিছু দেশ থেকে অতীতে ভারতে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, গুরুত্বপূর্ণ হলো বঙ্গবন্ধু হত্যার সময়কাল, যখন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত বাংলাদেশের চরিত্র পরিবর্তনের চেষ্টা করা হয়েছিল।’
‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আসামের এনআরসি বা অন্য কোনও সাধারণ তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া এবং নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই কারণ ভারতের বিদ্যমান নাগরিকদের উপরে এর পরবর্তী কোনও প্রভাব নেই।’
‘বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা সহজ করা হয়েছে’
বাংলাদেশী ভ্রমণকারীদের ভিসা সহজীকরণকে ভারত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব শ্রিংলা। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় হাই কমিশনার থাকাকালীন আমরা ভিসার জন্য অপেক্ষার সময় শূন্যে নামিয়ে এনেছিলাম এবং আমরা যে সব এলাকায় প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ ছিল তা অপসারণের জন্যও জোর দিয়েছিলাম। যার কারণে আমাদের বাংলাদেশী বন্ধুরা উত্তর-পূর্ব ভারতে নিকটবর্তী পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে যেতে পারত না। ফলস্বরূপ, আজ বাংলাদেশে আমাদের সবচেয়ে বেশি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিসা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। গত বছর, আমরা আমাদের বাংলাদেশী বন্ধুদের ভারত ভ্রমণের জন্য ১৬ লাখের বেশি ভিসা দিয়েছি।’
‘আমরা সমস্ত প্রবীণ নাগরিক, মুক্তিযোদ্ধা এবং ব্যবসায়ীদের জন্য পাঁচ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা দিচ্ছি। বাংলাদেশী রোগীরা নিয়মিত ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে ভারতীয় হাসপাতালগুলোতে যেতে পারেন। হাসপাতালে ভর্তি এবং অপারেশন করার প্রয়োজন না হলে আলাদা মেডিকেল ভিসার প্রয়োজন নেই। আমরা সারা বাংলাদেশ জুড়ে ১৫টি ভিসা আবেদন কেন্দ্র (আইভিএসি) চালু করেছি। একজন বাংলাদেশী নাগরিক এই ১৫টি আইভিএসির যে কোনটিতে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।’
তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময়, ভারত সরকার আখাউড়া এবং ঘোজাডাঙ্গা চেকপয়েন্ট থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিদ্যমান স্থলবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশী ভ্রমণকারীদের জন্য সমস্ত বিধিনিষেধ অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা ভ্রমণকে আরও সরল ও সহজ করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, যাতে মানুষে-মানুষে সম্পর্কই হয়ে উঠে আমাদের অংশীদারিত্বের মূল উপাদান।’
বক্তব্যে যা বলেছিলেন শ্রিংলা
প্রশ্নোত্তরের বাইরে নির্ধারিত বক্তব্যেও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অবতারণা করেন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, অভিন্ন স্বার্থে দু’দেশের অংশীদারিত্ব।
শ্রিংলা বলেন, ‘আমাদের অংশীদারিত্ব এর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে যখন আমরা উভয়েই সমানভাবে অনুধাবন করতে পারব যে, আমাদের স্বার্থ অভিন্ন এবং এতে দু’পক্ষেরই লাভ। এ কারণে আমরা বিশ্বাস করি যে, আমাদের দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যকার অংশীদারিত্ব জোরদার করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা উভয় দেশের সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের পারস্পরিক বিশ্বাসকে তুলে ধরে। বিশেষ করে যখন আমরা ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য ভারতে তৈরি সকল সেনা সরঞ্জাম বাংলাদেশের সাথে ভাগ করে নিতে চাই। এছাড়াও বাংলাদেশের প্রথম সারির সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমাদের সেনা কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই এবং আমরাও একইভাবে আমাদের সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্যাডেট থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে প্রস্তুত।’
রোহিঙ্গা সংকটে ভারত সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে এবং রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির ব্যাপারে ভারত সোচ্চার ভূমিকা পালন করবে আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মানবিক সংকট এবং বাংলাদেশের উপর এর প্রভাব বিষয়ে আমাদের অবস্থান সম্পর্কে অনেকের আগ্রহ এবং ভিত্তিহীন ধারণাও আছে। আমি স্পষ্টভাবেই বলতে চাই, ভারত বাংলাদেশের মানবিক বোধের গভীর প্রশংসা করে, যার কারণে তারা প্রায় ১০ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে। আপনারা যে বোঝা বহন করছেন আমরা তা স্বীকার করি ও সমবেদনা জানাই। আমরা পারস্পরিক গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে একটা সমাধান চাই এবং এই বাস্তুচ্যুত মানুষগুলোর রাখাইনে দ্রুততম প্রত্যাবাসন ও সম্মানজনক জীবন ফিরে পেতে সহায়তা করতে আমরা অঙ্গিকারবদ্ধ। এই প্রত্যাবাসন হতে হবে নিরাপদ ও টেকসই।’
রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সরবরাহ অব্যাহত রাখার কথা উল্লেখ করে শ্রিংলা বলেন, ‘আমরা মিয়ানমার সরকারের সাথে সব পর্যায়ে ধারাবাহিক আলোচনা চালাচ্ছি যেখানে আইডিপি ক্যাম্প বন্ধ করা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পে সহায়তা করা এবং বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ফিরে যাবার জন্য একটা উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করায় গুরুত্ব দিয়েছি। অন্যকথায়, এই বিশাল মানবিক সংকট মোকাবেলায় ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এই বিষয়ে আমাদের পরামর্শ হলো, আমরা সবাইকে উদ্বুদ্ধ করব বাগাড়ম্বর না করে যেন এই সমস্যার একটি মানবিক ও বাস্তবসম্মত সমাধানের প্রতি গুরুত্ব দেয়।’
সেমিনারে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার রীভা দাশ গাঙ্গুলি উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বাংলাদেশ সফর ভারত ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব শ্রিংলা