Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিনম্র শ্রদ্ধায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ


১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৮:২৮

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বিনম্র শ্রদ্ধায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করেছে গোটা জাতি। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে বৃহস্পতিবার রাজধানীর রায়ের বাজার বধ্যভূমি ও মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে জনতার ঢল নামে। সব বয়সের ও শ্রেণি-পেশার মানুষ বধ্যভূমি ও স্মৃতিসৌধের বেদীতে ফুল দিয়ে জঙ্গিবাদমুক্ত ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার শপথ নেন।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের কর্মসূচি শুরু হয় সকাল ৭ টায়। মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে সকাল ৭ টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. আদুল হামিদ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এর পর সেখানে একে একে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া  মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিন, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের পক্ষে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এর পর সর্বসাধারণের জন্য শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সকাল পৌনে ১০টায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান সরকার ও সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা। জাতীয় পার্টির পক্ষে ফুল দেন দলটির মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার।

আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত ও জঙ্গিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি আমরা। এ দেশে জঙ্গিবাদের স্থান নেই; তারা সফল হবে না। একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত পেলে দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত আসবে।’

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘জামায়াতের পরিকল্পনায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করা হয়েছিল। জামায়াত নিষিদ্ধের আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমরা জামায়াত নিষিদ্ধে সব ধরনের প্রচেষ্টা নিচ্ছি।’ নতুন প্রজন্মকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চোখ কান খোলা রাখতে হবে। জামায়াতে ইসলামী বিএনপির কাঁধে ভর করে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে। কেউ যেন নির্বাচন বানচাল করতে না পারে। দেশ গড়তে নতুন প্রজন্মকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘৪৬ বছরে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। অর্থনৈতিকভাবে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মুক্তিযুদ্ধের মূলচেতনা ‘গণতন্ত্র’ আমরা হারিয়ে ফেলেছি। গণতন্ত্রের জন্য বাংলাদেশের মানুষ অতীতে রক্ত দিয়েছে। এখনো দিচ্ছে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা লড়াই করছি।’

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, ‘১৯৭১ সালে যে চেতনা ধারণ করে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। জনগণের আত্মমুক্তির আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।’

একত্তরে চূড়ান্ত বিজয়ের এক দিন আগে ১৪ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির ইতিহাসে রচিত হয় এক বেদনাঘন দিন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল পরাক্রমের সামনে পরাজয় নিশ্চিত জেনে এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করতে বেছে বেছে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, দার্শনিক ও সংস্কৃতিক্ষেত্রের অগ্রগণ্য ব্যক্তিদের ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। পাকিস্তানি ঘাতকদের এ বর্বর হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে রাজাকার-আলবদর বাহিনী।

তাদের সহযোগিতায় রায়েরবাজার পরিত্যাক্ত ইটখোলা ও মিরপুরসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়  নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। বিজয় অর্জনের পর এসব বধ্যভূমিতে একে একে পাওয়া যায় হাত-পা-চোখ বাঁধা দেশের খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবীদের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ। হত্যার আগে তাঁদের ওপর যে পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয়, তা অনুধাবন করে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে বিশ্ববিবেক।

 

পৃথিবীর ইতিহাসে নারকীয় এই হত্যাযজ্ঞের নেপথ্য কারণ সবার কাছেই এখন পরিষ্কার। হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা মনে করেছিল, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করলেই এ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব দুর্বল হয়ে পড়বে এবং উন্নয়ন অগ্রগতি রুদ্ধ করে দেওয়া যাবে। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার পথে মুখ থুবড়ে পড়বে। কিন্তু তাদের সে লক্ষ্য ব্যর্থ হয়েছে।

৪৬ বছর পর এসে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন—বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের তরুণরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদার মুক্ত গণতান্ত্রিক দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে শরিক হন বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে।

বড় দুই দল ছাড়াও জাসদ, কমিউনিস্ট পার্টি, গণফোরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, সন্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ‘৭১, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, উদীচী, খেলাঘরসহ বিভিন্ন সংগঠন বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

সারাবাংলা/এজেড


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

৯০০তম গোলে ইতিহাস গড়লেন রোনালদো
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:০৪

সম্পর্কিত খবর