শিশু রাবেয়া-রোকেয়া বাড়ি ফিরল, উচ্ছ্বসিত প্রধানমন্ত্রী
১৪ মার্চ ২০২১ ১৯:৫০
ঢাকা: জোড়া মাথা নিয়ে জন্মগ্রহণ করা রাবেয়া-রোকেয়ার সফল অস্ত্রপচার শেষে নিজ গৃহে ফিরে যাওয়ার ঘটনায় উচ্ছ্বসিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য রাবেয়া-রোকেয়ার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘আপনি একজন সফল ও সার্থক রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে বিশ্বের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’
রোববার (১৪ মার্চ) দুপুরে জোড়া মাথাবিশিষ্ট যমজ শিশু রাবেয়া ও রোকাইয়ার সফল চিকিৎসা শেষে মুজিব শতবর্ষে গৃহ প্রত্যাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল(সিএমএইচ) প্রান্তে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন।
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল প্রান্তে এই সময় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্ল্যাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন, রাবেয়া-রোকেয়ার মা-বাসহ সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি চিকিৎসক ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
২০১৬ সালের ১৬ জুলাই পাবনার চাটমোহরের আটলংকা গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা খাতুন দম্পতির ঘরে জোড়া মাথা নিয়ে জন্ম নেয় রাবেয়া-রোকেয়া। দীর্ঘ চিকিৎসায় জোড়া মাথা আলাদা হওয়ার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি গেলেন পাবনার এই দুই বোন রাবেয়া-রোকেয়া। এতে খুশি ও আনন্দ প্রকাশ করেছেন উপস্থিত সকলে। প্রধানমন্ত্রীকেও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে অনুষ্ঠানে। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সিংর মাধ্যমে শেষে রাবেয়া-রোকেয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাবেয়া-রোকেয়া কেমন আছো? কত বড় হয়ে গেছে? অবাক লাগে না?
এরপর রাবেয়া-রোকেয়ার মধ্যে একজন বলে ওঠেন, ‘‘আসলামালাইকুম?
কেমন আছো তুমি প্রধানমন্ত্রী জানতে চাইলে দুই বোনের একজনও বলে, ‘ভালো, তুমি কেমন আছো?’
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভালো। তুমি ভাল আছো?’
‘হ্যাঁ।’
‘আচ্ছা খুশি, ঠিক আছে ভাল থাকো। দোয়া করি।’
এই সময় মাথা নেড়ে খুশির কথা সায় জানাতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীকে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীসহ চিকিৎসার সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুভ’তি ব্যক্ত করেন।
দীর্ঘ অপারেশন শেষে আলাদা আলাদাভাবে নিজের সন্তানকে পেয়ে রাবেয়া-রোকেয়ার মা অনুভূতি ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমি একজন মা, আমি দুটো সন্তানকে জন্ম দিয়েছি, লালন-পালন করেছি। কিন্তু পারিনি ওদের আলাদা জীবন দিতে। ওদের উন্নত চিকিৎসা দিয়ে আপনি সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিয়ে আমার সন্তান দুইটিকে আলাদা করার ব্যবস্থা করেছেন।
‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমি জানি না, একজন মা তার সন্তানকে কতবার ওটিতে রেখে আসতে পারে। আমি বুকে পাথর বেঁধে আমার সন্তানদের সুস্থতার জন্য বারবার ওদের ওটিতে রেখে এসেছি। আমি সহ্য করেছি, ওদের চিৎকার হাহাকার কান্না সমস্ত দুঃখ-যন্ত্রণা, কষ্ট। শুধু চেয়েছি বাচ্চাদের জন্য আলাদা জীবন এবং সুস্থ স্বাভাবিক জীবন। আজ সবকিছুর অবসান হয়েছে, আজ বাচ্চা দুটো আলাদা আছে।’
রাবেয়ার কিছু ইউরোজিক্যাল সমস্যা থাকলেও আমি আশা করি, হয়ত ধীরে ধীরে আমার বাচ্চা দুটো সুস্থ হয়ে উঠবে। আজ সমস্ত কষ্টের অবসান হয়েছে। আজ আমরা স্বপ্ন দেখছি চিন্তা করছি, শুভ হোক তাদের আলাদা নতুন জীবন। ভুলে যাক শিশুগুলো সমস্ত দুঃখ-কষ্ট বেদনা, পুরনো সেই দিনের কথা ভুলে যাক। শুরু হোক আলাদা নতুন জীবন মুক্ত স্বাধীন জীবন।
তিনি আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার সঙ্গে আমাদের শিশুদের দেখা হবে। আপনার সঙ্গে দেখা হয়ে তাদের অপারেশনের যাত্রা শুরু হয়েছিল। কিন্তু কোভিড মহামারির জন্য সেটা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, একদিন এই পৃথিবী থেকে করোনা অবশ্যই বিদায় নেবে এবং সেদিন আরও একবার আপনি আমার বাচ্চাদের মাথায় হাত রেখে দোয়া করবেন। আমরাও আপনার জন্য দোয়া করি। আপনি সুস্থ থাকুন। আল্লাহ আপনাকে সুস্থ রাখুক।’
‘আমি একজন সফল ও সার্থক রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে বিশ্বের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।”
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৮ আগস্ট ৩৩ ঘণ্টা অস্ত্রোপচারে মাথা জোড়া লাগানো যমজ শিশু রাবেয়া-রোকাইয়াকে সফলভাবে পৃথক করা হয়। রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) এ অস্ত্রোপচার হয়। এতো দিন সেখানেই চিকিৎসাধিন ছিল শিশু দুটি।
পাবনার চাটমোহর উপজেলার এই কন্যাশিশুদের ২০১৭ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। এখানে দুই স্তরে মস্তিষ্কের রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত জানুয়ারিতে শিশু দুটিকে হাঙ্গেরি পাঠানো হয়। সেখানে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৮টি অস্ত্রোপচার করা হয়।
২০১৭ সাল থেকে এ শিশু দুটির চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাঙ্গেরি সরকারের মাধ্যমে হাঙ্গেরিয়ান দাতব্য সংস্থা অ্যাকশন ফর ডিফেন্সলেন্স পিপল ফাউন্ডেশন (এডিপিএফ) চিকিৎসায় সক্রিয় সহায়তা করেছে।
সারাবাংলা/এনআর/একে